পাইকারদের অপেক্ষায়
থেকে, ফোনে যোগাযোগ করেও খেজুর বিক্রির আদেশ না পাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়ছে কপালে।
আগের বছরগুলোর এই সময়ের কথা ভেবে আফসোসও করছেন
কেউ কেউ। তখন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত
ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের হাঁকডাকে সরগরম থাকতো পুরো এলাকা।
বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন
আসতেন দেড় থেকে দুই হাজার পাইকার।
এখন দুইশ
জনও আসছেন না।
মহামারীর এই সময়ে বিশেষ করে লকডাউনে বাদামতলী
থেকে খেজুর সংগ্রহকারী পাইকারদের দেখা না পাওয়ায় দু:শ্চিন্তায় রয়েছেন আড়তদারদের বেশিরভাগই।
মিষ্টি খেজুরের বড় মজুদ এখন তাদের কাছে যেন বি:স্বাদ ঠেকছে; ‘তেতো’ মনে হচ্ছে।
তাদের আশংকা, করোনাভাইরাস মহামারীতে বাদামতলীর
আড়তের খেজুর ব্যবসায়
এবার শেষ পর্যন্ত হয়ত লোকসানই গুনতে হবে।
বাদামতলীর মাওলা এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার
মাওলা মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অবস্থা খুব খারাপ, মাথা একেবারেই নষ্ট। কোনো কাস্টমার নাই। অথচ এই সময়ে খাওয়ার টাইম পাওয়া যেত না। লকডাউনে
খবরে কোনো ব্যবসায়ী আসছেন না।
শেষ পর্যন্ত না বড় লোকসান হয়ে যায়।”
শুধু তারা নন, আমদানিকারকরাও চিন্তিত। তারা বলছেন, আড়তদাররা খেজুর না নেওয়ায়
তারাও বেশ ক্ষতির মুখে পড়বেন।
তবে পুরো বাজার পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা
বোঝা যাবে আরও দুই তিন পর। রোজা শুরুর এক থেকে দুই দিন আগেই মূলত খুচরা বাজারে খেজুরের
কেনাকাটা হয়। এখন পর্যন্ত খুচরায় দামে গত কয়েকদিন ধরে হেরফের নেই বলে জানিয়েছেন রাজধানীর
বেশ কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা।
আড়তদাররা জানান, খেজুরের
মূল ব্যবসা
রমজান শুরুর
এক মাস আগে থেকে
রোজার প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। দেশের বিভিন্ন এলাকা
থেকে খেজুর কিনতে আসেন
পাইকাররা। এবার এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।
মূলত বছরজুড়ে খেজুর বিক্রির বড় অংশ হয়ে থাকে
রমজানকে ঘিরে। প্রতি বছর প্রায় ৬০-৬৫ হাজার টন খেজুর আমদানি হয়। শুধু রমাজানেই চাহিদা থাকে ৪৫-৫০হাজার টন।
শুক্রবার ও শনিবার বাদামতলীতে গিয়ে দেখা গেছে, আড়তে তেমন ভীড় নেই, অনেকেই কর্মচারিদের নিয়ে অবসর সময় পার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ২৫ থেকে ৩০ রকমের খেজুর
আমদানি হয়। এর মধ্যে ১০ কেজি প্যাকেটের
দাবাস পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে এক
হাজার ৮০০ টাকায়, নাগাল এক
হাজার ৩০০ টাকা,
ছায়ান ৯৫০ টাকা, মাগরুম
সাড়ে তিন হাজার টাকা। পাঁচ কেজির প্যাকেটে
তিউনেশিয়া ১
হাজার ৫০ টাকা, ম্যাকজেল ৪ হাজার ২০০ টাকা, মরিয়ম ৩ হাজার ১০০ টাকা, আজোয়া ৪ হাজার ৮০০ টাকা। বারারি নামের খেজুরের রয়েছে ছয় কেজির প্যাকেট, যেটির
পাইকারি দর
২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা।
বাংলাদেশ ফ্রেশ
ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক
ও সাথী ফ্রুটসের
কর্ণধার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “দেশে
৬০ থেকে ৬৫ হাজার টন খেজুর আমদানি হয়। এ বছর রমজানের জন্য
মোট প্রায় ৫৫ হাজার টনের মতো আমদানি হয়েছে।”
এর বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে।
বেশির ভাগ আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সামান্য কিছু দামি খেজুর
উড়োজাহাজে আসে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “রমজানে
চাহিদা বেশি থাকার কথা কিন্তু লকডাউনের কারণে
ব্যবসা ডাউন। লকডাউনের খবরে
পাইকাররা আড়তদারদের কাছে আসছেন না।
তাইলে আড়তদাররাও আগের মত নেবেন না। এরপরো
অনেকে যা নিয়েছে তাই বিক্রি হচ্ছে না।
হয়ত লোকসানে পড়তে হবে।“
বাদামতলী খেজুর মার্কেটের মেসার্স মৌসুমী ট্রেডার্সের আড়তদার হাজী তারেক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি বছর শুধু রমজানের আগের এক সপ্তাহে ৪-৫ কোটি টাকার খেজুর বিক্রি হয়। এবছর লকডাউনে বিপদে পড়ে
গেছি। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসে যাবো।”
বিক্রি না হলে অবশিষ্ট খেজুর নিয়ে বেশ
বিপাকে পড়তে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ বছরের খেজুর এ বছরই শেষ করতে হবে। আগামী বছরে ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করবে। তাছাড়া আমরাও কোনভাবে এই খেজুর আগামি বছরের জন্য রাখতে পারবো না।”
আল্লার দান ফ্রুট এজেন্সির
ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুহুল আমিন
বলেন, “বিক্রি একেবারে কম। লকডাউনের কারণে জেলার ব্যবসায়ীরা না
আসায় আড়তদাররাও
আমাদের কাছ থেকে নিচ্ছেন না।”