১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী
দল আওয়ামী লীগের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে
তাকে গ্রেপ্তার এবং বাঙালি গণহত্যার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেছেন, “সে জন্য আজ পর্যন্ত
ক্ষমা চাওয়ার কোনো ইংগিত নেই। আমি মনে করি, একাত্তরে যেসব নির্মমতা ঘটানো হয়েছে, সেজন্য
পাকিস্তানের জনগণের উচিৎ তাদের সরকারকে আহ্বান জানানো, যাতে বাংলাদেশের মানুষের কাছে
আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া হয়।”
হাক্কানীর ভাষায়, একাত্তরের
ভূমিকার জন্য দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়াই হতে পারে পাকিস্তানের জন্য এখন সবচেয়ে
‘সভ্য’ আচরণ।
সোমবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত
এক ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী
এই সাবেক কূটনীতিক।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে
এই ওয়েবিনারে ব্রাসেলসে বাংলাদেশের
রাষ্ট্রদূত মাহাবুব হাসান সালেহর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ
কে আব্দুল মোমেন।
২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা হাক্কানী এখন ওয়াশিংটন ডিসির
হাডসন ইনস্টিটিউটের সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া বিভাগের পরিচালক ও সিনিয়র ফেলো হিসেবে
কাজ করছেন।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান:
অ্যান আইকনিক লিডার অব পিপলস স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম’ শীর্ষক ওই ওয়েবিনিয়ারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিই নন, তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় এ পর্যন্ত আসা শ্রেষ্ঠ নেতাদের
একজন, বিশ্বের ইতিহাসেই তিনি একজন মহান নেতা।
হাক্কানীর মতে, বিশ শতকের যে
কয়েকজন নেতা তার দেশ ও জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে সফল হয়েছেন বঙ্গবন্ধু
তাদের একজন। মহাত্মা গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলার
কাতারেই তার আসন।
তিনি বলেন, “এটা খুবই অদ্ভুত
যে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ৭২ বছর ধরে কাশ্মিরের জনগণের মুক্তির দাবিতে স্বোচ্চার,
অথচ ওই সময়ে তারা বঙ্গবন্ধুর আলোচনার আহ্বানে কর্ণপাতও করেননি এবং আলোচনার মধ্যমে সমস্যা
সমাধানে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।”
হাক্কানি তার প্রবন্ধে বলেন,
বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ; আর্থ-সামাজিকভাবে
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল একটি দেশ। আজকের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু এবং তার কন্যা
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের অবদান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল
মোমেন বলেন, পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ মুহূর্তে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। সুবর্ণজয়ন্তীর এই মুহূর্তে ১৯৭১ সালে চালানো গণহত্যার জন্য পাকিস্তান ক্ষমা চাইবে,
সেই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলেননি।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতাসংগ্রাম
সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে হাক্কানির মন্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও গবেষকদের জন্য
সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ব্রাসেলসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সালেহ।