গত শনিবার ছিল মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস। বিবিসি জানায়, ওইদিন দেশজুড়ে পুলিশ ও সেনাসদস্যদের গুলিতে শিশুসহ ১১৪ বিক্ষোভকারী নিহত হন। যা গত ১ ফেব্রুয়ারির সেনাঅভ্যুত্থানের পর দেশটির সবথেকে রক্তাক্ত দিনে পরিণত হয়েছে।
এত প্রাণের বলি, রাজপথে এত রক্তও ‘জনগণকে সুরক্ষা দেয়ার ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার’ ফাঁকা বুলি আওড়ানো মিয়ানমারের জেনারেলদের তাদের আনন্দ আয়োজন করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে জমকালো পার্টির আয়োজন করেন। যাতে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
১৯৪৫ সালে জাপানের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ গড়ে তোলার দিনকে স্মরণ করে প্রতিবছর ২৭ মার্চ মিয়ানমারে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করা হয়।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পার্টির কিছু ছবি দেখানো হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওইসব ছবিতে দেখা যায় মিন অং হ্লাইং সাদা রঙের ইউনিফর্ম পরে আছেন, গলায় বো টাই বাঁধা। লালগাচিলার উপর দিয়ে তিনি হেঁটে যাচ্ছেন, মুখে হাসি। অন্য ছবিতে নৈশভোজের জন্য সবার সঙ্গে বড় একটি টেবিলে বসে আছেন তিনি।
এত মৃত্যুর দিনে সেনাবাহিনীর এই জমকালো পার্টির আয়োজন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যাদের একজন মং জারনি। যিনি নিজেও সেনাঅভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন।
অনেক টুইটার ব্যবহারকারী ওই পার্টির ছবির পাশে নিহতদের ছবি দিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিশ্বজুড়েও মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ওই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
শনিবারের হত্যাকণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মিয়ানমারে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ চলছে।
এশিয়া ও ইউরোপসহ বিশ্বের অনেকগুলো দেশের শীর্ষ সামরিক কমান্ডাররা এক যৌথ বিবৃতিতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, জার্মানি, গ্রিস, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, এই ১২টি দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানরা বিবৃতিটিতে সই করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সেনাঅভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গুলিতে মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত চারশ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
এমনকি রোববার নিহত বিক্ষোভকারীদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও গুলি চালানোর খবর পাওয়া গেছে।
সোমবারও বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগনে পুলিশের গুলিতে তিন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।