উদ্যোক্তাদের আশা, এসব স্টলের বাছাই করা বই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি সারাদেশে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঠাগারে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ তৈরি এবং তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখবে।
এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’। জাতির পিতার জীবন ও কর্ম অধ্যয়ন এবং স্বাধীনতার মর্মবাণী জাতীয় জীবনে যাতে প্রতিফলিত হয়, তার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে এবারের মেলায়। বইমেলার সামগ্রিক সজ্জা, বিন্যাস ও প্রকাশনায় গুরুত্ব পেয়েছে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আবহ।
অন্যান্য বছরের মত এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নির্মাণ করেছে বইমেলার স্টল। দৃষ্টিনন্দন এই স্টলে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের লেখা বইসহ তার জীবন-কর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনীর বাছাই করা বই এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের লেখা বই। এছাড়া যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণির লেখা বইও রয়েছে।
বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বইয়ের প্রচার, সঠিক ইতিহাস মানুষকে জানার সুযোগ করে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য বলে জানান যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গত ৬ বছর ধরে বইমেলায় যুবলীগের স্টল থাকছে। এ বছর আমরা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ১৫২ জন নেতা-কর্মী প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করছি। বই বিক্রি আমাদের উদ্দেশ্য নয়, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বইয়ের প্রচার, সঠিক ইতিহাস মানুষকে জানার সুযোগ করে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।
“বিশেষ করে বইমেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা এসে বই কেনেন, মেলা থেকে বই নিয়ে স্কুল কলেজে বিতরণ করা হয়, এলাকায় পাঠাগার গড়ে তোলেন তারা। তাই নেতা-কর্মীদের মধ্যে বই পড়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, বইয়ের প্রতি সম্পৃক্ততা এবং আমাদের বিভিন্ন জেলার ইউনিটগুলো যাতে বেশি বেশি বই বিতরণে উদ্যোগী হতে পারে, সে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি।”
বিপ্লব মুস্তাফিজ বলেন, “আমাদের স্টলে রয়েছে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির বই, যিনি একজন অসম্ভব মেধাবী সাংবাদিক ছিলেন। এসব বই পড়ে নেতা-কর্মীরা তার রাজনৈতিক ভাবনা, চিন্তা-চেতনা জানার সুযোগ পাচ্ছে।
“বইমেলা আমাদের একটা মিলনমেলাও বটে। প্রতিদিন আমাদের আড্ড হয়। এবার বইমেলা না হলে আমরা আক্ষেপের মধ্যে থাকতাম। যদিও কোভিডের মধ্যে এবার মেলা জমজমাট হচ্ছে না। প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও মানুষ বইমেলায় আসেছে, এটা বইয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অগাধ টান।”
এবার বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নৌকার উপর বই সাজিয়ে স্টল করেছে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সেখানে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নচিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সায়েম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমরা স্টলে বই সাজিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বৃদ্ধ জাতি গঠনে এ ধরনের বই ভূমিকা রাখবে।”
বাংলাদেশ ছাত্রলীগেরও স্টল রয়েছে বইমেলায়, নাম ‘মাতৃভূমি,। তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সংগঠনটি নিজস্ব প্রকাশনা ছাড়াও বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বই দিয়ে স্টল সাজিয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু হাসনাত সরদার হিমেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটককে বলেন, “ছাত্রলীগ প্রতি বছরই মাতৃভূমি নামে বইমেলায় স্টল করে। আমরা মূলত জাতির পিতার লেখা বই, তার জীবন-কর্ম নিয়ে বাছাই করা বই, জননেত্রী শেখ হাসিনার লেখা বই প্রচারে গুরুত্ব দিই। আমাদের স্টলে ছাত্রলীগের নিজস্ব প্রকাশনাও রয়েছে। মাতৃভূমি স্টলে সারাদেশ থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই কেনেন, তরুণ সমাজকে বই উপহার দেন।”
প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঠাগারে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ তৈরি করতে বইমেলায় মানসম্মত বই বাছাইয়ে পরামর্শ দিচ্ছে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত তিনবছর যাবৎ বইমেলায় আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু কর্নার প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসাহিত করি, ভালো মানের বইয়ের পরামর্শ দিয়ে থাকি। সকল প্রকাশনার মানসম্মত বইগুলো বাছাই করে এনে আমাদের এখানে প্রদর্শন করি। বিক্রি আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমাদের মূল উদ্দেশ্য বই প্রদর্শন এবং প্রচার। আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি যে, কোন প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের বই রাখা উচিত।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে রচিত গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ এর প্রথম থেকে অষ্টম পর্ব নিয়ে বইমেলায় স্টল সাজিয়েছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) ।
ভাষার আন্দোলনের শুরুর পর্ব ও তাতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে ‘মুজিব’ ৮ এবার বইমেলায় পাঠকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।