ক্যাটাগরি

শুভেচ্ছা জানাতে বিশ্বের কোনো অঞ্চল বাদ পড়েনি: প্রধানমন্ত্রী

রোববার
সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বাধীনতার
সুবর্ণজয়ন্তীর আলোচনাসভায় যোগ দিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

জাতির
পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ
বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোয় সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

শেখ
হাসিনা বলেন, “আপনারা জানেন, ২৬ মার্চ পাকিস্তানের প্রাইম মিনিস্টার ইমরান খান,
সেও শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর মনে হয় কোনো অঞ্চলে কেউ বাদ নেই
বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা বার্তা দিতে। এটাই হচ্ছে সার্থকতা ।”

তিনি
বলেন, “লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি আজকে, সেই
স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে আমরা পৌঁছে দেব। এবং সেটা দেবার মতো
দক্ষতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। আর তা অর্জন করেছে বলেই আজকে সারাবিশ্ব বাংলাদেশের
জনগণকে সম্মানিত করেছে আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে শুভ্চ্ছো
বার্তা দিয়ে।”

বাংলাদেশের
জনগণ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের যাত্রা… অনেক দূর যেতে
হবে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ, আজকে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, আজকে বাংলাদেশের
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে গেছে, আজকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, কিন্তু বাংলাদেশকে
আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যেটা জাতির পিতার
স্বপ্ন।”

দেশে
দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই বাংলাদেশ
ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। জাতির পিতার
স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ আমরা গড়ব। আমাদের স্বাধীনতা দিবসে এবং বিশেষ
করে এই সুবর্ণজয়ন্তীতে এবং মুজিববর্ষে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।”

আওয়ামী
লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে
তাদের কাছে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরতে গিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “যে আদর্শ নিয়ে
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, যে আদর্শকে আবারো আমরা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি, যে
আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান, সেই আদর্শ ধারণ করেই
বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের
সোনার বাংলা করে গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ।”

শেখ
হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার কাজে হাত দেন।

“বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন বাংলাদেশিদের
মধ্যে যারা পাকিস্তানি শাসক বা সামরিক জান্তাদের গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের
সহযোগী ছিল, তাদের সব সময়ই চেষ্টা ছিল যে বাংলাদেশ যেন স্বাধীন দেশ, স্বাধীন রাষ্ট্র
হিসেবে টিকে থাকতে না পারে।

“ওই সময় তাদের চালানো নানা ধরনের অপ্রচার, নানা ধরনের অঘটন ঘটানো, পাটের
গুদামে আগুন থেকে শুরু করে থানা লুট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম…।

“এরা যখন দেখল, কোনো ধরনের অপপ্রচার করে, কোনো ধরনের বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি
করে বাঙালির অগ্রযাত্রা ব্যহত করতে পারছে না, ঠিক সেই মুহূর্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে, আমরা দেখেছি, কিছু
মানুষ এই পাকিস্তানিরা আবার আসবে এই আশাতেই ছিল।”

জাতির
পিতাকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর ইতিহাস থেকে তার নাম মুছে ফেলা হয়েছিল, ইতিহাস
বিকৃত করা হয়েছিল, ৭ মার্চের ভাষণও নিষিদ্ধ ছিল, বাংলাদেশকে একটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া
হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি
বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ইতিহাসকে আবার মানুষের সামনে তুলে ধরার
চেষ্টা করে।

“কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। সেই ফল ভালো হয়নি এবং ওই
সময় পাঁচটি বছর বাংলাদেশ পাঁচ পাঁচ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ
সৃষ্টি হয়েছিল, বাংলা ভাই সৃষ্টি হয়েছিল।

“১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে আমাদের মেয়েদেরকে পাশবিক
অত্যাচার করেছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে, লুটপাট করেছে, ঠিক একই কায়দায় কিন্তু বিএনপি
জামায়াত ক্ষমতায় এসে সেইভাবে লুটপাট, দুর্নীতি এবং নারী ধর্ষণ, নারী নির্যাতন… মনে হয় যেন একবারে
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা যা করেছিল ঠিক একই কাজ তারা করা শুরু করেছিল।’

২০০৮
সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠনের পর দীর্ঘ ১২ বছর ধারাবাহিকভাবে
সরকারে আছে। সে কারণেই বাংলাদেশের ‘আমূল পরিবর্তন’ হয়েছে বলে মন্তব্য
করেন শেখ হাসিনা।

“এখানে নতুন কিছু না। ম্যাজিক কিছু না। এটা হচ্ছে সেই আদর্শকে ধারণ করা,
আদর্শকে নিয়ে দেশ চালানো এবং আদর্শকে বাস্তবায়ন করা। যার ফলাফল আজকের বাংলাদেশ।”

বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া
চৌধুরী, মো. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দর রহমান, সাধারণ সম্পাদক
ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম
বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল
হোসেনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

গণভবন
প্রান্ত থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।