স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পল্লীর বাসিন্দারা জানিয়েছেন তাদের ‘বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ার’ কথা।
বানিশান্তা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুদেপ কুমার রায় বলেন, এ পল্লীর প্রধান সমস্যা নদীভাঙন। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এখানকার ঘরবাড়ি। প্রতিবছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস পল্লীর বাসিন্দাদের নাজেহাল করছে। তারপর করোনাভাইরাস আতঙ্কে পল্লীতে লোক না আসায় অনেকটা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা।
“করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় পল্লীর বাসিন্দাদের মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। না মানলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচারণা চালানো হয়।”
গত বছর তাদের সরকারি ত্রাণ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি। এখানকার স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ভাল নয় বলে তিনি জানান।
পল্লীর সভানেত্রী রাজিয়া বেগম জানান, তার বয়স ৪৮ বছর।
তিনি বলেন, সরকারি বিধিনিষেধের ঘোষণায় কেউ আসে না এখানে। যে কারণে অনেকটা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এখানকার সবাই। অনেকে ঘর ভাড়া দিতে পারছে না।
“খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই তাদের অসম্ভব হয়ে পড়ছে। দুর্গম এলাকা বলে এখানকার মেয়েদের ভাল চিকিৎসাও জোটে না। কেউ অসুস্থ হলে বাইরে নেওয়া দুষ্কর। অনেকে যৌন, চর্ম রোগে ভুগছে। ডাক্তার দেখাতে পারছে না।”
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তারা ভ্যাকসিন নিতে চান বলে জানান।
পল্লীর বাসিন্দা লাইজু আক্তার (২২) একই সমস্যার কথা জানান।
তাছাড়া তিনি বলেন, “সামনের দিনগুলো নিয়ে ভয়ে আছি। ১২ বছরের মেয়ে আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে অনাহারে থাকার ভয়।
“দুই হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয়। নিজে বাঁচব নাকি পরিবারকে টাকা পাঠাব তা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয় সব সময়। আয় কমেছে। কিন্তু খরচ কমাব কিভাবে? আমাদের তো কেউ ভাল চোখে দেখে না। আমি অসুস্থ। ডাক্তার দেখাতি পারছি না। কিন্তু আমরাও তো মানুষ। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নিতেও আমাদের কেউ খবর নেয় না। আমাদের ত্রাণ দরকার। তাছাড়া আর বাঁচার উপায় নেই।”
বানীশান্তার এসব নারী, তাদের পরিবার ও শিশুদের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
দাকোপের ইউএনও মিন্টু বিশ্বাস বলেন, তাদের জন্য তিনতলা আবাসিক ভবন নির্মাণ ও তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থায় শিক্ষাদানের কাজ শুরু হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাসিন্দাদের জীবনমান বদলে যাবে।
“মায়েদের থেকে শিশুদের আলাদা রাখতে এই আবাসিক ভবনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে মায়েরা শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। শিশুরা কখনও যৌনপল্লীতে যেতে পারবে না।”
যৌনপল্লীর পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুদের জীবনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তাদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
খুলনার ডিসি হেলাল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৬৪ শিশুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ও আমতলা বানিশান্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি হাইস্কুলে পড়া আরও ৪৩ শিশুর জন্যও আমতলা বানিশান্তা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
“যৌনপল্লীতে জন্ম নেওয়া মেয়েশিশুরা বংশপরম্পরায় এ পেশায় যেত। আর ছেলেশিশুরা দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে অপরাধ কর্মে জড়াত। সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।”
বানীশান্তার নদীভাঙন সমস্যা দীর্ঘদিনের। নদীভাঙন থেকে এই এলাকার মানুষকে রক্ষার জন্য কাজ হলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জানান ইউএনও মিন্টু বিশ্বাস।
পল্লী সম্পর্কে চেয়ারম্যান সুদেপ বলেন, ১৯৫৪ সালে মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে শহরতলির কুমারখালী এলাকায় যৌনপল্লীটি শুরু হলেও পরে দাকোপ উপজেলার বানীশান্তা এলাকায় নেওয়া হয়। বর্তমানে এখানে ৩৭টি ঘরে শিশু-নারী-পুরুষ মিলিয়ে আড়াই শ বাসিন্দার বাস। তাদের মধ্যে যৌনকর্মী ৯২ জন।