শুক্রবার সকাল ১১টায় মেলার দ্বার খুললেও ক্রেতা-দর্শনার্থীর অভাবে শুরুর দিকে অনেকটা খরায় ভুগে বইমেলার স্টল-প্যাভিলিয়নগুলো।
দুপুর গড়িয়ে বিকেলে নামতেই বদলে যায় সেই দৃশ্যপট। মেলার দুই প্রাঙ্গণ-বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।
বিকেল ৩টার পর থেকে ১৫ লাখ বর্গফুটের বিশাল মেলাপ্রান্তরে বয়ে যায় প্রাণের প্রবাহ; জনসমাগম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে বইয়ের বিকিকিনি।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বইমেলার সময় কমিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বন্ধ করে দেওয়া হলেও চৈত্রের দাবদাহের মধ্যে দুপুরে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আনাগোনা ছিল কম।
বিকেলে মেলা জমে উঠলেও অল্প সময়ে মেলায় পছন্দের বই ঘুরে ঘুরে দেখতে পারছেন না বলে দাবি বইপ্রেমীদের।
দেশে দ্রুত বাড়তে থাকা করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে অবিলম্বে বইমেলা, সামাজিক অনুষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্রসহ যে কোনো ধরনের মেলা বন্ধ করার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
সেই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা একাডেমি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও মেলা কখন বন্ধ হয়ে যায়, তা নিয়ে শঙ্কায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই।
মেলাপ্রাঙ্গণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দীন মাহী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনার কারণে মেলা কখন বন্ধ হয়ে যায় ঠিক নাই। তাই এবছরের মেলাটা একবার হলেও যাতে দেখতে পারি, সেজন্যই আসলাম। দুপুরে অনেক গরম ছিল, বিকেলে মেলায় ঢুকে দুটো বই কিনতেই ঘোষণা আসছে মেলার সময় শেষ।
“আসলে করোনার সংক্রমণ রোধে যদি সময় কমানো হয়ে থাকে, এটা ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ মেলার সময় কমানোর কারণেই আজকে এত ভিড়। কোথাও দু-চার লাইন পড়ে বাছ-বিচার করে বই কেনা মুশকিল।”
মেলার সময় নির্ধারিত সময় কম হওয়ায় ক্রেতা-দর্শনার্থীরা সাধারণ স্টলগুলো তেমন ঘুরে দেখার সুযোগ পাচ্ছে না বলে দাবি স্টল মালিক ও বিক্রয় কর্মীদের।
জোনাকী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী নাঈম বখতিয়ার বলেন, “এবার প্যাভিলিয়নগুলো একসাথে মাঝখানে রাখার ফলে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা সেখানেই বেশি ভিড় করছে। প্যাভিলিয়নগুলো যদি বিক্ষিপ্তভাবে দেওয়া হত, তাহলে প্যাভিলিয়নের পাশাপাশি স্টলগুলো মানুষ ঘুরে দেখত।”
‘কথা প্রকাশ’ প্যাভিলিয়নের ব্যবস্থাপক এসএম ইউনুস বলেন, “আসলে সারাদিন ক্রেতা-দর্শনার্থী তেমন দেখা মেলে না। বিকেল বেলা সবাই একসাথে এসে ভিড় করে। গত ১৬ দিনে আজকে সবচেয়ে বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থী দেখা গেছে। মেলা কখন বন্ধ হয়ে যায়, এ একটা অনিশ্চয়তা কাজ করছে সবার মাঝে।”
গত বছরের তুলনায় এবছর মেলায় কেমন বেচাকেনা হচ্ছে জানতে চাইলে অন্বেষা প্রকাশনের পরিচালক ফাতেমা বুলবুল বলেন, “আসলে গত বছরের সাথে এবছর তুলনা করা যাবে না। মহামারীর সময়ে মেলা হচ্ছে, আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখা যাচ্ছে, সেটাই বড় বিষয়। তারপরও বিকেলে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভালো সাড়া পাচ্ছি।”
বইমেলা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “বইমেলা বন্ধের বিষয়ে আমরা সরকারের কোনো নির্দেশনা পাইনি। করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার কোনো সিন্ধান্ত নিলে, সেটা সবাই জানতে পারবেন।”
ছুটির দিনে নেই শিশুদের আনাগোনা
করোনাভাইরাস আতঙ্কে এবার মেলায় ‘শিশু প্রহর’ না থাকায় দিনভর শিশুদের তেমন উপস্থিতি চোখে পড়েনি। বিকেলে মেলার শিশু চত্বরে বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশু-কিশোরদের কিছুটা দেখা মেলে।
সাত বছরের শিশু ইউসুফ আব্দুল্লাহ আয়ানকে নিয়ে রাজধানীর বিজয়নগর থেকে থেকে বিকেলে বইমেলায় এসেছেন নাহিদা আলম। মেলার শিশু চত্বরের স্টলগুলোতে ঘুরে ঘুরে গল্পের বই দেখছে আয়ান।
জিজ্ঞেস করতেই আয়ান জানাল, গল্পের বই তার খুব ভালো লাগে। ‘মৎসকণ্যা’ নামে একটা গল্পের বইও কিনেছে সে।
সে বলল, “মেলায় অনেক সুন্দর সুন্দর গল্পের বই ঘুরে দেখেছি। ছবি থাকলে গল্প পড়ে আমার অনেক ভালো লাগে।”
নাহিদা আলম বলেন, “আসলে এই করোনার মধ্যে শিশুদের নিয়ে বের হওয়ার অনেক রিস্ক। তারপরও ছেলের বায়না রাখতে গিয়ে আসতে হলো। তবে শিশু চত্বর ছাড়া ঘুরে দেখার মতো আর কোথাও ঘুরে দেখার পরিবেশ নাই, সব জায়গায় লোকে লোকারণ্য।”
এদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর খুব বেশি বেচা-কেনা হচ্ছে না বলে দাবি শিশু চত্বরের স্টল মালিক ও বিক্রয় কর্মীদের।
শিশু গ্রন্থকুটির প্রকাশনী বিক্রয় কর্মীয় তপতী পোদ্দার বলেন, “যেহেতু পরিস্থিতি অনুকূলে নেই, তাই অভিভাবকরা শিশুদের বইমেলায় নিয়ে আসতে সাহস পাচ্ছেন না। ছুটির দিনে আমাদের বেচাকেনা অনেক ভালো হয়। কিন্তু আজকে সকাল থেকেই শিশু চত্বর ফাঁকা।”
ঝিঙেফুল প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা সাধারণত শিশু-কিশোরদের বই বিক্রি করি। করোনার কারণে শিশু-কিশোররা এবার মেলায় আসতে পারছে না। কয়েক দিন ধরে শিশু চত্বর অনেকটা ক্রেতাশূণ্য বলা যায়।”
করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় বাংলা একাডেমির মূল প্রাঙ্গণে আলোচনা মঞ্চের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার ১৬তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৯৯টি।
শনিবারের সময়সূচি
আগামীকাল শনিবার ১৭তম দিনে অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।