তিনি বলেছেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার থেকে সারা দেশে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”
শনিবার ঢাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সেতুমন্ত্রী কাদের। তবে সেই লকডাউনের ব্যাপ্তি কী হবে, কী কী খোলা থাকবে আর কী কী বন্ধ, তা সরকারের ঘোষণায় বিস্তারিত জানা যাবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এক ভিডিও বার্তায় লাকডাউন পরিকল্পনা নিয়ে কিছুটা আভাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায়, সংক্রমণ রোধ করার স্বার্থে সরকার দু-তিন দিনের মধ্যে সারা দেশে এক সপ্তাহের লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
“সেক্ষেত্রে লকডাউন চলাকালে শুধু জরুরি সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। আর শিল্প কলকারখানা খোলা থাকবে, যাতে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন শিফটে কাজ করতে পারে।”
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গতবছর ২৩ মার্চ প্রথমবার ‘সাধারণ ছুটির’ ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। শুরুতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘ছুটি’ ঘোষণা হলেও পরে তার মেয়াদ বাড়ে কয়েক দফা।
সে সময় সব অফিস আদালত, কল-কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ছুটির মধ্যে সব কিছু বন্ধ থাকার সেই পরিস্থিতি ‘লকডাউন’ হিসেবে পরিচিত পায়।
কিন্তু তাতে নিম্নবিত্তের জীবন-জীবিকা আর দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়লে বিভিন্ন মহলের দাবিতে সরকার ৩১ মের পর থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল করতে থাকে। বছরের শেষে এসে স স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকা ছাড়া আর সব কড়াকড়িই উঠে যায়।
ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রেখেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার ভাবনা থেকে মাঝে পুরো দেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করে পরিস্থিতি অনুযায়ী লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনা হয়েছিল। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি এলাকায় সেই ব্যবস্থা চালানোও হয়েছিল। কিন্তু পরে আর তা এগোয়নি।
এদিকে নতুন বছরের শুরুরে দেশে সংক্রমণ হার অনেকটা কমে আসে। সারা দেশে শুরু হয় করোনাভাইরাসের গণ টিকাদান।
কিন্তু মার্চের শুরু থেকে দেশে আবার নতুন রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬ হাজার ৮৩০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে, যা মহামারী শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ।
দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জনে। আর তাদের মধ্যে মোট ৯ হাজার ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংক্রমণে লাগাম দিতে ২৯ মার্চ সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ সকল ক্ষেত্রে সব ধরনের জনসমাগম সীমিত করাসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি হয়। এরপর সেগুলো বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ও কড়াকড়ির ঘোষণা আসতে থাকে।
সেদিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, গতবারের মত ‘সাধারণ ছুটি’ দেওয়ার কোনো আলোচনা হয়নি। তবে তার এক সপ্তাহের মাথায় নতুন করে লকডাউনের সিদ্ধান্তের খবর দিলেন তিনি।