বিবিসি লিখেছে, এমন পরিস্থিতিতে চলমান টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে; প্রশ্ন উঠেছে, দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে টিকার পর্যাপ্ত মজুদ আছে তো।
সবচেয়ে বিপদে আছে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল রাজ্য মহারাষ্ট্র। সেদেশে নতুনভাবে ভাইরাসে আক্রান্তদের অর্ধেকের বেশি এই রাজ্যের বাসিন্দা। সংক্রমণ বেড়ে চলায় সেখানে টিকাদান কর্মসূচি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।
মহারাষ্ট্রের সরকার শুক্রবার জানিয়েছে, এ মুহূর্তে তাদের হাতে ১৫ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে যা দিয়ে তিন দিন পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়া যাবে। রাজ্যের রাজধানী মুম্বাইয়ে এবং কোলাপুর, সাংলি ও সাতারা জেলার অনেক এলাকায় টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ তোপ সাংবাদিকদের বলেন, “তিন দিনের মধ্যে টিকার চালান না এলে টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে আমরা বাধ্য হব।”
তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, তাদের কাছে পর্যাপ্ত টিকার মজুদ রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বৃহস্পতিবার বলেন, “টিকার ঘাটতি নিয়ে যেসব বক্তব্য আসছে, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।”
ভারতের কাছে মজুদ ও শিগগিরই হাতে পাওয়ার মতো মিলে মোট ৪ কোটি ৩০ লাখের বেশি ডোজ টিকা আছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি উল্টো অভিযোগ করেন, “বিভিন্ন রাজ্য সরকার তাদের দুর্বল টিকাদান কর্মসূচির দায় এড়ানোর জন্যই এসব অযুহাত দিচ্ছে।”
তবে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এহেন দাবি সম্ভবত পুরোপুরি সত্য নয় বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দিল্লিভিত্তিক একটি সংস্থা অবজারভার রিসার্চার ফাউন্ডেশন-এর কর্মকর্তা উমেন সি কুরিয়ানের ভাষ্যে করোনাভাইরাসের টিকার ঘাটতি হয়তো অনেক রাজ্যেই একটি বাস্তবতা, যেখানে স্থানীয় সরকার দ্রুততার সঙ্গেই টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পেরেছে।
উমেন সি কুরিয়ান বিবিসিকে বলেন, “এই ঘাটতি দেখা দেওয়ার একটি কারণ হতে পারে ভারতীয় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার হিসাব ও গত চার মাসে তাদের বাস্তবে উৎপাদনের পরিমাণের মধ্যে অসামঞ্জস্য।”
ভারত ১৬ জানুয়ারি বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে এবং তাদের লক্ষ্য জুলাইয়ের মধ্যে ২৫ কোটি জনগণকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া।
এ পর্যন্ত তারা নিজ জনগোষ্ঠীকে ৯ কোটি ডোজ টিকা দিতে পেরেছে, যার মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড এবং ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক উদ্ভাবিত কোভ্যাক্সিন- দুটোই রয়েছে। সেদেশে দিনে গড়ে ৩০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
টিকার চালান সময়মতো সরবরাহ করতে না পারায় কিছুদিন আগে কোভিশিল্ড উৎপাদনে চুক্তিবদ্ধ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটকে (এসআইআই) আইনি নোটিস পাঠায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত টিকাটি বাজারজাত করছে ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা। তারা সেরামকে দিয়ে টিকা তৈরি করাচ্ছে।
সেরামের প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার প্রতিষ্ঠান মাসে ৬ থেকে সাড়ে ৬ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করে চলেছেন।
তারা এ পর্যন্ত ১০ কোটি ডোজ টিকা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে দিয়েছেন এবং ৬ কোটি ডোজ টিকা অন্য দেশে রপ্তানি করেছেন।
টিকা উৎপাদনের বিচারে ভারত বিশ্বে পরাশক্তি। বিশ্বের ৬০ শতাংশ টিকা সেখানে উৎপাদিত হয় এবং আন্তর্জাতিক বড় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ধডজনের কারখানা ভারতেই অবস্থিত। এদের মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী।
সার্স-কোভ টু এর মতো এমন পরিবর্তনশীল একটি ভাইরাস প্রতিরোধে প্রাপ্তবয়স্কের জন্য বিপুল পরিমাণ টিকা উৎপাদন এক অভূতপূর্ব সংকটের সৃষ্টি করেছে। এক বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভারতে টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা দরকার। তবে এটা এখনও স্পষ্ট নয় যে ভারতের পর্যাপ্ত টিকার মজুদ এবং সক্ষমতা বাড়ানোর সামর্থ্য আছে কিনা।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন “ভ্যাকসিন কূটনীতি” চালাতে গিয়ে বিভিন্ন দেশে উপহার হিসেবে টিকা পাঠানোর ভারত সরকারের পদক্ষেপ আদৌ ঠিক ছিলো কিনা।
তবে এটা স্পষ্ট যে, ভারতে টিকার ঘাটতি বিশ্বজুড়েই প্রভাব ফেলবে।
এ মুহূর্তে ভারতের কাছে খুব বেশি বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি নতুন টিকা – সম্ভবত রাশিয়ার উদ্ভাবিত স্পুটনিক ফাইভ জুন নাগাদ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের টিকা উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান নোভাভ্যাক্স-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সেরাম ইনস্টিটিউট কোভোভ্যাক্স নামে আরেকটি টিকা উৎপাদন করতে যাচ্ছে। তবে সেটিও সেপ্টেম্বরের আগে হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই উল্লেখ করেছে বিবিসি।