সোমবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে সারা দেশে। এই সময় জরুরি সেবা
ও শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও অন্যান্য সবকিছু বন্ধ রাখারা নির্দেশনা রয়েছে।
রংপুর মহানগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়ের পান দোকানি মালেক মিয়া বিডিনিউজ পোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “ভাই আমি তো ছোট্ট একটি খিলিপানের দোকান করে পাঁচ জনের সংসার চালাই। আজ
থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। সারাদিনে মাত্র ২০০ টাকার পান বিক্রি করেছি। তাই দিয়ে মাল
কিনব না খরচ করে সংসার চালাব। আমরা তো গরিব মানুষ। চিন্তা করছি এখন কী করব। কোথায় যাব,
কার কাছে যাব। কেউ তো আমাদের দিকে তাকায় না।”
ছিওবাজার এলাকার রিকশা চালক জহুরুল ইসলাম বলেন, “সকাল থেকে রিকশা চালিয়ে
এখন পর্যন্ত ১০০ টাকা ভাড়া মারতে পাই নাই।
রিকশার জমা দিব কী? আর সংসারের খরচ করব কী?”
নগরীর চিলমন এলাকার অটোচালক আমিনুর রহমান বলেন, “মহাজানকে জমা দিতে হয়
৫০০ টাকা, আর আমি সকাল থেকে বিকাল পযর্ন্ত ভাড়া মারছি ২৫০ টাকা। লকডাউনের কারণে শহরে
লোক নাই। আমাদের তো জমানো টাকা নাই যে এক সপ্তাহ বসে খাব।”
একদিন অটো না চললে পরের দিন পেটে ভাত যায় না বলে আক্ষেপ করেন আমিনুর।
সদর হাসপাতল মার্কেটের পাশের ফুটপাতে বসে সেলাইয়ের কাজ করেন দুলাল মিয়া।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফুটপাতে বসে আর কয় টাকা কামই
করি ভাই। গত বছরের লকডাউনের ঋণ এখনও পরিশোধ করতে পারি নাই। এবারও তো লকডাউন হলো। আমরা
কী করে খাব? আমরা দিন আনি দিন খাওয়া মানুষ। সকাল থেকে বসে আছি এখনও কোনো কাজ পাইনি।”
ফুটপাতের চায়ের দোকানি শামীম মিয়া বলেন, “আমরা দিন কামাই করা লোক। কামাই
না থাকলে খাওয়া জোটে না। এই কয়েকদিন কোনো রকমভাবে সংসার চালিয়েছি। এখন সংসার আর সমিতির
কিস্তি কীভাবে
দেব। একেবারে পথে বসে গেলাম। গতবার কিছু খাবার পাইছি; এবার কে সাহায্য
করবে।”
লকডাউনে শহরে লোকের সমাগম নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “লোক না থাকলে আমরা
কামাই করব কেমনে। এই সময় কারো বাসায় সাহায্য চাওয়ারও উপায় নেই। আমাদের জীবনটা আর পরিবারকে
কীভাবে বাঁচাব। করোনা আমাদের পথে বসিয়ে দিল।”
ছাত্রীনিবাস মালিক শহিদুল বলেন, “অনেকগুলো সিট ফাঁকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও
বন্ধ। এর মধ্যে লকডাউনের ঘোষণা আমাদের জন্য মরার উপর খরার ঘা।”
রংপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি এন্ড মিডিয়া) উত্তম প্রসাদ
পাঠক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনা মোকাবেলায় আমরা নগরবাসীকে কিছু নিয়ম
মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছি।”
করোনা মহামারীর ঊর্ধ্বগতি কমাতে ও জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পুলিশ সদস্যরা
কাজ করছে বলে তিনি জানান।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “ত্রাণ দেওয়া বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার থেকে কোনো ঘোষণাও
আসেনি। কোনো সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই আমরা সেটা করব।”