শুক্রবার যুক্তরাজ্যের রানির বাসভবন বাকিংহাম প্যালেস ৯৯ বছর বয়সী প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
এক প্রতিবেদন ফিলিপের মৃত্যুতে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শোকবার্তার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসি বলেছে, প্রিন্স ফিলিপের নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতার পাশাপাশি রানীর প্রতি একনিষ্ঠতার প্রশংসা করেছে বিভিন্ন রাষ্ট্র। ইউরোপীয় রাজপরিবারগুলোর পাশাপাশি কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোও প্রিন্স ফিলিপের অতুলনীয় জনসেবার জন্য তাকে স্মরণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, দারুণ উদ্যমী এক প্রাণ ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ, জীবনের ৯৯টি বছরে তিনি কখনোই থেমে যাননি।
জীবিত অন্যান্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও এডিনবরার ডিউকের প্রয়াণে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
পোপ ফ্রন্সিস ‘বিয়ে ও পরিবারের প্রতি একনিষ্ঠ’ থাকার জন্য প্রিন্স ফিলিপের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। রোমান ক্যাথলিক গির্জার এই প্রধান ‘শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অগ্রগতির ক্ষেত্রে’ প্রিন্সের অঙ্গীকারের কথাও উল্লেখ করেছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রানি এলিজাবেথের প্রতি সমাবেদনা জানিয়ে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন।
ইউরোপের বিভিন্ন রাজপরিবারের সাথে আত্মীয়তা ছিলো প্রিন্স ফিলিপের, যাদের অনেকেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন ফিলিপকে। ‘ডিয়ার আন্ট লিলিবেট’ শিরোনামে রানী এলিজাবেথকে প্রিয় আংকেল ফিলিপের মৃত্যতে শোকবার্তা জানিয়েছেন স্পেনের রাজা ও রানী। তাদের পাশাপাশি সুইডেনের রাজা কার্ল গুসতাও ফিলিপকে সম্মান জানিয়েছে।
সুইডেন রাজপরিবারের মুখপাত্র মারগারিয়েতা বিবিসিকে জানান, প্রিন্স ফিলিপ ও রাজা গুসতা একত্রে জাহাজ চালিয়ে একবার ইংল্যান্ডে যান আর সেই যাত্রায় তাদের মধ্যে তৈরি হয় ‘মধুর এক বন্ধুত্ব’।
নেদারল্যান্ডের রাজপরিবার তাদের শোকবার্তায় ফিলিপের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তার প্রাণবন্ত আচরণের কথা স্মরণ করে।
বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ জানান, তিনি ও রাণী মাথিল্দ তাদের প্রাণবন্ত ও সাবলীল সাক্ষাতগুলো মন ভরে স্মরণ করবেন।
ইউরোপ ছাড়াও কমনওয়েলথের ৫৪টি দেশ প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে শোক ও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছে।
সারাজীবন রাণী এলিজাবেথের পাশে থেকে তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্যে প্রিন্স ফিলিপকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশটির রাজধানী ক্যানবেরার জাতীয় সংসদের পতাকা অর্ধনর্মিত রাখা হয় ও ৪১ বার তোপধ্বনি দিয়ে তার প্রতি সম্মান জানানো হয়। ।
নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা অর্ডান ডিউক প্রদত্ত হিলারি অ্যাওয়ার্ড কীভাবে কিশোর ও তরুণদেরকে আরও দুরদর্শী হতে উৎসাহিত করেছে তার প্রশংসা করে জানান, রোববার রাজধানী ওয়েলিংটনে ৪০ মিনিটের একটি স্মরণসভায় ৪১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে প্রিন্স ফিলিপকে সম্মান জানানো হবে ।
ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, অবিরতভাবে আমাদের রাণীর জীবনে ভরসার একটা স্থান হয়ে থাকার জন্য প্রিন্স ফিলিপকে আমরা সবসময় স্মরণ করব।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, সমাজসেবার জন্যে ফিলিপের নাম অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানান, পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্যে তার দেশ ফিলিপের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
কেনিয়া ও তানজানিয়ার প্রেসিডেন্টসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রধানরাও শোক প্রকাশ করেছেন। কমনওয়েলথ থেকে বের হয়ে যাওয়া জিম্বাবুয়েও প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, প্রিন্স ফিলিপকে স্মরণ করবেন তিনি আর ফিলিপের প্রয়াত মা ইজরায়েলেই শায়িত আছেন।
প্রিন্স ফিলিপের জীবদ্দশায় তিনি ১৮ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পেয়েছেন । সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বারাক ওবামা প্রিন্স ফিলিপকে স্মরণ করেন তার নৈতিকতার জন্য। ওবামা প্রশংসা করেছেন ফিলিপের রসবোধের।
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল বলেন, ফিলিপ কথা বলতেন অকপটে এবং নিজ কর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিলেন।
এদিকে ফ্রান্স, ইতালি ও আয়ারল্যান্ডে ডিউক অব এডিনবরার সম্মানে ৪১ বার তোপধ্বনি ও শোকসভার আয়োজন করা হচ্ছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বৃটিশ রাজপরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানান এবং বলেন, যুক্তরাজ্যের জনগণের জন্য আজ একটি শোকের দিন।
আরও পড়ুন: