২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ এর এপ্রিলে শুরু
হয় প্রকল্পটি। প্রথম প্রাক্কলনে ৯৪৪ কোটি ৯ লাখ ৭ হাজার টাকা ব্যয় ধরে বুড়িগঙ্গা নদী
পুনরুদ্ধার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার
সিস্টেম প্রকল্পের প্রধান কাজ ছিল ১৬২ কিলোমিটার নদী খনন।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, নদীর
প্রায় ৯০ কিলোমিটার খননের পর দেখা যায় বন্যায় সেই অংশ আবার ভরাট হয়ে গেছে।
এ থেকে প্রতিকার পেতে সিদ্ধান্তের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের
ডিসেম্বর করা হয়। তারপর থেকে চলে সমীক্ষা। আর বাড়তে থাকে দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ
ও বাজেট।
এদিকে, প্রতি বছর ভাঙনের কবলে নদী পাড়ের মানুষরা হারাচ্ছে বসতবাড়ি। চলতি
বছরের বন্যার আগে কাজ শেষ না হলে আবারও ঘরবাড়ি হারানোর শঙ্কায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী
উপজেলার যমুনা আর ধলেশ্বরী নদীর সংযোগস্থলের দুই পাড়ের মানুষ।
কালিহাতী গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার বলেন,
যমুনা নদীতে প্রতিদিন পানি বাড়ছে। চলতি বছরেও প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার ভাঙনের আশঙ্কা
রয়েছে।
দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, কাজ শেষ না করলে
গোহালিয়াবাড়ি ও আমার ইউনিয়নের নদী পাড়ের শতাধিক পরিবারকে বর্ষা মৌসুমে ভিটেমাটি হারাতে
হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা জানাচ্ছেন, উজান থেকে পানির সাথে আসা
পলি, বালু, ‘সিল্ট লিভ’ ধলেশ্বরীর প্রবেশ পথে এসে পড়ে। এতে নদীর উৎসমুখ বন্ধ হওয়া রোধে
এবং নিউ ধলেশ্বরী নদীতে পলি প্রবেশ ঠেকাতে নদীর উৎসমুখে (অফটেক) একটি ‘২২-ভেন্ট রেগুলেটর’
নির্মাণের প্রস্তাবনা ছিল।
তবে পানি বিশেষজ্ঞরা নদীর মুখে রেগুলেটর নির্মাণের বিরোধিতা করায় বিকল্প
পদ্ধতি খুঁজতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
পুনরায় সমীক্ষার জন্য পরামর্শক সংস্থা নিয়োগ করা হয়। তারা তিনটি বিকল্প
প্রস্তাব দেন। তার মধ্যে রয়েছে-নিউ ধলেশ্বরীর উৎসমুখে ২২ ভেন্ট রেগুলেটর এবং ফিশপাস
নির্মাণ, উৎসমুখ বন্ধ করে পাম্প হাউজ ও পাম্প
ইন্সটলের মাধ্যমে যমুনা নদী থেকে পানি নিউ ধলেশ্বরীতে ছাড়া এবং গাইড বাঁধের মাধ্যমে
উৎসমুখ স্থিতিশীল রেখে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং সেডিমেন্ট বেসিন নির্মাণ করে তাতে
পলি থিতিয়ে তবে স্বচ্ছা পানি পংলী নদীতে প্রবাহিত করা। তাদের শেষ প্রস্তাবটি গ্রহণ
করে এ প্রকল্প পরিকল্পনা সংশোধন করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে এক হাজার ১২৫ দশমিক ৫৯
কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
এদিকে, জমি অধিগ্রহণে সময় বেশি লাগায় মেয়াদ আবার বৃদ্ধি করে ২০২১ সালের
জুন মাস করা হয়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, রক্ষণাবেক্ষণসহ ড্রেজিং শেষ করতে আরও
এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়েছে।
তারা জানান, ২০২০ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইল অংশের ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার নদী
খননের কাজের ধলেশ্বরী এবং পুংলি নদীর ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার ড্রেজিং শেষ হয়। এতে টাঙ্গাইল
অংশের ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে
প্রকল্পের কয়েকটি ধাপে কাজ চলছে। কাজ প্রায় শেষের দিকে।
“খননের মাধ্যমে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করে বুড়িগঙ্গাকে দুষণমুক্ত করা, বুড়িগঙ্গা-তুরাগ
রুটে সারা বছর নৌ চলাচলের উপযোগী করাসহ সেচ ও মৎস্য উন্নয়নের জন্যে এ প্রকল্প হাতে
নিয়েছে সরকার।”
এদিকে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের বন্যায়
উপজেলার নদী পাড় ঘেঁষা ১ হাজার ৩১টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ফলে চলতি বছরের বন্যায় ভাঙনের শঙ্কায় উৎকণ্ঠা দিন কাটাচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ।