ক্যাটাগরি

পাঁচ বছরের মেয়ের ভাষ্যে মা হত্যার জট খুলল

গত ১১ ডিসেম্বরে নিহত রোজিনা আক্তার দুলালীর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালানো হয়েছিল। পরে ময়না তদন্তে হত্যার কথা উঠে আসলেও পুলিশ হাতে ছিল না অপরাধীকে শনাক্তের কোনো সূত্র।

অবশেষে সেই ঘটনার জট খুলেছে নিহতের পাঁচ বছরের মেয়ে।

নিহত রোজিনা আক্তার দুলালী সৈয়দপুরের ঢেলাপীর আবাসন গ্রামের দুলাল হোসেনের মেয়ে।

গ্রেপ্তার নিহতের স্বামী ইউনুস আলী নীলফামারী জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের কাদিখোল গ্রামের নাজির উদ্দিনের ছেলে।

নীলফামারী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদ উন নবী জানান, আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় শিশুটির দেওয়া জবানবন্দীর প্রেক্ষিতে রোজিনার স্বামী ইউনুসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মাহমুদ উন নবী বলেন, ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার গত ২৩ মার্চ নিহতের বাবা দুলাল হোসেন বাদী হয়ে নীলফামারী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

“হত্যাকাণ্ডটি ছিল সম্পূর্ণ ক্লুলেস। পরে বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে এবং একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী পাঁচ বছরের মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উম্মোচিত হতে থাকে। ওই সূত্র ধরে রোজিনার স্বামীকে গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়।”

তিনি জানান, পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকারের পর গত বুধবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সহদেব চন্দ্র রায়ের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ইউসুফ।

এরপর বিচারক আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা খুলে বলতে গিয়ে পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদ বলেন, ২০০৬ সালে ইউনুস আলী প্রথমে রাশেদা বেগমকে বিয়ে করেন। পরে রাশেদার অজ্ঞাতে ২০১৬ সালে তালাকপ্রাপ্ত এক মেয়ের জননী রোজিনা আক্তার দুলালীকে (২৫) দ্বিতীয় বিয়ে করেন ইউনুস।

শিশু মেয়েটিসহ রোজিনাকে নিয়ে সংগলশী ইউনিয়নের শিমুলতলী গ্রামের এক ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা। একই বাসার অপর এক কক্ষে ভাড়া থাকতেন দুলালীর ছোট ভাই রাকিবুল।

তবে দুই সংসার পাতার কারণে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকত। গত ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কলহের জেরে ইউনুস গলা চেপে ধরলে জ্ঞান হারান রোজিনা। পরে স্ত্রীর গলায় ওড়না পেচিয়ে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন ইউনুস।

এরপর শিশু মেয়েকে ভেতর থেকে দরজা আটকে চুপ করে শুয়ে থাকার নির্দেশ দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান ইউনুস।

পরে ফিরে এসে রোজিনার নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করেন ইউনুস। এরপর শ্যালক রাকিবুলকে জানায় রোজিনা ফ্যানের সাথে ঝুলছে।

রাকিবুল পাশের ঘরের সিলিং বেয়ে ইউনুসের ঘরে ঢুকে গলায় ফাঁস দেওয়া বোনকে নামিয়ে সৈয়দপুর হাসপাতালে নিয়ে যান।

রোজিনার মৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যের ভিত্তিতে সৈয়দপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। তবে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে রোজিনা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন।