বৃহস্পতিবার একযোগে সারাদেশে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া শুরু হয়। পাশাপাশি নিবন্ধিতদের প্রথম ডোজের টিকাও দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান শুরুর পর এই পর্যন্ত ৫৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৩ জন টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। তাদেরই এখন দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হল।
দ্বিতীয় ডোজ টিকার জন্য এসএমএস পাঠানো শুরু হয়েছে সোমবার থেকেই। এসএমএসে দেওয়া তারিখ অনুযায়ী আগের টিকাদান কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে হবে।
বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড। এই টিকার দুটি ডোজ নিতে হয়।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সকাল থেকেই টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। এখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি বয়স্কদের অনেকেও টিকা নিতে এসেছেন। তবে বয়স্করা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন।
দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, তিনি ৮ ফেব্রুয়ারি টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন।
“তখন ভিড় তেমন ছিল না, এবার ভিড় একটু বেশি দেখতে পাচ্ছি। প্রথমবার একটু ব্যথা পেয়েছিলাম। এবার তাও নেই। আর অন্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, দশ মিনিট বসে থেকে চলে এসেছি।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তেমন ভিড় ছিল না সকালের দিকে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে ভিড়ও কিছুটা বেড়েছে।
দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক দিলদার হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার কাছে তেমন কোনো পার্থক্য চোখে পড়েনি।
“সকাল সোয়া নয়টার সময় টিকা নিলাম। ৭ তারিখে প্রথমদিনে ফ্রন্টলাইনাররা বেশি ছিল। এ কারণে আজও তারাই বেশি এসেছেন। তবে এর বাইরেও কিছু মানুষ ছিল। আজ অনেকে প্রথম ডোজ টিকা নিচ্ছে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসা মানুষের মোটামুটি ভিড় ছিল। তবে এদিন মোটামুটি শৃঙ্খলা মেনে টিকা নিতে দেখা গেছে মানুষকে।
এখানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও সুলতানা কামালসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা নিয়েছেন।
জুনায়েদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের বলেন, আইসিটি বিভাগ ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ দেওয়ার চিন্তা করছে।
“আমরা দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরে আমাদের ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট অটোমেটিক জেনারেট হবে। আমরা একটা ভ্যাকসিন পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারেও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। বিদেশ যেতে যাদের কোভিডমুক্ত সনদ প্রয়োজন, তাদের এটা কাজে লাগবে।”
করোনাভাইরাস: টিকার দ্বিতীয় ডোজ শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার
দেশে কোভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হল বৃহস্পতিবার। ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে সকালে তার প্রস্তুতিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান শুরু হয়েছিল। এই পর্যন্ত ৫৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৩ জন কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। তারা এখন নেবেন দ্বিতীয় বা শেষ ডোজ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোরেও সকাল থেকে টিকাদান শুরু হয়েছে।
তবে এখানে ভিড় তুলনামূলক কম। এই হাসপাতালে টিকা নিতে আসা মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী।
পঙ্গু হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার মোসাম্মাৎ রহিমা বেগম দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর আমার কোনো সমস্যা হয়নি। এবারও তেমন কোনো সমস্যা বোধ করছি না।”
টিকা নেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শারফুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, টিকা নেওয়ায় বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে।
“এখনও ১৩৯টি দেশ করোনাভাইরাসের টিকা পায় নাই। আমরা অলরেডি ৬ কোটি ডোজ টিকার আশ্বাস পেয়েছি। সেই হিসাবে আমি মনে করি, আমরা পিছিয়ে থাকব না।”
এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, প্রধান নির্বাচন কেএম নুরুল হুদাও করোনাভাইরাসের টিকা নেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যারা টিকা নেবেন তাদের কাছে এসএমএস যাওয়া শুরু হয়েছে। ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি এর আগে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারির যারা পরীক্ষামূলক টিকা নিয়েছিলেন, তাদেরও অনেকে দ্বিতীয় ডোজ নেবেন। কেউ কোনো কারণে এসএমএস না পেলে কেন্দ্রে গিয়ে টিকা দিতে পারবেন।”
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত এই টিকার দুটি ডোজ দুই মাসের ব্যবধানে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে।
এক প্রশ্নের উত্তরে শামসুল হক বলেন, “প্রথম ডোজের জন্য যারা নিবন্ধন করেছেন, তাদের অনেকে বিভিন্ন কারণে টিকা নিতে পারেন নাই। তারা যদি আসেন, আমরা তাদের টিকা দিয়ে দেব। আর প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হবে কিনা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসে নাই। নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকাও দেওয়া হবে।”
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে বহু প্রতীক্ষিত টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।
পরদিন ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের পরীক্ষামূলকভাবে এ টিকা দেওয়া হয়। সেখানে কোনো জটিলতা দেখা না দেওয়ায় ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সারা দেশে গণ টিকাদান।
সেদিন ৩১ হাজার ১৬০ জনকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। প্রথমদিন টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে ২৩ হাজার ৮৫৭ জন পুরুষ এবং ৭ হাজার ৩০৩ জন নারী ছিলেন।
পরদিন ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ৪৬ হাজার ৫০৯ জন টিকা নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৫ হাজার ৮৪৩ জন পুরুষ, ১০ হাজার ৬৬৬ জন নারী।
গণ টিকাদান শুরুর পর এ পর্যন্ত সারা দেশে ৫৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৩ জন টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৬৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৯ জন।
ঢাকাসহ সারা দেশে ১ হাজার ১৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে ঢাকার ৫০টি কেন্দ্র রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে এখন ৪৬ লাখের কিছু বেশি টিকা মজুদ আছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে গত ৫ নভেম্বর চুক্তি করে বাংলাদেশ।
ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। সে অনুযায়ী জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ দেশে এলেও বিপুল চাহিদা আর বিশ্বজুড়ে টিকার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে ফেব্রুয়ারির চালানে বাংলাদেশ ২০ লাখ ডোজ হাতে পায়।
এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দুই দফায় ৩২ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ।