ক্যাটাগরি

লকডাউনের দ্বিতীয় দিন: বেড়েছে চলাচল, আছে গাছাড়া ভাবও

এক গুচ্ছ সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যেই মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের কষ্ট মেনেই চলাফেরা করেছেন তারা। কোথাও কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষার অভাব যেমন ছিল, তেমনি সামাজিক দূরত্বও মানা হয়নি।

প্রথম দিনের ঢিলেঢালা অবস্থার মতো সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিল অনেকটা ‘গাছাড়া’ ভাব।

নগরী ও শহরের সব সড়কে সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে চলাচল বেড়েছে জনসাধারণের। অলি-গলিতে সব ধরনের দোকানই ছিল খোলা; যেখানে কমবেশি ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের দেখা গেছে।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর গত বছর সাধারণ ছুটির মাধ্যমে সবাইকে দূরে দূরে রাখার চেষ্টা হয়। এবার সপ্তাহব্যাপী ‘লকডাউন’ দিয়ে হঠাৎ বাড়তে থাকা মহামারীর বিস্তৃতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার।

তবে প্রথম দিন থেকেই লকডাউনে ছিল ঢিলেঢালা ভাব। অনেকের মধ্যেই সচেতনতা দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও ব্যবসায়ীরা মার্কেট ও দোকান খোলা রাখতে বিক্ষোভ করেছেন।  দ্বিতীয় দিনের পরিস্থিতিও খুব একটা ভিন্ন ছিল না। বিভিন্ন স্থানে দ্বিতীয় দিনের মত রাস্তায় নেমেছিলেন ব্যবসায়ীরা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সামাল দিতে এক সপ্তাহের ‘লকডাউন’ এর দ্বিতীয় দিন সকালে রাজধানীর কাকরাইল এলাকার সড়কের দৃশ্য। ছবি: সুমন মাহমুদ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সামাল দিতে এক সপ্তাহের ‘লকডাউন’ এর দ্বিতীয় দিন সকালে রাজধানীর কাকরাইল এলাকার সড়কের দৃশ্য। ছবি: সুমন মাহমুদ

দেশব্যাপী এমন চিত্রের মধ্যে বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু এবং ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি নতুন রোগী শনাক্তের তথ্য জানায়। গত এক দিনে দেশে ৭ হাজার ২১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে আরও ৬৬ জনের।

একদিনে শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা মহামারীর এই এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা দিতে অনেককে ভিড় করতে দেখা গেছে।

সার্বিক চিত্র

মঙ্গলবার রাজধানীতে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বেড়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও কোথাও কোথাও যানজটও ছিল। দিনের বিভিন্ন সময়ে নানান এলাকার সড়কে ছিল গাড়ির দীর্ঘ লাইন।

অনেক জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলাফেরা করেছেন নাগরিকরা। বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানাও করেছেন সিটি করপোরেশনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

মঙ্গলবার সকালে রামপুরা, মালিবাগ, কাকরাইল ঘুরে সড়কে আগের দিনের চেয়ে সড়কে গাড়ি ছিল বেশি। কয়েকটি সড়কের ট্রাফিক সিগন্যালে দেখা গেছে যানবাহনের লম্বা লাইন।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যথারীতি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কর্মজীবী মানুষকে। আবার গণপরিবহন চালুর সরকারি সিদ্ধান্তে এ বুধবার অবশ্য এ থেকে মুক্তি মিলবে রাজধানীবাসীর।

মৌচাক, মগবাজার, এলিফ্যান্ট রোডের শপিংমলগুলো বন্ধ থাকলেও অলিগলির দোকান সন্ধ্যা পেরিয়েও খোলা ছিল। অনেক স্থানে ভিড়ও ছিল ছোটোখাটো।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে এক সপ্তাহের লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজার মোড়ে মাস্ক পরতে পথচারীদের সচেতন করছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একজন স্বেচ্ছাসেবক। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে এক সপ্তাহের লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজার মোড়ে মাস্ক পরতে পথচারীদের সচেতন করছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একজন স্বেচ্ছাসেবক। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

শান্তিনগর, মালিবাগ ও রামপুরার কাঁচাবাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অনেক দোকানেই ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ছিল কম। মানা হয়নি অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও। বাজারের আশেপাশে খোলা রয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো।

গণপরিবহন না চলায় রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো কার্যত ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশার ও মোটরসাইকেলের দখলে ছিল।

রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেল সেবার অ্যাপ বন্ধ থাকলেও চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করেছেন অনেকে। রাজধানীর দোলাইরপাড় এলাকার রাইড শেয়ারিং চালক তানভীর হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর মাস ছয়েক আগে চাকুরি হারিয়েছেন তিনি। এখন মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন।

“বাজার সদাই করতে হয়, বাসা ভাড়া দিতে হবে। বাইক না চালালে সংসার চলবে কেমনে,” পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে লকডাউনেও মার্কেট ও শপিংমল খোলা রাখার দাবিতে বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ হয়েছে মঙ্গলবারও।

ঢাকায় দোকান খোলা রাখার দাবিতে মঙ্গলবার গাউছিয়া মার্কেটের বিক্ষোভ করেন দোকানিরা। আগের দিন নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেন। ওইদিন রাস্তায় নেমেছিলেন চট্টগ্রাম নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

একই দাবিতে মঙ্গলবার সিলেটেও বিক্ষোভ হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের শুকরিয়া মার্কেটের সামনে থেকে ‘সিলেটের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীবৃন্দ’ ব্যানারে মিছিল বের করেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর মধুবাগে আসাদুজ্জামান খান কামাল কমিউনিটি সেন্টারে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ব্র্যাক পরিচালিত করোনাভাইরাাসের নমুনা সংগ্রহ বুথে করোনার নমুনা দিতে মানুষের ভিড়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

রাজধানীর মধুবাগে আসাদুজ্জামান খান কামাল কমিউনিটি সেন্টারে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ব্র্যাক পরিচালিত করোনাভাইরাাসের নমুনা সংগ্রহ বুথে করোনার নমুনা দিতে মানুষের ভিড়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

লকডাউনে সবাইকে সরকারি বিধিনিষেধ মানাতে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, র‌্যাব ও পুলিশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বিভিন্ন অংকের জরিমানা করা হয়েছে অনেককে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে, ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। এ সময় মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৬২ হাজার ৭৯০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

এমন পরিস্থিতিতে বুধবার থেকে সব নগরীতে গণপরিবহন চলবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার বিকেলে নিজের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন সেবা চালু রাখা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

 “বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন সেবা চালু থাকবে। তবে বাইরের কোনো পরিবহন শহরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং বেরও হতে পারবে না,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।