হরতাল
শেষে রোববার বিকালে ঢাকার পল্টনে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে
হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা
করেন।
তিনি
বলেন, সোমবার তারা পালন করবেন ‘দোয়া দিবস’ হিসেবে। আর আগামী শুক্রবার
সারা দেশে বিক্ষোভ করবে হেফাজতে ইসলাম।
সংগঠনের
ঢাকা মহানগর শাখার সহ প্রচার সম্পাদক
এহসানুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণার পাশাপাশি গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি, যারা গুলি করেছে তাদের চিহ্নিত করা, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ এবং চিকিৎসা দেওয়া, মামলার নামে হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়া
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামী বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বলে সংগঠনের প্রচার ও দাওয়াত বিষয়ক
সম্পাদক আহমেদ আব্দুল কাইয়ুম জানিয়েছেন।
স্বাধীনতার
সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা শুক্রবার জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে
থানা ও বিভিন্ন সরকারি
স্থাপনায় হামলা করলে সংঘর্ষে চারজন নিহত হন।
এরপর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাপক তাণ্ডব চালায় কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা। তারা রেলওয়ে স্টেশনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে।
জেলা শহরের কাউতলি এলাকায় পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং ২ নম্বর পুলিশ
ফাঁড়িতে হামলা করে। শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, আব্দুল কুদ্দুস মাখন মুক্তমঞ্চ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, পৌর মার্কেট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এলাকায় টানানো ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ছিঁড়ে অগ্নিসংযোগ করে। বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে।
এরপর
হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে শনিবার বিক্ষোভ এবং রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
এর
মধ্যেই শনিবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে মাদ্রাসাছাত্ররা ফের আইনশঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের সঙ্গে
সংঘাতে জড়ায়, সেখানে অন্তত পাঁচজন নিহত হন।
এদিকে
রোববার হরতালের মধ্যে সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে হেফাজত কর্মীরা। সেখানে তারা শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেছে, আগুন দিয়েছে ডজনখানেক গাড়িতে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
টানা তৃতীয় দিনের মত তাণ্ডব চালিয়েছে
মাদ্রাসার ছাত্ররা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে
হেফাজতকর্মীরা। পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে
তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে অন্তত দুজন হাসপাতালে মারা গেছেন।
সংঘর্ষের
খবর এসেছে মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিলেটসহ আরও কয়েকটি জেলা থেকে।
এই
‘ধর্মীয় উন্মাদনা ও উচ্ছৃঙ্খলতা’ বন্ধ
না করলে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে বলে ইতোমধ্যে হুঁশিয়ার করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় আমির জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে
তারা ‘কঠিন কর্মসূচি’ দেবেন।
রোববার
বিকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী সদরের কাচারি সড়কে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এভাবে ইসলামবিরোধী কাজ হলে, জুলুম-নির্যাতন হলে আমরা আলেম ওলামা, তৌহিদি জনতা, ছাত্র জনতা ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমরা বাধ্য হয়ে হরতালের ডাক দিয়েছি।”
সেই
হরতাল ‘সফল’ হয়েছে দাবি করে হেফাজত আমির বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় সরকারের পেটোয়া বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডাররা আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা-আক্রমণ করেছে, আহত-নিহত করেছে।
“আমাদের
হেফাজতের নায়েবে আমীর মধুপুরের পীর সাহেব আবদুল হামিদ হুজুরের ওপর হামলা করেছে, আরো অনেকের উপর হামলা করেছে। হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সরকারের কাছে দাবি এ হামলা যেন
বন্ধ করে।”