শনিবার ঢাকায় নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এসব সমঝোতা স্মারক বিনিময় হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই নেতা পাঁচটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনও করেন।
যে ৫ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক-
১. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অভিযোজন ও প্রশমনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা
২. বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এবং ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর অব ইন্ডিয়ার (আইএনসিসি) মধ্যে সহযোগিতা
৩. বাণিজ্য বিকাশে অশুল্ক বাধা দূর করতে একটি সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা
৪. বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিজিএসটি) সেন্টারের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জাম, কোর্সওয়্যার ও রেফারেন্স বই সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ সহযোগিতা
৫. রাজশাহী কলেজ মাঠের উন্নয়নে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন
ছবি: পিআইডি
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশে আসা নরেন্দ্র মোদী তার সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার বিকাল ৫টার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
দুই সরকার প্রধান প্রথমে কিছু সময় একান্তে বৈঠক করেন। পরে তাদের নেতৃত্বে শুরু হয় দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক,যা চলে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর চলে সমঝোতা
স্মারক স্বাক্ষর এবং বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধনের পর্ব।
এ সময় শিলাইদহের কুঠিবাড়ির বর্ধিত সংস্কার কাজ, ঢাকা
এবং নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা এবং তিনটি সীমান্ত হাটের উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
সুনামগঞ্জের সায়দাবাদ ও মেঘালয়ের নালিকাটা
সীমান্তে, সুনামগঞ্জের বাগানবাড়ি ও মেঘালয়ের রিংকু
সীমান্তে এবং সিলেট ও মেঘালয়ের ভোলাগঞ্জ
সীমান্তে এই সীমান্ত হাট
তিনটি হবে।
মুক্তিযুদ্ধে
মিত্র বাহিনীর ভারতীয় শহীদ সদস্যদের স্মরণে আশুগঞ্জে একটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ‘পাওয়ার ইভাকুয়েশন ফ্যাসিলিটিজ’ নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের উপহারের ১২ লাখ ডোজ
করোনাভাইরাসের টিকা এবং ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্সের চাবি এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে
একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয় এ অনুষ্ঠানে।
স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, যোগাযোগ, জ্বালানি ও উন্নয়ন সহযোগিতার যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে রয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ও স্থান পায়।
বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবসে শুক্রবার সকালে এয়ার ইনডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে নরেন্দ্র মোদীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
২০২০ সালের মার্চে মুজিববর্ষের আয়োজনে মোদীর উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তা পিছিয়ে গিয়েছিল। মহামারী শুরুর পর গত এক বছরের মধ্যে সেই বাংলাদেশেই তিনি প্রথম সফরে এলেন।
শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন নরেন্দ্র মোদী।
সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর’ উদ্বোধন করেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজেও যোগ দেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে যান নরেন্দ্র মোদী। সেখান থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ওড়াকান্দি মন্দির পরিদর্শন করে ঢাকায় ফেরেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। পরে সন্ধ্যায় তিনি নয়া দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন।