রোববার সকালে হেফাজতে ইসলামের ‘কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের বিশেষ জরুরি সভার’ পর বিকেলে হাটহাজারীতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অবস্থান জানান।
মামুনুলের বিষয়ে সংগঠনের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে বাবুনগরী বলেন, “আমাদের আজকে কোনো ব্যক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয় নাই এবং কাউকে প্রত্যাহারের কোনো কথা উঠে নাই। অব্যাহতি দেওয়ার কোনো আলোচনা উঠে নাই।”
মামুনুলের ওই ঘটনায় যেসব ‘অডিও প্রকাশ পাচ্ছে’ তা নিয়ে এক সাংবাদিক সংগঠনের বক্তব্য জানতে চান।
জবাবে হেফাজত আমির বলেন, “এক জওয়াব, এটা উনার ব্যক্তিগত ব্যপার। ব্যস খালাস।”
৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে হেফাজত সমর্থক ও মাদ্রাসার ছাত্ররা সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে তাকে নিয়ে যায়।
ঘটনার পর তা গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার পায়। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে মামুনুলের একটি অডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
অডিওর কথোপকথনের বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবারের ফেইসবুক লাইভে এসে মামুনুল বলেন, স্ত্রীকে খুশি করতে ‘প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে সত্যকে গোপন করার অবকাশ রয়েছে’।
এ ঘটনাকে ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করে মামুনুল এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকিও দেন।
‘কমান্ড ছাড়া ভাঙচুর করেছে’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় আক্রমণ করে ভাঙচুর চালায় হেফাজতকর্মীরা।
সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা সদর ভূমি অফিসে ভাঙচুর চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়। চট্টগ্রাম ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজত।
ওই প্রসঙ্গ টেনে রোববার জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, “যাদেরকে অনর্থক গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে জামিনে মুক্ত দিতে হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে মিটিং মিছিল শান্তিপূর্ণ হরতাল এগুলো বৈধ। এগুলো করলে যে গুলি করতে হবে এমন কোনো কথা নাই।
“তবে ভাঙচুর- এটা অবৈধ হারাম। আমরা ভাঙচুরের পক্ষে নই। জ্বালাও পোড়াওয়ের পক্ষে নই। আমরা শান্তিপ্রিয়। সন্ত্রাস প্রিয় নই। আমরা সন্ত্রাসী, জঙ্গি ইত্যাদি নই। জ্বালাও পোড়া ভাঙচুর এটা আমরা নিষেধ করি ছাত্রদেরকে। এবার যারা করছে কিছু আমাদের কমান্ড ছাড়া, আমাদের কোনো কর্মসূচি ছাড়া করছে। তাদের উপর আমরাও ক্ষিপ্ত। কিন্তু হয়ে গেছে। মানুষ মরে গেছে, কী করবেন।”
এ বিষয়ে করণীয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, “থানার পুলিশ যদি এলোপাতাড়ি গুলি করে ছাত্রদেরকে বা কাউকে জনগণকে। তখন তো ছাত্রও কন্ট্রোল করা যাবে না। আর জনগণ যদি তাদের সাথে মিশে আমরা কীভাবে কন্ট্রোল করব? এটা তো যে গুলি করছে তার দোষ।
“সেজন্য আমরা বলতেছি, এভাবে হয়রানি করবেন না। এলাকায় আবার উস্কানি সৃষ্টি হয়ে যাবে। আমরা আর কিছু করতে পারব না।”
মাদ্রাসায় পুলিশ-র্যাব দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে হেফাজত আমির বলেন, “এসে বলতেছে ছাত্র কয়জন, শিক্ষক কয়জন, আয়ের উৎস কী। এসমস্ত এগুলো আগেও দুবার করেছে। এগুলো হয়রানি করে। আমাদের আয়ের উৎস – জনগণের টাকা। জনগণের টাকায় মাদ্রাসাগুলো চলে।
“এগুলো সরকারি মাদ্রাসা নয়। সরকারি কোনো দান অনুদান আমরা গ্রহণও করব না। সরকারের সাথে আমাদের কোনো যুদ্ধ নেই। সরকার সরকারের অবস্থানে কাজ করুক। আমরা আমাদের অবস্থানে কাজ করি। সরকারের পতন হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য নয়।”
বাবুনগরী বলেন, “বারবার বলেছি মাননীয় সরকার আপনি আরও একশ বছর রাজত্ব করুন। আমার কোনো আপত্তি নেই। আরও দুইশ বছর থাকুন। কিন্তু ইসলামকে মাইনাস করিয়া এই দেশ চলতে পারবে না।”
সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে বাবুনগরী বলেন, “আমার নামেও ১৪টা মামলা আছে, ১৭টা ছিল। তিনটায় জামিন নিয়েছি। মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে হবে। ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।”
সভার বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনার অজুহাতে দেশের ঐতিহ্যবাহী কওমী মাদরাসা বন্ধ করার ষড়যন্ত্র দেশের তৌহিদী জনতা মেনে নেবে না। পবিত্র মাহে রমজানে হেফজখানা, নূরানী ও মক্তব চালু রাখতে হবে। মসজিদে সুন্নাহ মোতাবেক নামাজ, তারাবীহ ও ইতিকাফ চলবে। লকডাউনের নামে শরীয়ত বিরোধী কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করা যাবে না।
সভায় ২৯ মে হাটহাজারী মাদ্রাসায় জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়।
বেলা ১১ টা থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে ওই সভা হয়।
হেফাজতের নায়েবে আমীর মাওলানা তাজুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল আওয়াল, মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা শোআইব জমীরী, মাওলানা ওমর মেখলী, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরীস, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী সেখানে ছিলেন।