তবে সেটাও একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। যে কারণে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর নতুন করে টিকা নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাহলে এই টিকা কার্যকারিতা বাড়াতে বার বার নিতে হবে নাকি দুবার নিলেই যথেষ্ট? এরকম প্রশ্ন জাগতেই পারে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হলো বিস্তারিত।
টিকা বা ভ্যাকসিন যে কারণে পুরোপুরি কার্যকর নয়
বর্তমান সময়ে টিকা নিয়ে সবচাইতে বড় সমস্যা হলো ভাইরাসের ‘মিউটেশন’য়ের বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা। কার্যক্ষমতা আর কার্যকারিতা টিকার ক্ষেত্রে এক নয়।
ভ্যাকসিনের ভাইরাস দমন করার কার্যক্ষমতা বেশি হলেও বাস্তবে বিভিন্ন কারণে কার্যকারিতা দেখা যায় কম। আবার উল্টোটাও হয়।
অপরদিকে করোনাভাইরাসের বৈশিষ্ট্য ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে যাক বলে ‘মিউটেশন’। ফলে একই টিকার পক্ষে পরিবর্তনশীল ভাইরাসের সঙ্গে তাল মেলানো সম্ভব হচ্ছে না।
ফাইজার’য়ের টিকা কতদিন পর নিতে হয়?
‘ফাইজার’য়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালবার্ট বৌরলা বলেন, “এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসে যে টিকা আছে তা সারাজীবনের জন্য সুরক্ষা দিতে পারবে না। তাই ফাইজার’য়ের টিকা বিবেচনা করলে একজন মানুষকে প্রতিবছর একবার এই টিকা নিতে হবে সুরক্ষিত থাকতে হলে। ‘ক্লিনিকাল ট্রায়াল’য়ে ফাইজার’য়ের টিকার কার্যক্ষমতা দেখা গেছে ৯৫ শতাংশ, তবে বাস্তব প্রেক্ষাপটে চিত্রটা ভিন্ন। ইতোমধ্যেই আমরা তৃতীয় ‘ডোজ’ নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছি, যার মাধ্যমে বর্তমান টিকাকে পরিবর্তনশীল ভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে তোলা যায়। পরবর্তীতে প্রতিবছর একবার এই টিকা নিতে হবে।
মডার্না’র টিকা কতবার নিতে হবে?
এখানেও বক্তব্য একই রকম। মডার্না’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টেফান বানসেল জানুয়ারিতে বলেছিলেন, “সম্ভাবনা প্রবল যে আমাদের ভাইরাসের সঙ্গেই বসবাস করা শিখতে হবে কারণ শিগগিরই তা নির্মূল হচ্ছে না। ভবিষ্যতে ‘প্যানডেমিক’ থেকে পরিস্থিতি ‘এনডেমিক’ পর্যায়ে পৌঁছাবে। সেক্ষেত্রে ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করতে পারবে কম, মারাত্মক রোগাক্রান্ত হওয়া হবে বিরল ঘটনা। সেজন্য হয়ত মানুষকে প্রতি এক কিংবা দুই বছর পর পর টিকার কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য ‘বুস্টার শট’ নিতে হবে।”
ভারতীয় ভ্যাকসিন: কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিন
অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র কোভিশিল্ড’য়ের ‘ক্লিনিকাল ট্রায়াল’য়ে কার্যক্ষমতা ছিল ৮১.৩ শতাংশ। আর ‘কোভ্যাক্সিন’য়ের ৮১ শতাংশ। তবে এই টিকাগুলো কতদিন পর্যন্ত ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেবে তা নিশ্চিত ভাবে আজও জানা যায়নি।
গবেষণা কী বলে?
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইউএনএআইডিএস এবং অক্সফাম’য়ের যৌথ উদ্যোগে সৃষ্টি হওয়া ‘পিপলস’স ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স’য়ের গবেষকদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ বিশ্বাস করেন, বর্তমান টিকাকে আগামী এক বছরের মধ্যেই পরিবর্তন করতে হবে।
এই পরিসংখ্যানে মত দিয়েছেন ২৮টি দেশের মোট ৭৭ জন ‘এপিডেমিওলজিস্ট’, ‘ভাইরোলজিস্ট’ এবং ‘ইনফেকসাস ডিজিজ স্পেশালিস্ট’।
আর তাদের এক তৃতীয়াংশ বিশ্বাস করেন, টিকায় পরিবর্তন আনতে হবে আগামী নয় মাসের মধ্যেই।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, “বিভিন্ন দেশে টিকা সরবরাহের গতি কম হওয়া কারণে ভাইরাস পরিবর্তীত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আর বর্তমান টিকা দিয়ে তা সামাল দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
আরও পড়ুন-
কার্যকর প্রতিষেধক আসলেও মাস্ক পরতেই হবে
টিকা নেওয়ার পরও কোভিড-১৯ পজেটিভ হওয়ার কারণ