ক্যাটাগরি

প্রবাসীর বই: অভিবাসী জীবনে দেশের স্মৃতিচারণ

এ বইটিতে আবহমান গ্রাম বাংলার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনের গল্প বলা হয়েছে। এ গল্পগুলো কোন গতানুগতিক গল্প নয়, গল্পগুলো জীবন সংগ্রামের, গ্রামের আটপৌরে বিনোদনের গল্প।

গ্রামীণ শৈশবের গল্প বলা হয়েছে যেখানে পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলোয় উঠোনে বিছানো শীতল পাটিতে শুয়ে রূপকথার গল্প শুনতে শুনতে একজন শিশু ঘুমিয়ে পরে স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে যায়। গ্রামের মানুষের আটপৌরে সম্বোধনে সিক্ত হয়। গ্রামের শিশিরসিক্ত ঘাসে পা ডুবিয়ে সকালে হাঁটতে বের হয়। মাটির চুলোয় রান্না করতে বসা দাদি নানির চেহারায় চুলোর আগুনের আলো আঁধারিতে খুঁজে ফিরে রূপকথার কোন চরিত্রকে। গরুর গাড়ির ক্যা কু শব্দে খুঁজে পাওয়া যায় কোন অজানা ছন্দ, ঝড় আসলে দলবেঁধে আম কুড়োয়। বৃষ্টির রাতে ছনের চালের ছিদ্র দিয়ে যখন পানি পরে তখন মায়ের আঁচলের তলে শুয়ে শুয়ে বাবা হারিয়ে যায় মৎস্যকন্যাদের দেশে।

পাশাপাশি এসেছে গ্রামের মানুষদের আন্তরিকতার বিষয়টি। গ্রামের মানুষদের দেখলে মনে হয় পুরো গ্রাম যেন এক একটি একান্নবর্তী পরিবার। পাশাপাশি এসেছে গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলোর কথা। দলবেঁধে নৌকাবাইচ দেখতে যাওয়া, পাশের পাড়ায় গিয়ে সপরিবারে পালাগান উপভোগ করা- এসবই একসময় গ্রামীণ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলো। এছাড়া বাংলাদেশের লোকগানে দর্শনের কথাও এসেছে। কুষ্টিয়ার মরমী সাধক লালন সাঁইয়ের জীবন দর্শন কীভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যাচ্ছে সেটাও বলার চেষ্টা করা হয়েছে।

শৈশব পেরিয়ে কৈশোরের মনে রং লাগার দিনগুলোর পাশাপাশি জীবন সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে যাওয়ার গল্প বলা হয়েছে। আর এ সংগ্রামে মানুষই এসে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, কখনও বন্ধু হিসেবে আবার কখনও শিক্ষক হিসেবে। নদী যেমন থেমে থাকে না তেমনি মানুষের জীবনও থেমে থাকে না, যতই প্রতিবন্ধকতা আসুক। এভাবেই নদীর গতিময়তায় এগিয়ে চলেছে জীবন। নদী যেমন তার চলার পথে বাঁক পরিবর্তন করে ঠিক তেমনি একসময়ে গ্রামীণ কিশোর ঢাকা শহরে এসে ঠাঁই নিয়েছে।

এরপর শুরু হয়েছে শহরের গল্প। ঢাকা শহরকে লেখক বলেছেন ‘জাদুর শহর’, কারণ শত কষ্টের পরও মানুষ এ শহরের মায়া কাটিয়ে আর গ্রামে ফিরতে চায় না। জাদুর শহরের মানুষদের যান্ত্রিক জীবনের মধ্যেও প্রাণের স্পন্দনের গল্প এসেছে। সেই জাদুর শহরেই একদিন থিতু হওয়া, সংসার পাতা, সংসারে নতুন সদস্যের আগমন। এরমধ্যেই একসময় সরকারি চাকরিতে যোগদান, বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন ব্যবস্থাকে খুব কাছ থেকে দেখা এবং দেশ ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি জমানো। পাশাপাশি এসেছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধার কথা। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকে সাধারণ মানুষ কীভাবে দেখে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে মূল্যায়ন করে সেটাও কিছুটা বলার চেষ্টা করা হয়েছে।

এ বইয়ের লেখাগুলো লেখকের শৈশব থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া আসার আগ পর্যন্ত জীবনের স্মৃতিচারণ। এটা একটা প্রজন্মের স্মৃতিচারণ হলেও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সেটা হয়ে উঠেছে আমাদের সবারই জীবনযুদ্ধের গল্প। বইটা পড়তে গিয়ে পাঠকের মনে হতে পারে, এটাই তো আমার জীবনের গল্প। অথবা কর্মমুখর দিনের শেষে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় বারান্দায় বসে এ বই পড়তে পড়তে পাঠক কিছুক্ষণের জন্য হলেও শৈশবের দুরন্ত দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারেন।

প্রত্যেকটা গল্প ছোট পরিসরের আলাদা আলাদা অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ফলে পাঠক পড়তে গিয়ে বিরক্ত বা একঘেয়েমিতে ভুগবেন না আশা করা যায়। আর প্রত্যেকটা অনুচ্ছেদেরই আছে একটা করে মৌলিক শিরোনাম, যেটা লেখার বিষয় বস্তুকে পাঠকের মনে আরও ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলবে।

‘প্র প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত এ বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ব্রত রায়। মূল্য পাঁচশ টাকা, পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার ১৯১ ‘আনন্দম’ এর স্টলে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!