লকডাউনের প্রথম দিন সোমবার
দুপুর ১২টা থেকে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত বইমেলা খোলা রাখা হয়। হাতেগোনা দুয়েকজন ক্রেতা-দর্শনার্থীকে
মেলাপ্রাঙ্গণে ঘুরতে দেখা গেলেও অধিকাংশ স্টল-প্যাভিলিয়ন ছিল ক্রেতাশূণ্য।
বেশ কিছু স্টল এদিন বন্ধ
রাখতেও দেখা যায়। অধিকাংশ স্টল-প্যাভিলিয়নে বিক্রয় কর্মী ছিল সীমিত, স্টলের এক পাশে
বই প্রদর্শন করা হলেও অন্যপাশ বন্ধ রাখা হয়।
সংক্রমণ কমাতে লকডাউন দিয়ে
তার মধ্যেই আবার বইমেলা সীমিত সময় খোলা রাখার অনুমতি দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে খোদ প্রকাশকরাই
প্রশ্ন তুললেন।
মেলার আগের দিনগুলোতে তাম্রলিপি
প্রকাশনীর স্টলের সামনে বেশ ভিড় দেখা গেলেও সোমবার সেখানেও ক্রেতার দেখা মেলেনি।
তাম্রলিপির প্রকাশক একে এম
তরিকুল ইসলাম বলেন, “লকডাউনের আজকে প্রথম দিন ছিল, আমরা আসলে বোঝার চেষ্টা করছি। সরকার
যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিশ্চয় চিন্তা-ভাবনা করে নিয়েছে।”
তবে চলন্তিকা প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক
সিজানুর রহমান বলছেন, বইমেলা খোলা রাখার কোনো যুক্তি তিনি দেখছেন না।
“লকডাউনে বইমেলা খোলা রাখা
উচিত হয়নি। সারাদিন একজন ক্রেতাও পেলাম না। গণপরিবহন বন্ধ, মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে
না। এমন অবস্থায় বইমেলা চালু রাখার কোনো মানে হয় না। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটা কাজ।
মানুষ না এলে স্টল খোলা রাখা কী দরকার?”
লকডাউনে বইমেলা খোলার রাখার
বিষয়টিকে ‘সাংঘর্ষিক’ মনে করছেন মুক্তচিন্তা প্রকাশনীর প্রকাশক শিহাবুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
তিনি বলেন, “আজকে একেবারেই ক্রেতা-দর্শনার্থী আসেনি। লকডাউন দিয়ে জনসাধারণকে বলা হচ্ছে,
আপনারা ঘরে থাকুন, অপরদিকে বইমেলা চালু রাখা হয়েছে। বিষয়টা আমার কাছে সাংঘর্ষিক মনে
হচ্ছে। এটা একটা অস্বস্তিকর বিষয়।”
করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত
পরিস্থিতিতে বইমেলা বন্ধ করে দিলে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন পলল প্রকাশনীর
প্রকাশক খান মাহবুবুল আলম।
শেষ পর্যন্ত বইমেলা বন্ধ
করে দিতে হলে প্রকাশকদের আর্থিক প্রণোদনা দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মাহবুবুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে তিনি বলেন, “মেলা খোলা থাকবে না বন্ধ থাকবে- এটা নিয়ে বাংলা একাডেমি প্রকাশকদের
সাথে কোনো আলোচনা করেনি। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দিয়েছে মেলা চলবে, আমরা কন্টিনিউ করছি।
“লোকজন মেলায় না এলে বা মেলা
বন্ধ হলে প্রকাশকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ বই প্রকাশের জন্য সারা বছর অনেক
অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
“মেলায় যদি বেচাকেনা
না হয়, আমরা তো পরের বছর বই প্রকাশে যেতে পারব না। সরকার বিভিন্ন খাতে অনেক প্রণোদনা
দিয়েছে। সৃজনশীল বিষয়েও চাইলে সরকার মোটিভেশন দিতে পারে। মেলা বন্ধ করে দেওয়া হলে ক্ষতিপূরণ
না দিলেও প্রণোদনা দেওয়া উচিত।”
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল
প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মহামারী পরিস্থিতিতে
সরকার যা সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই মানতে হবে। এখানে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
আর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক
হাবীবুল্লাহ সিরাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকাশকরা চেয়েছেন বলেই
আমরা বইমেলা চালু রেখেছি। প্রকাশকরা যদি চান এই লকডাউনে বইমেলা বন্ধ করে দেওয়া হোক,
যদি লিখিতভাবে আমাদের বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন, তাহলে আমরা বিষয়টি সরকারকে জানাতে
পারি। অন্যথায় যতদিন পর্যন্ত সরকার সিদ্ধান্ত না নেবে, ততদিন বইমেলা চলবে।”