ক্যাটাগরি

মিয়ানমারের বাহিনীকে নিন্দার প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর সামরিক কর্তাদের

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নিন্দা জানানোর প্রস্তুতি নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের প্রায় ডজনখানেক মিত্র দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা।

এশিয়া ও ইউরোপসহ বিশ্বের অনেকগুলো দেশের শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের এই যৌথ বিবৃতি শনিবার প্রকাশ হওয়ার আগেই বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে এসেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাদের জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বলে এতে মন্তব্য করা হয়েছে। 

শনিবার মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে নিরাপত্তা বাহিনী কয়েকজন শিশুসহ ১১৪ জনকে হত্যা করেছে, সংবাদ প্রতিবেদন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এমন কথা জানানোর পর এই খসড়া যৌথ ঘোষণাটি প্রস্তুত করা হয় বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাঅভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে শুরু হওয়া টানা বিক্ষোভে এদিনই সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে।

“প্রতিরক্ষা প্রধান হিসেবে আমরা জনগণের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীগুলোর ও সহযোগী নিরাপত্তা বিভাগগুলোর প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নিন্দা জানাচ্ছি,” খসড়া ওই বিবৃতিতে এমনটি বলা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, জার্মানি, গ্রিস, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, এই ১২টি দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানরা বিবৃতিটিতে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। 

এই দেশগুলোর কূটনীতিকরা ইতোমধ্যেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর রক্তপাতের নিন্দা করেছে, এতে সামরিক কর্তাদের ওই বিবৃতিটি অনেকটা প্রতীকী প্রতিবাদে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য রয়টার্সের।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত ভিন্নমতাবলম্বীদের সহিংসভাবে দমন করার চেষ্টার সমালোচনা অগ্রাহ্য করে এসেছে।

খসড়া ওই বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানো হয়নি। এই অভ্যুত্থানেই অং সান সু চির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।

বিবৃতিটিতে বলা হয়েছে, “একটি পেশাদার সামরিক বাহিনীকে অবশ্যই কার্যক্রম পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে হবে এবং নিজেদের নাগরিকদের আঘাত নয়, রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে।” 

এতে আরও বলা হয়, “মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে অবশ্যই সহিংসতা বন্ধ করে তাদের ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে হারিয়ে ফেলা শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারে জনগণের সঙ্গে কাজ করতে হবে।”

গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনে সু চির নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বড় ধরনের জয় পেয়েছিল। কিন্তু এই জয়ের স্বীকৃতি না দিয়ে নির্বাচনের বড় ধরনের কারচুপি হয়েছে অভিযোগ করে সামরিক বাহিনী। পরে এই অভিযোগকে সামনে রেখেই ক্ষমতা দখল করে তারা।

শনিবার নিহত বেসামরিকদের নিয়ে অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে মোট মৃতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

পশ্চিমা বিশ্ব তীব্র নিন্দা জানালেও মিয়ানমারের জান্তা সরকার একেবারে বন্ধুহীন নয়।  রাশিয়া ও চীনের কিছু সমর্থন উপভোগ করছে মিয়ানমারের জেনারেলরা। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এই দুই স্থায়ী সদস্য বিশ্ব সংস্থাটির সম্ভাব্য পদক্ষেপ ভিটো ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে রুদ্ধ করে দিতে পারে।

রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোমিন রাজধানী নেপিদোতে শনিবারের সামরিক কুজকাওয়াজে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং আগের দিন জান্তা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

কূটনীতিকরা জানান, আটটি দেশ- রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, লাওস ও থাইল্যান্ড ওই অনুষ্ঠানে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে । শুধু রাশিয়া একজন মন্ত্রী পদমর্যাদার প্রতিনিধি পাঠায়।