সেঞ্চুরিয়নে শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৩ উইকেটে জিতেছে
পাকিস্তান। স্বাগতিকদের দেওয়া ২৭৪ রানের লক্ষ্যে তারা পৌঁছাতে পেরেছে শেষ বলে। এগিয়ে
গেছে তিন ম্যাচের সিরিজে।
পাকিস্তানকে জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া বাবর খেলেন ১০৪ বলে ১০৩ রানের ইনিংস। ৭০ রান
আসে ইমামের ব্যাট থেকে। দুই জনে গড়েন ১৭৭ রানের জুটি। রান তাড়ায় দ্বিতীয় উইকেটে যেকোনো
দলের বিপক্ষেই এটা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ।
রেকর্ড গড়া জুটির পর ১৭ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া পাকিস্তান জয়
দেখছিল মোহাম্মদ রিজওয়ান ও শাদাব খানের ব্যাটে। কিন্তু দুই জনই ছুড়ে আসেন উইকেট। শেষ
ওভারে ৩ রানের সমীকরণ মেলানো নিয়ে এক সময় জাগে শঙ্কা। তবে ঠাণ্ডা মাথায় দলকে জয়ের বন্দরে
নিয়ে যান ফাহিম।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৫১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে খেলায় ফেরান
আনরিক নরকিয়া। ১২৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে রাসি ফন ডার ডাসেন।
সুপারস্পোর্ট পার্কের বরাবরের চেয়ে একটু মন্থর উইকেটে টস জিতে ফিল্ডিং নেন
বাবর। দক্ষিণ আফ্রিকাকে চেপে ধরেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। সপ্তম ওভারে ধরেন জোড়া শিকার।
৩ বলের মধ্যে বিদায় করেন দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও এইডেন মারক্রামকে।
ব্যাট হাতে অধিনায়কত্বের শুরুটা ভালো হয়নি টেম্বা বাভুমার। ১ রান করে মোহাম্মদ
হাসনাইনের বলে ক্যাচ দেন থার্ড ম্যানে। ২১ বল খেলে ১ রান করা হাইনরিখ ক্লাসেনকে কট
বিহাইন্ড করেন ফাহিম আশরাফ।
৫৫ রানে ৪ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা তখন খাদের কিনারে। সেখানে ত্রাতা হয়ে
আসেন ফন ডার ডাসেন ও ডেভিড মিলার। দুইজনের ব্যাটে দুঃসময় কাটিয়ে এগোতে থাকে স্বাগতিকরা।
৮০ বলে ফিফটি স্পর্শ করে সেঞ্চুরিতে চোখ রাখেন ফন ডার ডাসেন। মিলারের অর্ধশতক
আসে ৫২ বলে। এর পরপরই তাকে ফিরিয়ে দেন হারিস রউফ। ৫ চারে ৫০ রানে মিলার কট বিহাইন্ড
হলে ভাঙে ১১৬ রানের জুটি।
আন্দিলে ফেলুকওয়ায়োকে নিয়ে দলকে পথে রাখেন ফন ডার ডাসেন। হাসনাইনকে পরপর দুই
বলে ছক্কা-চার মেরে পৌঁছে যান নব্বইয়ের ঘরে।
২৯ রান করা ফেলুকওয়ায়োকে রউফ ফিরিয়ে দিলে ভাঙে ৬৪ রানের জুটি। ওই ওভারেই ১২৩
বলে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন ফন ডার ডাসেন।
শেষ পর্যন্ত ১২৩ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। তার
ব্যাটে লড়াই করার পুঁজি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় পাকিস্তান। তৃতীয় ওভারেই কাগিসো রাবাদার
বলে বোল্ড হয়ে যান ফখর জামান। এরপর অবশ্য বাবর ও ইমামের ব্যাটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়
তারা।
শুরুতে দুই ব্যাটসম্যানই ছিলেন সাবধানী। থিতু হওয়ার পর শট খেলতে শুরু করেন
বাবর। বাড়ে রানের গতি। পরে যোগ দেন ইমামও। ৬১ বলে ফিফটিতে পৌঁছান বাবর, ইমামের লাগে
৬৩ বল।
এরপর আরও দ্রুত রান তুলতে থাকেন বাবর। পাকিস্তান অধিনায়কের পরের পঞ্চাশ আসে
কেবল ৪২ বল। নরকিয়াকে চার মেরে ১০৩ বলে সেঞ্চুরি স্পর্শ করার পরের বলে কট বিহাইন্ড
হয়ে থামেন বাবর। তার অধিনায়কোচিত ইনিংসটি গড়া ১৭ চারে।
ওয়ানডেতে এটি বাবরের ১৩তম সেঞ্চুরি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম।
নরকিয়া পরের তিন ওভারে একে একে ফিরিয়ে দেন ইমাম, দানিশ আজিজ ও আসিফ আলিকে।
৩ চার ও এক ছক্কায় ৭০ রান করেন ইমাম। আসিফ ও অভিষিক্ত আজিজ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।
ছোট ধসে দিক হারানো পাকিস্তানকে কক্ষপথে ফেরান রিজওয়ান ও শাদাব। কিন্তু দুই
জনই ফিরেন বাজে শট খেলে। চারটি চারে ৪০ রান করেন কিপার-ব্যাটসম্যান রিজওয়ান। ৩৩ রানে
থামেন শাদাব।
শেষ ওভারের প্রথম বলে শাদাবকে আউট করার পর ফাহিমকে তিনটি বল ডট খেলান ফেলুকওয়ায়ো।
পঞ্চম বলে ২ রান নিয়ে দুই দলের রান সমতায় নিয়ে আসেন ফাহিম। শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে দলকে
এনে দেন দারুণ জয়। ২০০৫ সালের পর রান তাড়ায় এই প্রথম শেষ বলে গিয়ে জিতল পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ২৭৩/৬ (মারক্রাম ১৯, ডি কক ২০, বাভুমা
১, ফন ডার ডাসেন ১২৩*, ক্লাসেন ১, মিলার ৫০, ফেলুকওয়ায়ো ২৯, রাবাদা ১৩*; আফ্রিদি ১০-১-৬১-২,
হাসনাইন ১০-২-৫২-১, ফাহিম ৯-০-২৫-১, রউফ ১০-০-৭২-২, শাদাব ৮-০-৪৫-০, আজিজ ৩-০-১৬-০)।
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২৭৪/৭ (ইমাম ৭০, ফখর ৮, বাবর ১০৩,
রিজওয়ান ৪০, আজিজ ৩, আসিফ ২, শাদাব ৩৩, ফাহিম ৫*, আফ্রিদি ০*; রাবাদা ১০-১-৫১-১, এনগিডি
১০-১-৬৫-০, নরকিয়া ১০-০-৫১-৪, ফেলুকওয়ায়ো ১০-০-৫৬-২, শামসি ১০-০-৫১-০)।
ফল: পাকিস্তান ৩ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে পাকিস্তান।
ম্যান অব দা ম্যাচ: বাবর আজম।