ক্যাটাগরি

কারানের বীরত্বেও পারল না ইংল্যান্ড

পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বিরাট কোহলির দল জিতেছে ৭ রানে। ভারতের ৩২৯ রান তাড়ায় ইংল্যান্ড করে ৩২২ রান।

তিন ম্যাচের সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল ভারত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে ওয়ানডেতে তারা জিতল টানা ষষ্ঠ সিরিজ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডেতেও সিরিজ হেরে খালি হাতেই দেশে ফিরতে হচ্ছে ইংলিশদের।

৮৩ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৯৫ রানে অপরাজিত থাকেন কারান। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ২২ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

এই ইনিংসের পথে রেকর্ডের পাতায় নাম লেখা হয়ে গেছে তার। ওয়ানডেতে ৮ নম্বর পজিশনে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ইনিংস এটি। ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টাই হওয়া ম্যাচে তারই স্বদেশি ক্রিস ওকস করেছিলেন অপরাজিত ৯৫ রান।

রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচটিতে রোববার শেষ ওভারে ১৪ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। কিন্তু এই সমীকরণ মেলাতে পারেনি সফরকারীরা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে কেবল ৬ রান দেন থাঙ্গারাসু নাটরাজন।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতকে দারুণ শুরু এনে দেন রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। বল অনুযায়ী খেলেন তারা। বাজে বলে হাঁকান বাউন্ডারি। চতুর্দশ ওভারে তিন অঙ্ক স্পর্শ করে উদ্বোধনী জুটির রান।

এরপরই ইংল্যান্ডকে প্রথম সাফল্য এনে দেন আদিল রশিদ। তার গুগলিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন ৬ চারে ৩৭ রান করা রোহিত। ভাঙে ১০৩ রানের শুরুর জুটি।

এই জুটির পথে একটি কীর্তি গড়েছেন তারা। ওয়ানডেতে ৫ হাজার রান করা দ্বিতীয় ভারতীয় জুটি রোহিত-ধাওয়ানের। শচিন টেন্ডুলকার ও সৌরভ গাঙ্গুলি এই মাইলফলকে আগে পা রেখেছিলেন।

ভারতের ছন্দপতন ঘটে এরপর। পরের ওভারে ফিরে ১০ চারে ৬৭ রান করা ধাওয়ানকেও বিদায় করেন রশিদ। অধিনায়ক হিসেবে দুইশতম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৭ রান করে মইন আলির বলে বোল্ড হয়ে যান কোহলি।

বেশিক্ষণ টিকেননি লোকেশ রাহুল। আগের ম্যাচের এই সেঞ্চুরিয়ান ওয়ানডেতে লিয়াম লিভিংস্টোনের প্রথম শিকার। ৫৪ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত।

রিশাভ পান্ত খেলে যান নিজের মতো করেই। শুরু থেকে শট খেলতে শুরু করেন হার্দিক পান্ডিয়া। তাদের জুটিতে রান আসতে থাকে দ্রুত। ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা।

মইনকে ওভারে তিন ছক্কা মারেন হার্দিক। রশিদকে ছক্কায় উড়িয়ে ৪৪ বলে ফিফটি করেন পান্ত। তাকে বিদায় করে ৯৯ রানের জুটি ভাঙেন কারান। পান্ত ৬২ বলে করেন ৭৮ রান।

৩৬ বলে ফিফটি করা হার্দিকও এরপর বেশিক্ষণ টিকেননি। বেন স্টোকসের বলে বোল্ড হয়ে থামেন ৪৪ বলে ৬৪ রান করে। দুই জনের ইনিংসেই ৫ চারের পাশে ৪টি করে ছক্কা।

ভারতের রান তিনশ পার হয় ক্রুনাল পান্ডিয়া ও শার্দুল ঠাকুরের ব্যাটে। ২১ বলে ৩ ছক্কা ও এক চারে ৩০ রান করা শার্দুলকে ফেরান মার্ক উড। ইংলিশ এই পেসার পরের ওভারে এসে ধরেন জোড়া শিকার। টপলি ভুবনেশ্বরকে ফিরিয়ে ভারতের ইনিংসের ইতি টেনে দেন ১০ বল আগেই।

রান তাড়ায় ঝড়ের আভাস দিয়েই থেমে যান জেসন রয়। তাকে বোল্ড করার পর আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জনি বেয়ারস্টোকে এলবিডব্লিউ করে থামান ভুবনেশ্বর কুমার।

দাভিদ মালান ও স্টোকস দলকে টানেন কিছুক্ষণ। কিন্তু এবার আর বড় ইনিংস খেলা হয়নি ইংলিশ অলরাউন্ডারের। থিতু হয়ে নাটরাজনকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় থামেন স্টোকস। জস বাটলারকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন শার্দুল।

থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি লিভিংস্টোন। তার সঙ্গে ৬০ রানের জুটি ভাঙার পর বেশিক্ষণ টিকেননি মালান। ৬ চারে ৫০ বলে ৫০ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

আশা জাগিয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি মইন। রশিদকে নিয়ে দলকে কক্ষপথে ফেরানোর লড়াইয়ে নামেন কারান। অষ্টম উইকেটে তার সঙ্গে ৫৭ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন রশিদ।

কারান পান নতুন সঙ্গী- উড। তাদের জুটিতে ১৫ বছরের মধ্যে ভারতে প্রথম সিরিজ জয়ের আশা জাগায় ইংল্যান্ড। নবম উইকেটে তাদের ৬০ রানের জুটি ভাঙে উড রান আউটে কাটা পড়লে।  

এরপরও চেষ্টা করেছিলেন কারান। কিন্তু হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৪৮.২ ওভারে ৩২৯ (রোহিত ৩৭, ধাওয়ান ৬৭, কোহলি ৭, পান্ত ৭৮, রাহুল ৭, হার্দিক ৬৪, ক্রুনাল ২৫, শার্দুল ৩০, ভুবনেশ্বর ৩, প্রসিধ ০, নাটরাজন ০*; কারান ৫-০-৪৩-১, টপলি ৯.২-০-৬৬-১, উড ৭-১-৩৪-৩, স্টোকস ৭-০-৪৫-১, রশিদ ১০-০-৮১-২, মইন ৭-০-৩৯-১, লিভিংস্টোন ৩-০-২০-১)।

ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩২২/৯ (রয় ১৪, বেয়ারস্টো ১, স্টোকস ৩৫, মালান ৫০, বাটলার ১৫, লিভিংস্টোন ৩৬, মইন ২৯, কারান ৯৫*, রশিদ ১৯, উড ১৪, টপলি ১*; ভুবনেশ্বর ১০-০-৪২-৩, নাটরাজন ১০-০-৭৩-১, প্রসিধ ৭-০-৬২-০, শার্দুল ১০-০-৬৭-৪, হার্দিক ৯-০-৪৮-০, ক্রুনাল ৪-০-২৯-০)।

ফল: ভারত ৭ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী ভারত।

ম্যান অব দা ম্যাচ: স্যাম কারান।

ম্যান অব দা সিরিজ: জনি বেয়ারস্টো।