ক্যাটাগরি

‘লকডাউন’: দোকান-পাট খুললেও ক্রেতা সমাগম নেই তেমন

পহেলা বৈশাখ ও রমজান-ঈদকে ঘিরে বাজারে আবার প্রাণ ফিরে আসবে বলে সংক্রমণের মধ্যেও প্রত্যাশা করছেন দোকান মালিকরা। তবে শপিংমল-দোকানপাটে তেমন ক্রেতা সমাগম নেই, দোকানদাররা বসে আছেন।

সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মালিবাগের মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিংমল, শান্তিনগরের টুইন টাওয়ার্স কনকর্ড শপিং, কর্ণফুলি গার্ডেন সিটি, পল্টনের চায়না টাউন, পলওয়েল সুপার মার্কেটসহ গুলিস্তানের মার্কেট ৯টা দিকে খু্লেছে।

শপিংমলগুলোর প্রধান ফটকে কর্মীরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে; মাস্ক ছাড়া প্রবেশাধিকার নেই বলে মাইকে জানানো হচ্ছে।

রাজধানীর নিউ মার্কেটে শুক্রবার দুপুরে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। নতুন লকডাউনের মধ্যে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে ‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি’ প্রতিপালনসাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

রাজধানীর নিউ মার্কেটে শুক্রবার দুপুরে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। নতুন লকডাউনের মধ্যে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে ‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি’ প্রতিপালনসাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

মৌচাক মার্কেটের সামনে কিছুক্ষণ পর পর বলা হচ্ছে, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, মুখে মাস্ক পড়ুন। কেউ গাদাগাদি করে দোকানে প্রবেশ করবেন না। আপনার অসচেতনতার জন্য করোনা সংক্রামণ আঘাত হানতে পারে। দয়া করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজকে রক্ষা করুন, অন্যকেও রক্ষা করতে সহযোগিতা করুন।”

ফরচুন শপিংমলের দোকানদার হাফিজ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চারদিন পর দোকান খু্লেছি। বুঝতেই পারেন ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। কোনো ব্যবসা নেই। কীভাবে মাস চলবে জানি না?”

নয়া পল্টনে গাজী ভবনের সামনে ‘গ্রামীণ ইউনিকলো’ দোকানে বৈশাখে নানা রঙে পাঞ্জাবী, পায়জমা ও ফতুয়া সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

গতকাল সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসাপেক্ষে শুক্রবার থেকে ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২ পর্যন্ত সারা দেশে শপিংমল, দোকান-পাট, হোটেল-রেস্তারাঁওসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।

অফিস-আদালত-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক-বীমা খোলা থাকায় অফিসমুখী মানুষজনের দুর্ভোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদিন বুধবার থেকে সরকার সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন সেবা চালু করার সিদ্ধান্ত হয়।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নিউ মার্কেটে ক্রেতাদের সমাগম। নতুন লকডাউনের মধ্যে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে ‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি’ প্রতিপালনসাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নিউ মার্কেটে ক্রেতাদের সমাগম। নতুন লকডাউনের মধ্যে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে ‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি’ প্রতিপালনসাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

‘লকডাউনে’ শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়ে কর্ণফুলী সুপার মার্কেটের এক দোকানদার মোমিনুর রহমান বলেন, শপিং মলগুলোতে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে দোকান নিতে হয়।

“গত বছর থেকে করোনা সংক্রমণে আমাদের আর্থিক ক্ষতির হিসাব দিয়ে শেষ করা যাবে না। এভাবে ক্ষতি হতে থাকলে আমাদেরকে পথে বসতে হবে।”

তিনি বলেন, “সরকারের উচিত জনগণ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানে সেজন্য কড়াকড়ি করা। সব কিছু চলছে, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে রাখলে অর্থনীতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা আপনিই বলুন।”

ঢাকার নিউ মার্কেট, গাউসিয়া, মিরপুর, গুলিস্তান, বঙ্গবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গত কয়েকদিন ধরে শপিংমল-দোকানপাট খুলে দেয়ার জন্য বিক্ষোভ করে।

এরকম প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘লকডাউনের’ মধ্যে দোকানপাট ও শপিংমল ৮ ঘন্টার জন্য খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানায়।

মালিবাগ মোড়ে ফরচুন শপিংমলের জুতার দোকানের সেলসম্যান আবুল মিয়া বলেন, “আমাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। গত বছরের দুইটা ঈদে করোনার কারণে কোনো ব্যবসা হয়নি। এবারো যদি এমনটা হয় আমরা যাব কোথায়?

“দোকান বন্ধ থাকলে মালিক বেতন দেয় না। বলে কিনা ব্যবসা নাই –পয়সা দেবো কোত্থেকে? যাক, খুশির খবর দোকান খুলেছে। আশা করছি, এবার রোজার ঈদের আমরা আলোর মুখ দেখব।”

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নিউ মার্কেটে ক্রেতাদের সমাগম। নতুন লকডাউনের মধ্যে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে ‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি’ প্রতিপালনসাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নিউ মার্কেটে ক্রেতাদের সমাগম। নতুন লকডাউনের মধ্যে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে ‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি’ প্রতিপালনসাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

মৌচাকের কাছে এক দোকান থেকে নিজের বাচ্চার জন্য পায়জামা কিনতে এসেছেন ফৌজিয়া তামান্না। তিনি বলেন, “কয়েকদিন মার্কেট বন্ধ থাকায় অসুবিধা হয়েছে। দোকান-পাট খুলেছে ভালো লাগছে। বাচ্চার পায়জাম ছিঁড়ে গেছে। সেজন্য মার্কেটে এসেছি।”

শুক্রবার সকালে বিভিন্ন শপিংমলে গিয়ে দেখা গেলো ক্রেতা নেই, দোকানদাররা বসে নিজেরা নিজেরা আলাপচারিতা করছেন।

পলওয়েল মার্কেটের দোকানদার হাবিবুল্লাহ বলেন, “শুক্রবার বলে ক্রেতা কম হবে। তারপরও শান্তি যে দোকান খুলতে পেরেছি। আমার দোকানে তিনজন সেলসম্যান। তারা প্রতিদিন টেলিফোন করে বলে কবে দোকান খুলব?

“বাসায় তো এভাবে ভালোও লাগে না। দোকান খোলা থাকলে ক্রেতা আসবেই। শুক্রবার সকালে কাস্টমার এমনিতেই কম থাকে, বিকালে কাস্টমার ইনশাল্লাহ আসবে।”