গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে কম, কোভিড-১৯ এর উৎস নিয়ে তদন্ত করা ডব্লিউএইচওর যৌথ আন্তর্জাতিক দল এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।
মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।
তার আগেই প্রতিবেদনের খসড়া সংস্করণ হাতে পায় সিএনএন, যাতে ২০১৯ সালের একেবারে শেষ দিকের আগে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল এমন কোনো তথ্য বা ইঙ্গিত নেই।
প্রতিবেদনে ভাইরাসের সম্ভাব্য চারটি উৎসের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা হচ্ছে বাদুড় থেকে অন্য কোনো প্রাণী হয়ে ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করেছিল।
অন্তর্বর্তীকালীন বাহক ওই বন্য প্রাণীটি সম্ভবত মানুষের হাতে ধরা পড়েছিল এবং পরে খামারে বেড়ে উঠেছিল।
বিজ্ঞানীরা বাদুড়কেই করোনাভাইরাসের মূল উৎস মনে করছেন, তবে এর কাছ থেকে মানুষের মধ্যে আসার আগে অন্য কোন প্রাণী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছিল, তদন্তে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
“সার্স-সিওভি-২ এর সম্ভাব্য অন্তর্বর্তীকালীন বাহক প্রাণীটি এখনও অধরাই রয়ে গেছে,” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এর পর যে সম্ভাবনাটি প্রকট, তা হলো বাদুড় বা প্যাঙ্গোলিনের মতো যেসব প্রাণী এই ধরনের করোনাভাইরাস বহন করতে পারে, তাদের কাছ থেকে এটি সরাসরি মানুষের দেহে এসেছে।
করোনাভাইরাস: বাদুড়কে যে কারণে দায়ী করা চলে না
আরেক মহামারীর আগে বাদুড়ের ডেরায় ‘ভাইরাস শিকারিরা’

জমাটবাঁধা বা হিমায়িত খাবার থেকে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটতে পারে, এমন সম্ভাবনা কম হলেও তা অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আর ল্যাব থেকে দুর্ঘটনাবশত ভাইরাসটি ছড়িয়েছে, এ সম্ভাবনা সবচেয়ে কম বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সাবেক পরিচালক ড. রবার্ট রেডফিল্ড এর আগে সিএনএনের ড. সঞ্জয় গুপ্তকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসটি কোনো ল্যাব থেকে ছাড়া হয়েছে বলে মত ব্যক্ত করেছিলেন।
আর ডব্লিউএইচও’র প্রতিবেদন বলছে, তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা ‘নেই বললেই চলে’।
“২০১৯ সালের ডিসেম্বরের আগে কোনো গবেষণাগারেই সার্স-সিওভি-২ এর কাছাকাছি কোনো ভাইরাস বা এমন কোনো জিনোমের রেকর্ড নেই, যাদের সংমিশ্রণে সার্স-সিওভি-২ এর জিনোম পাওয়া যায়। এসব কারণে কোনো একটি গবেষণাগার থেকে মহামারীর সূত্রপাত, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গবেষকরাও মাসের পর মাস ধরে এ কথাই বলে আসছেন।
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও দেখা গেছে, ভাইরাসটি কোনো ল্যাবে বানানো হয়নি, বরং এটি স্বাভাবিকভাবেই কোনো প্রাণীর কাছ থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে এবং পরে ছড়িয়েছে; যেমনটা সার্স ভাইরাসের ক্ষেত্রেও হয়েছিল।
২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ওই ভাইরাসটি থামার আগে বিশ্বজুড়ে ৮ হাজারের মতো মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল।
ডব্লিউএইচও’র এ খসড়া প্রতিবেদনে ভাইরাসের বিস্তারে হুনান সিফুড মার্কেটের ভূমিকা নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
হতে পারে উহানের ওই মার্কেটটি প্রাদুর্ভাবের মূল উৎস নয়; তবে ছাদযুক্ত ও খোলা নর্দমার ভিড়ঠাসা ওই মার্কেটের ক্রেতা-বিক্রেতারাই শহরটিতে কোভিড-১৯ এর বিস্তার ত্বরান্বিত করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
হুনানের ওই মার্কেটে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত হওয়ার আগে অন্যান্য মার্কেট এবং অন্যত্রও ভাইরাসটি ছড়াচ্ছিল বলে তথ্য প্রমাণও পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম প্রাদুর্ভাবের খোঁজ পাওয়া আগে সংরক্ষিত বিভিন্ন মানুষের রক্তের নমুনা আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীরা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন প্রাণীর উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বড় বড় জমায়েত নিয়ে বিস্তৃত গবেষণাও করতে বলেছেন।
চীনের ১৭ জন বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের আরও ১৭ বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত যৌথ আন্তর্জাতিক দল, ডব্লিউএইচও, গ্লোবাল আউটব্রেক অ্যালার্ট অ্যান্ড রেসপন্স নেটওয়ার্ক (জিওএআরএন) এবং ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন ফর অ্যানিমেল হেলথ (ওআইই) এ প্রতিবেদনটি লিখেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন । পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিল জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) ।