ক্যাটাগরি

বাংলাদেশের বড় হারে শুরু টি-টোয়েন্টি সিরিজ

একপেশে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৬৬ রানের জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল নিউ জিল্যান্ড।

নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ছাড়াও ৬-৭ জন প্রথম সারির ক্রিকেটারকে ছাড়া খেললেও
জিততে কোনো বেগ পেতে হয়নি নিউ জিল্যান্ডকে।

হ্যামিল্টনে রোববার কিউইদের ২১০ রান তাড়ায় বাংলাদেশ কোনোরকমে করতে পারে ১৪৪
রান।

নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এর চেয়ে বড় হার আছে বাংলাদেশের আর একটি, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি
বিশ্বকাপে কলকাতায় ৭৫ রানে।

চোটের কারণে বাংলাদেশ পায়নি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে। তবে ব্যাটসম্যানদের
আগে বোলারদের বাজে পারফরম্যান্সই পিছিয়ে দেয় দলকে।

দুই অভিষিক্ত নাসুম আহমেদ ও শরিফুলকে ইসলামকে নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজায় বাংলাদেশ।
টস হেরে বোলিংয়ে নামা দলকে দারুণ শুরু এনে দেন নাসুম। ম্যাচের প্রথম ওভারেই বাঁহাতি
স্পিনার ফিরিয়ে দেন ফিন অ্যালেনকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক আলোচনার জন্ম দেওয়া এই ব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করলেন ‘গোল্ডেন ডাক’ দিয়ে।

মার্টিন গাপটিল ও কনওয়ের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে এগিয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড।
পাওয়ার প্লেতে স্বাগতিকরা ওই একটি উইকেটই হারিয়ে তোলে ৪৮ রান।

ওয়ানডে সিরিজের মতো এবারও ভালো শুরুটা বড় করতে পারেননি গাপটিল। তাকে ক্রিজ
ছেড়ে বেরোতে দেখেই তার নাগালের একটু বাইরে বল করেন বাঁহাতি এই স্পিনার। অনেকটা ঝুলিয়ে
দেওয়া মন্থর গতির বলে টাইমিং করতে পারেননি স্বাগতিক ওপেনার। লং অফ সীমানায় ধরা পড়েন
তিনি সৌম্য সরকারের হাতে।

নিজের শততম টি-টোয়েন্টিতে গাপটিল ২ ছক্কা ও ৩ চারে ২৭ বলে করেন ৩৫। ভাঙে ৫২
রানের জুটি।

ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশকে ভোগানো কনওয়ে দাঁড়িয়ে যান এবারও। ক্রিজে গিয়েই শট
খেলতে শুরু করেন অভিষিক্ত ইয়াং। দ্রুত জমে যায় তাদের জুটি।

৩২ বলে আসে জুটির পঞ্চাশ, ৫৮ বলে একশ। প্রতি ওভারেই আসছিল বাউন্ডারি। যেন বল
ফেলার জায়গা পাচ্ছিলেন না মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, শরিফুল ইসলামরা।

৩৭ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন কনওয়ে। ইয়াং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ফিফটি পান
২৮ বলেই।

পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বেশি দূর যেতে পারেননি ইয়াং। মেহেদি হাসানের বলে স্লগ করে
ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েন মিড উইকেট সীমানায়। ভাঙে ৬০ বল স্থায়ী ১০৫ রানের জুটি।

৩০ বলে চার ছক্কা ও দুই চারে ইয়াং করেন ৫৩।

গ্লেন ফিলিপস ও কনওয়ের শেষের ঝড়ে দুইশ ছাড়ায় নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ। সময় যত
গড়িয়েছে তত চড়াও হয়েছেন কনওয়ে। শেষ দিকে আরেকটু বেশি স্ট্রাইক পেলে হয়তো তিন অঙ্কের
দেখা পেয়ে যেতেন। শেষ পর্যন্ত ৫২ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৯২ রানে।

তার সঙ্গে ২০ বলে গড়া ৫২ রানের জুটিতে ফিলিপসের অবদান ১০ বলে ২৪।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ওভার প্রতি আটের কম রান দেন কেবল নাসুম। ৩০ রান
দিয়ে নেন দুটি উইকেট।

অভিষেকটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে তরুণ পেসার শরিফুলের। প্রথম বলেই গাপটিলের
হাতে বাউন্ডারি হজম করা বাঁহাতি এই পেসার ৫০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। মুস্তাফিজ দিয়েছেন
৪৮ রান।

বড় রান তাড়ায় পাওয়ার প্লেতেই দিক হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। একটি বাউন্ডারি মেরেই
ফিরে যান লিটন দাস। চোট কাটিয়ে ফেরা লকি ফার্গুসন থামান মোহাম্মদ নাঈম শেখকে। শুরু
থেকে দারুণ ব্যাটিং করা তরুণ ওপেনার ৫ চারে ১৮ বলে করেন ২৭।

এরপর সোধির লেগ স্পিনে আঁধার ঘনায় বাংলাদেশের ইনিংসে। জোড়ায় জোড়ায় উইকেট হারায়
সফরকারীরা। সৌম্যর ফিরতি ক্যাচ নিয়ে শিকার শুরু করেন সোধি। এক বল পর বাজে শটে বোল্ড
মোহাম্মদ মিঠুন।

পাওয়ার প্লেতে ৪৪ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি।

সোধিকে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। পরের বলেই আলতো ডিফেন্স
করেও বলে থামাতে পারেননি মেহেদি, উইকেটে পড়ে বল গিয়ে লাগে স্টাম্পে।

অষ্টম ওভারে ৫৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস তখন ধ্বংস্তুপ।

বিপদ আরও বাড়তে পারত, যদি ৫ রানে গাপটিলের হাতে জীবন না পেতেন আফিফ। বেঁচে
গিয়ে দারুণ খেলে দলকে কিছুটা উদ্ধার করেন এই অলরাউন্ডার। আরেকপ্রান্তে সাইফ উদ্দিন
টি-টোয়েন্টির দাবি ভুলে মনোযোগ দেন উইকেট ধরে রাখায়।

৩৭ বলে আসে জুটির ফিফটি। এতে অগ্রণী আফিফ, ২১ বলে ৩৩ রানই আসে তার ব্যাট থেকে।

নিজের ফিফটি অবশ্য করতে পারেননি আফিফ। ফার্গুসনের নিচু ফুলটসে বোল্ড হয়ে থামেন
বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৩৩ বলে এক ছক্কা ও পাঁচ চারে ৪৫ রান করেন তিনি। ভাঙে ৬৩ রানের
জুটি।

শেষ ওভারে ছক্কা ও চারে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দলের সবচেয়ে বড় হার এড়ান সাইফ।
৩৪ বলে এই অলরাউন্ডার অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে।

শেষ দুই ওভারে আর উইকেট পাননি সোধি। তবে নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং স্পর্শ
করেন এই লেগ স্পিনার। ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে তার শিকার ৪ উইকেট। গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার
বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চেও নিয়েছিলেন তিনি ২৮ রানে ৪ উইকেট। দারুণ ইনিংস খেলে ম্যাচের
সেরা যদিও কনওয়ে।

সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল নেই স্কোয়াডেই। এই ম্যাচে খেলতে পারলেন না মুশফিকুর
রহিমও। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো টি-টোয়েন্টিতে নেই এই ত্রয়ীর একজনও। তাদের ছাড়া খেলতে
নেমে বড় হারই হলো সঙ্গী।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি আগামী মঙ্গলবার, নেপিয়ারে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ২১০/৩ (গাপটিল ৩৫, অ্যালেন ০, কনওয়ে
৯২*, ইয়াং ৫৩, ফিলিপস ২৪*; নাসুম ৪-০-৩০-২, সাইফ ৪-০-৪৩-০, শরিফুল ৪-০-৫০-০, মুস্তাফিজ
৪-০-৪৮-০, মেহেদি ৪-০-৩৭-১)।

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৪/৮ (নাঈম ২৭, লিটন ৪, সৌম্য ৫,
মিঠুন ৪, মাহমুদউল্লাহ ১১, আফিফ ৪৫, মেহেদি ০, সাইফ ৩৪*, শরিফুল ৫, নাসুম ০*; সাউদি
৪-০-৩৪-১, বেনেট ৪-০-২০-১, ফার্গুসন ৪-০-২৫-২, সোধি ৪-০-২৮-৪, চাপম্যান ১-০-৯-০, ফিলিপস
১-০-৫-০, মিচেল ২-০-২১-০)।

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৬৬ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভন কনওয়ে।