ক্যাটাগরি

মিয়ানমারের শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর ‍অভিযোগ, থাইল্যান্ডের অস্বীকার

স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নীতির আলোকেই কারেন শরণার্থীদের জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গত শনিবার মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাবাহিনীর গুলিতে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি ১১৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়। যার প্রতিশোধ নিতে ওই দিন একটি সেনাপোস্টে হামলা চালিয়ে এক কর্নেলসহ ১০ সেনাসদস্যকে হত্যা করার দাবি করে সশস্ত্র গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ)।

যার জেরে শনিবার রাতে কারেন রাজ্যের মুতরাও জেলায় কেএনইউ নিয়ন্ত্রিত পাঁচটি অঞ্চলে সেনাবাহিনী বিমান হামলা চালায় এবং কেএনইউর দুই যোদ্ধাসহ অন্তত পাঁচ জনকে হত্যা করে।

বিমান হামলা শুরু হলে কারেন গ্রামের তিন হাজারের বেশি বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে প্রথমে জঙ্গলে এবং সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ‍থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেয়। থাই কর্তৃপক্ষ রোববার মিয়ানমারের তিন হাজারের বেশি শরণার্থী তাদের ভূখণ্ডে পৌঁছানোর কথা নিশ্চিত করে।

সোমবার মিয়ানমারের দাতব্য সংস্থা ‘ফ্রি বার্মা রেঞ্জার্স’র প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড ইউবাঙ্ক দাবি করেন, ‘‘থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়া প্রায় ২০০৯ জন শরণার্থীকে স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সীমান্তে মিয়ানমারের দিকে ই থু হতা শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

এক কারেন গ্রামবাসীর ধারন করা ভিডিওতে দেখা যায়, থাই সেনাদের নজরদারিতে কারেন শরণার্থীরা নৌকায় উঠছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ওই ভিডিও প্রচার করেছে।

ভিডিওতে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘দেখুন, থাইল্যান্ডের সেনারা গ্রামবাসীদের ফিরে যেতে বলছেন। এখানে দেখুন, বয়স্ক মানুষদেরও ফিরে যতে হবে বলছে। দেখুন, এখানে অনেক থাই সেনা।”

থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ বাইরের কাউকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না।

তবে থাইল্যান্ডের মায়ে হং সন প্রদেশের গভর্নর থিচাই জিন্দালুয়াং সাংবাদিকদের বলেন, শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। তাদের মায়ে সারিয়াং এবং সোপ মোই জেলার সীমান্ত ঘেঁষে নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়েছে।

তবে যারা পালিয়ে এসেছেন তাদের অবশ্যই আটকে দেয়া হবে বলে স্থানীয় একটি বৈঠকে বলেছেন মায়ে সারিয়াং জেলার প্রধান সাংখম খাদচিআংসায়েন।

মিয়ানমারে কারেন গ্রামে বিমান হামলা, পালাচ্ছে মানুষ
 

তিনি বলেন, ‘‘সব সংস্থারই জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের নীতি অনুসরণ করা উচিত। ওই নীতি অনুযায়ী যারা পালিয়ে এসেছেন তাদের আটকে দেওয়া এবং সীমান্তেই তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

‘‘সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী প্রধান ভূমিকা পালন করছে। আমরা অবশ্যই ইউএনএইচসিআর, এনজিও বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার বা যোগাযোগ করার অনুমতি দিব না। খুব স্পষ্টভাবে এর উপর নিষেধাজ্ঞা আছে।”

এ বিষয়ে ইউএনএইচসিআর থেকে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

তবে হিউম্যান রাইটস গ্রুপ এবং ইউরোপিয়ান কারন নেটওয়ার্ক থাই সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে।

যুক্তরাজ্যে ‘বার্মা ক্যাম্পেইন’ এর প্রধান মার্ক ফারমানের বলেন, ‘‘ওই অঞ্চলের আকাশে এখনো যুদ্ধবিমান উড়ছে।”

থাইল্যান্ডের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ গবেষক সুনাই ফাসুক বলেন, ‘‘থাইল্যান্ড সরকারের এই নিষ্ঠুর এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড অবশ্যই এখনই বন্ধ করতে হবে।”

অবশ্য, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এক সময়ের জান্তাশাসক প্রায়ুত চান ওচা সোমবার সকালে এক বক্তৃতায় তার সরকার মিয়ানমারের শরণার্থীদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলকারী জান্তাবাহিনীর সমর্থন দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সম্ভবত কেউই জনগণের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করা কাউকে সমর্থন করবে না।”

গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতার দখল নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। তার পর থেকেই সেনাঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দেশটিতে গণবিক্ষোভ চলছে।

বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী শক্তি প্রয়োগ করছে। এখন পর্যন্ত পুলিশ ও সেনাসদস্যদের গুলিতে ৪৫৯ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।

রাজনৈতিক নেতা এবং শত শত সাধারণ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে নানা আদিবাসী সশস্ত্র গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় পালিয়ে যাচ্ছেন।

জান্তাবাহিনী বার বার নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিলেও কবে নাগাদ নির্বাচন হতে পারে সে বিষয়ে কিছুই বলছে না।