ভবিষ্যতের সেই প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ, ভারতসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোর অংশগ্রহণও আশা করছেন বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত কেরি।
শুক্রবার সংক্ষিপ্ত সময়ের ঢাকা সফরকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডাকা জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন বিষয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় আসেন জন কেরি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভালনারেবল ফোরাম প্রেসিডেন্সির বিশেষ দূত আবুল কালাম আজদসহ অন্যান্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কেরি ও মোমেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে কেরি সংবাদ সম্মেলনের শুরু করেন।
“যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অনুরোধে আমি এখানে এসেছি । কারণ যুক্তরাষ্ট্র আবার প্যারিস এগ্রিমেন্টের বাস্তবায়নের নেতৃত্বে ফিরে এসেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, আমাদের নাগরিক এবং দেশগুলোকে সুরক্ষার জন্য এসব প্রচেষ্টা। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা কোনো একক দেশ সমাধান করতে পারবে না। সঙ্কট যে আছে এ নিয়ে কোনো দেশের কোনো সন্দেহ নেই।”
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন দুর্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে যুকরাষ্ট্রের সাবকে এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরে মানব ইতিহাসের কঠিন দিন, কঠিন সপ্তাহ, মাসগুলোর মুখোমুখি হয়েছি আমরা। বিশ্বব্যাপী মানবসৃষ্ট দুর্যোগ দেখেছি। ভাইরাস, খরা, সমৃদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হওয়া থেকে শুরু করে অনেক কিছু দেখছি।
“ইতোমধ্যে জলবায়ুর কারণে মানুষ বাস্তচ্যুত হয়ে অন্যত্র যাওয়া শুরু করেছে। বিজ্ঞানের শিক্ষা থেকে আমরা জানতে পেরেছি সবাইকে এক সাথে কাজে নামতে হবে।”
আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল বাইডেনের আহ্বানে লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট অনুষ্ঠিত হবে।
ওই সামিটে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই সফর শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।
এই সম্মেলনের পাশাপাশি নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ২৬তম সম্মেলন বা ‘কপ২৬’ নিয়ে আলোচনার জন্য সফর শুরু করেছেন বাইডেনের বিশেষ এই দূত।
১ এপ্রিল থেকে শুরু সফরে ইতোমধ্যে আবুধাবি ও নয়াদিল্লীতে গিয়েছেন তিনি। শেষ গন্তব্য ঢাকা সফর শেষে শুক্রবারই দেশের পথ ধরার কথা তার।
“এসব কারণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বড় অর্থনীতির দেশ ও অংশীদারদের নিয়ে সামিট আহ্বান করেছেন। আলোচনার মাধ্যমে যাতে পরিস্থিতি মোকাবেলার রাস্তাগুলো তৈরি করা যায়, জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলার প্রযুক্তিগুলো সবার মাঝে পৌঁছে দেওয়া যায়। বাংলাদেশ এই সামিটে অংশ নেবে জেনে আমি খুবই আনন্দিত। প্রযুক্তি, গবেষণা, উন্নয়ন, আর্থিক বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার জন্য এই সম্মেলন খুবই কার্যকর হবে,” বলেন কেরি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু ইস্যু থেকে পিছিয়ে পড়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বাইডেন বলেন, ভবিষ্যতে এই খাতে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
“প্যারিস ছিল সূচনা। আমরা জানি আমাদের আরও সামনে যেতে হবে। আমি দুঃখিত যে আমাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু ইস্যুতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমার বাংলাদেশ, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই সফরের কারণ হচ্ছে এসব দেশের জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলার প্রুতিশ্রুতি রয়েছে। ভবিষ্যতের ক্লিন এনার্জি গড়ে তুলতে তাদের সাথে আমাদের অংশীদারিত্ব রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক দূত জন কেরিকে শুক্রবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, তার স্ত্রী সেলিনা মোমেন এবং ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার।
“দূষণ মুক্ত বাতাস, রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব কম হওয়া, ক্যান্সার নির্মূল করা, লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নিওএনার্জির জন্য প্রযুক্তির সংযুক্তি- এসবের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডের পরিকল্পনা হচ্ছে দুই ট্রিলিয়ন ডলারের। এর মাধ্যমে ২০৩৫ সালের মধ্যে আমাদের বিদ্যুৎ খাত জিরো কার্বনে ফিরে আসবে, ৫ লাখ ইলেক্ট্রিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হবে। ফলে জনগণ ইলেক্ট্রিক কার কিনতে পারবে, সাচ্ছন্দে চার্জ দিতে এবং নিজের কর্মস্থলে যেতে পারবে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্লাইমেট সামিটে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বৈশ্বয়িক উষ্ণতা কমানোর কৌশলগুলো প্রয়োগের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বাংলাদেশ কী কী উদ্যোগ নিচ্ছে সেগুলো তাকে জানানো হয়েছে।
“বাংলাদেশ জাতীয় জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা, ১৪ হাজার ঝূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন, জলবায়ুর জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা, মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্লান, প্লানেটারি ইমার্জেন্সি রেজুলেশন, সুন্দরবন সুরক্ষা পদক্ষেপসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান সরকার।“
যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিষয়ক নীতি সাফল্য পাবে আশা করে মোমেন বলেন, জন কেরির জীবনে অনেক সাফল্যের গল্প আছে। তিনি যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সাফল্য এসেছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি হয়েছে তার দৃঢ়তার কারণে। ভিয়েতনাম যুদ্ধেও তার অনেক সাফল্য রয়েছে। ভিয়েতনামের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টায়ও তিনি সফল হয়েছেন।
“এখন আমরা আশা করবো প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিশেষ দূত হিসাবে জন কেরি আগামী বছর থেকে ক্লাইমেট ফান্ডে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্জন করতে পারবেন। এটা হবে তার আরেক সাফল্য। এই ফান্ডের ৫০ শতাংশ এডাপটেশন এবং ৫০ শতাংশ মিটিগেশনের কাজে ব্যয় করা হবে বলে আশা রাখি।”
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বন ও পাহাড় ধ্বংস করছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগে কেরি বা যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।