কৃষকরা জানান, চরের জমি উর্বর হওয়ায় বেশি সার দিতে হয় না। তাই কম খরচে চাষ করা যায়। বীজ রোপণের তিন মাসের মধ্যে বাদাম তোলা যায়।
তবে ফলন ভালো হলেও বাজারজাতকরণের সুব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত লাভ থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে কৃষক ও কৃষি বিভাগের ভাষ্য।
রংপুরের তিস্তার চরজুড়ে এখন বাদাম তোলার ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। চর মহিপুর, চল্লিশার চর, চালাপাক চর এবং লক্ষ্মীটারীর চরসহ বিভিন্ন এলাকার আরও কয়েকটি চরে বাদাম আবাদ হয়েছে।
রংপুর কৃষি বিভাগ জনিয়েছে, জেলায় এ বছর ৩৯০ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। গত বছর হয়েছিল ২৫০ হেক্টরে। জেলায় এখন বারী-৮, চীনা বাদামসহ স্থানীয় জাতের বিভিন্ন বাদাম চাষ হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধদিপ্তরের সহায়তায় জেলায় বাদাম চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশকসহ নানা ধরনরে উপকরণ দেওয়া হচ্ছে বলেও কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক চরের বাদাম চাষি আমিনুর ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলনে, “গতবার আমি ২ একর জমিতে বাদম চাষ করেছি। আমার মোট খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর বাদাম বিক্রি করেছি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায়। আমার প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। এবারও ২ একর জমিতে বাদম চাষ করেছি; জানি না এবার কী হবে। এবার প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।”
ছালাপাক চরের আরেক চাষি আকলিমা বেওয়া বলনে, “গত বছর ১ একর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। এ বছর ১ একরত এক না কম হইবে। তাতে বাদাম চাষ করছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাদাম ভালো আছে। লাভও বেশি হইবে বলে আশা করছি।”
তবে চাষিদের অভিযোগ, বাজারে বাদাম বিক্রির কোনো শেড না থাকায় ৫ হাজার টাকার বাদাম বিক্রি করতে হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। এতে তারা ক্ষতগ্রিস্ত হচ্ছেন। একটি বাজারে শেডের ব্যবস্থা করলে লাভবান হতে পারতেন বলে মনে করেছেন তারা।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের লক্ষ্মীটারী চরের রোস্তম আলী (৬০) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবারে হামরা তো চরের মানুষ, চরেই থাকি, চরেরই হামার বাড়ি-ঘর। আর তোমরা তো বাদামের কথা কয়ছেন। হামি এবার বাদাম চাষ করছি ৩ একর জমিতে। বাদাম তো ভালোই হইছে। সরকার যদি হামার দিকে তাকায় তাহলে ভালোই দাম পামো বাহে। বাদামোত একনা খরচ কম হয়, অন্য আবাদের চেয়ে। তাই বাদাম চাষ করছি। লাভ তো ভালোই হয়।”
কৃষি বিভাগ ও বাদাম চাষিরা জানান, অক্টোবর থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাদামের বীজ লাগানো হয়। জানুয়ারি থেকে এপ্রলি র্পযন্ত সময়ে বাদাম তোলা শুরু হয়। বীজ লাগানোর আগে চাষ দিয়ে মাটি সামান্য নরম করে নিতে হয়; আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। তারপর সারি করে লাগানো হয় বাদাম বীজ।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক বাদাম চাষিকে ১০ কেজি করে বীজ দেওয়া হয়েছে। আর প্রণোদনা হিসেবে ১০০ জন কৃষককে ডিএপি ১০ কেজি, সার ৫ কেজি, বারী-৮ বীজ ১০ কেজি করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তিস্তা নদীর চরের মাটি উর্বর হওয়ায় বেশি সার কিংবা কীটনাশক দিতে হয় না। তিন মাসের মধ্যই বাদাম ঘরে তোলেন চাষিরা। তাই অল্প কষ্টে অধিক লাভে খুশি বাদাম চাষিরা।
“তবে বাদাম বাজারজাতকরণে কিছু সমস্যা রয়েছে। এর ফলে কৃষকরা তেমন লাভবান হতে পারছেন না।”
বাদাম জমি থেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বাজারজাত না করে শুকিয়ে গুদামজাত করে পরে বাজারজাত করা হলে কৃষকরা অধকি লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।