যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জলবায়ু সংক্রান্ত বিশেষ দূত জন কেরি শুক্রবার বিকালে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
২২-২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় জলবায়ু বিষয়ক ভার্চুয়াল লিডার্স সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণের জন্য শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানান। অন্ততপক্ষে ৪০টি দেশ এই সম্মেলনে অংশ নেবে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে জন কেরি বলেন, বাংলাদেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্র কোভিড-১৯ এর টিকা দিতে পারবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি টিকা উদ্বৃত্ত হবে।
কেরি দূষণের ঝুঁকি কমাতে জলবিদ্যুতের পাশাপাশি সৌর বিদ্যুৎ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিকল্প শক্তির উৎস ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলো অন্যদের সঙ্গে অংশীদার হয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্র সবুজ জলবায়ু তহবিলের এক মিলিয়ন ডলার ছাড়াও দুই মিলিয়ন ডলার দেবে বলে জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকারও প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত।
প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা (কার্বন) নিঃসরণকারী নয় এবং নিঃসরণে যাদের অবদান নগণ্য, তারাও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে তিনি বলেছেন যে, তার দেশের উন্নয়নের জন্য জ্বালানি প্রয়োজন।
ছবি: পিআইডি
“প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারত, ভুটান এবং নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপক্ষীয় উপায়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, দেশে ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন সৌর সংযোগ রয়েছে, সৌর শক্তি সেচের জন্য প্রয়োজনীয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।”
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার সরকার জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।
পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে সারাদেশে প্রায় ১১ দশমিক ৫ মিলিয়ন গাছের চারা রোপণ এবং তার দলের নেতাকর্মীরা ১০ মিলিয়ন অন্য গাছও লাগিয়েছেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী জন কেরিকে বঙ্গবন্ধু রচিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ (ইংরেজি সংস্করণ) এবং ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন’, ‘বাংলাদেশ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সিরিজের বই উপহার দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার এই সময় উপস্থিত ছিলেন।
ছবি: পিআইডি
বিকাল পৌনে ছয়টার দিকে দেশের পথে রওনা হন কেরি। বিমান বন্দরে তাকে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
দেশের পথে রওনা হওয়ার আগে জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠকেও অংশ নেন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিশেষ দূত কেরি। রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারের বাসভবনে এ আয়োজন ছিল বলে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডাকা জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন বিষয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াদিল্লি থেকে ঢাকায় আসেন জন কেরি।
দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভালনারেবল ফোরাম প্রেসিডেন্সির বিশেষ দূত আবুল কালাম আজদসহ অন্যান্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেরি। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলন হয়।