এশিয়ার এ দেশটি ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতি ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি- বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের এমন সতর্কবার্তার পর কিমের এ আহ্বান এল।
বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির এক সম্মেলনে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে গত শতকের শেষের দশকে দেশটিতে দেখা দেওয়া ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির সঙ্গেও তুলনা করেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় উত্তর কোরিয়া তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় চীনের সঙ্গে বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।
পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কারণে জাতিসংঘের দেওয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যই ছিল দেশটির ‘লাইফলাইন’।
“কঠিন সময়, সংকট এ ধরনের কথা বলা কিমের জন্য অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এবার তার ভাষা বেশ কড়া, এটাই পার্থক্য। গত বছর অক্টোবরে এক ভাষণে তিনি উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতির পরিবর্তনে নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
“কিন্তু এবার স্পষ্ট করেই তিনি নতুন ‘আরডিইয়াস মার্চ’ সামলানোর সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেছেন, এ ধরনের কিছু তিনি আগে কখনোই বলেননি,” বলেছেন এনকে নিউজের উত্তর কোরীয় বিশেষজ্ঞ কলিন জোয়ারকো।
উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তারা সাধারণত ‘আরডিইয়াস মার্চ’ টার্ম দিয়ে ১৯৯০’র দশকে দেশটিতে হওয়া ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পররর্তী ওই সময়ে দেশটিতে বৈদেশিক সহযোগিতার পরিমাণ কমে যায়। সেবারের দুর্ভিক্ষ উত্তর কোরিয়ায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
কয়েকদিন আগেও কিম উত্তর কোরিয়া এখন ‘সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি’ ও ‘অভূতপূর্ব সব চ্যালেঞ্জের’ মুখে পড়েছে বলে সতর্ক করেছিলেন।
বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির নাগরিকদের যে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে- বেশ কয়েকমাস ধরে এ সংক্রান্ত সতর্কবার্তা পাওয়া যাচ্ছিল; বিভিন্ন প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ার অধিকাংশ এলাকা বিশেষ করে চীন সীমান্তবর্তী শহরগুলোর বাসিন্দাদের অবস্থা ‘খুব খারাপ’ বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। সীমান্তকে কেন্দ্র করে চোরাচালানই এসব এলাকার অসংখ্য মানুষের আয়ের উৎস ছিল।
দেশটির গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান খাদ্য ভুট্টার দামও সমানে ওঠানামা করছে। কখনো কখনো এক কেজি ভুট্টার দাম কারও কারও পুরো মাসের বেতনের চেয়েও বেশি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
“অনেক অনেক ভিক্ষুক। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর অনেকেই ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে। সাবান, টুথপেস্ট, ব্যাটারি নেই,” উত্তর কোরিয়ার অনামা নাগরিকদের কাছ থেকে তথ্য দিয়ে করা সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক লিনা ইয়োন।
উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টার টমাস ওজেয়া কুইনটানা গত মাসে এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, মারাত্মক খাদ্য সংকটের কারণে দেশটিতে এর মধ্যেই অপুষ্টি ও ক্ষুধা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে।
“ক্ষুধায় মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরিবার সহযোগিতা করতে না পারায় ভিক্ষাবৃত্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে,” বলেছেন তিনি।
ভয়াবহ এ খাদ্য ঘাটতির মধ্যে দেশটিতে কোনো ত্রাণ সহযোগিতা পৌঁছেছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।