দুই নেতার বৈঠকের পর পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বাংলাদেশের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “যৌথ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার
ওপর বাংলাদেশের অলংঘনীয় অধিকারের বিষয়টি বরাবরের মতোই জোরালোভাবে উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। তিনি তিস্তার পানি বণ্টনের ‘অন্তর্বর্তী চুক্তি’ দ্রুত সম্পাদনের জোর দাবি
পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
“প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, চুক্তিটি দ্রুত স্বাক্ষরে ভারত
আন্তরিকভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং এ বিষয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।”
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, “তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা ইস্যু তুলেছেন।
“সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তিটি চূড়ান্ত
করতে ভারত সরকারের আন্তরিক ও অব্যাহত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন
প্রধানমন্ত্রী মোদী।”
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন
সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন
চুক্তির বিষয়ে দুপক্ষ একমত হয়েছিল।
মনমোহন সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি
হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে
যায়।
নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা
চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও মমতার মত বদলায়নি।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশ্বাসের পাশাপাশি ফেনী নদীর পানি বণ্টন
নিয়ে অন্তর্বতী চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশকে ভারত অনুরোধ করেছে বলেও উল্লেখ
করেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
“পাশাপাশি ভারত সরকার ফেনী নদীর পানি বণ্টনের অন্তর্বর্তী
চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করার অনুরোধ করেছে, যা বাংলাদেশের দিক থেকে ঝুলে আছে। এ বিষয়ে
২০১১ সালে দুপক্ষ একমত হয়েছিল।”
তিস্তা প্রসঙ্গে মোদীর সফর নিয়ে দুদেশের যৌথ বিবৃতিতেও তিস্তার
চুক্তির এসব প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, “পূর্বের আলোচনার সূত্র ধরে তিস্তা নদীর পানি
বণ্টনের অন্তর্বর্তী চুক্তি সমাপ্ত করতে বাংলাদেশের দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত
করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“তিনি উল্লেখ করেন, তিস্তা নদীর পানির উপর নির্ভরশীল লাখ লাখ
মানুষের কষ্ট লাঘবে এবং তাদের জীবিকা রক্ষা এই পানির ন্যায্য অংশ পাওয়ার দাবিদার বাংলাদেশ।
এটা নিয়ে খসড়া চুক্তিতে ২০১১ সালেই দুদেশের সরকার একমত হয়েছিল।”
এই প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সবার সঙ্গে
আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করার এবং ফেনী নদীর পানি বণ্টনে অন্তর্বর্তী চুক্তির খসড়া চূড়ান্তের
অনুরোধ আসে।
তিস্তার পাশাপাশি অন্য কয়েকটি নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়েও
শীর্ষ বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
তিনি বলেন, “মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার- এই ছয়টি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টনের
অন্তর্বর্তী চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্তকরণের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে দুই দেশের পানিসম্পদ
মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
“‘আপার সুরমা-কুশিয়ারা সেচ প্রকল্পে’ কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যবহারের
উদ্দেশ্যে রহিমপুর খালের অবশিষ্টাংশ খননের আবশ্যকতার ওপর গুরুত্বারোপ করে ‘কুশিয়ারা
নদীর পানি প্রত্যাহারের জন্য প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারক’ স্বাক্ষরে ভারতের দ্রুত সম্মতি
কামনা করেছে বাংলাদেশ।”
ভারত-বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অন্য সব ক্ষেত্রের মতো যৌথ নদী নিয়েও
আলাপ-আলোচনা আর বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ভারতের পররাষ্ট্র
সচিব শ্রিংলা।
তিনি বলেন, “দুদেশের মধ্যে বহমান ৫৬টি নদীর নিয়ে বর্তমানে
বিস্তৃত পরিসরে সহযোগিতা করে যাচ্ছে কাজ উভয় দেশ। সহযোগিতার ক্ষেত্রও বেশ বহুমুখী।”
খাবার ও সেচের জন্য পানির ব্যবহারের পাশাপাশি দূষণ নিয়ন্ত্রণ
ও বন্যা নিয়ন্ত্রণও এই সহযোগিতার অংশ বলে মন্তব্য করেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।