তারা বলছেন, কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরা গ্রামে ফিরতে গিয়ে উল্টো সারাদেশে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে।
‘কঠোর লকডাউন’ শুরুর তিন দিন আগে রোববার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে কারখানা খোলা রাখার দাবি জানায় তারা।
বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ আরও কয়েকটি মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা এই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে রোগী ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কারণে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর ‘লকডাউনের’ পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, এক সপ্তাহ জরুরি সেবার প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর সব কিছুই বন্ধ থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, “গত বছর সাধারণ ছুটি ও পরবর্তীতে দুই ঈদে শ্রমিকদের আবাসস্থল ত্যাগ করে গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা উপেক্ষা করা যায় না। লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক শহর ছাড়তে পারেন। এতে দেশব্যাপী সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
“এই অবস্থায় বস্ত্র ও পোশাক খাত ও সহযোগী খাত লকডাউনের আওতাধীন রাখা হলে দেশব্যাপী সংক্রমণের বিস্তারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে লকডাউন শেষে এসব শ্রমিক কর্মস্থলে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও দেখা দেবে অনিশ্চয়তা।”
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে পোশাক কারখানাও বন্ধ হয়েছিল। এর মধ্যে এপ্রিলের শুরুতে কারখানা খোলার খবরে হাজার হাজার শ্রমিক ঢাকার পথে রওনা হয়।
বাস-ট্রেন না চলায় এসব শ্রমিক হেঁটেই পাড়ি দেয় মাইলের পর মাইল পথ। ঢাকায় ফিরে কারখানা বন্ধ দেখে আবার ফিরেও যায়। কিছু দিন পর কারখানা খুললে আবার এসে কাজে যোগ দেয় এই সব শ্রমিক।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর কেন্দ্রিক তৈরি পোশাক শিল্পে ৪০ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করে। তখন শ্রমিকের এই যাতায়াত সংক্রমণ ছড়াতে ভূমিকা রেখেছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এবার মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর সীমিত পরিসরে যে ‘লকডাউন’ চলছে, তার আওতামুক্ত রাখা হয় দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পকে।
লকডাউন: পথের ভোগান্তি মেনে কাজে শ্রমিকরা
পোশাক শিল্প মালিকদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম।
আসন্ন কঠোর ‘লকডাউনেও’ পোশাক শিল্পকে আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে শিল্প মালিকরা বলেন, উন্নত বিশ্বসহ প্রতিযোগী দেশগুলোতেও রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো ‘লকডাউনের’ আওতামুক্ত।
কারখানা বন্ধ হলে দেশের রপ্তানিতে ‘মারাত্মক নেতিবাচক’ প্রভাব পড়বে দাবি করে সালাম বলেন, “আমাদেরকে ক্রয়াদেশগুলো অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। সেই অনুযায়ী উৎপাদন ও জাহাজীকরণ পূর্ব নির্ধারিত থাকে।
“তাই এই খাতগুলোতে লকডাউন কার্যকর হলে নতুন করে ক্রয়াদেশ বাতিলসহ নানা বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে। সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট, কনটেইনার জট ও অন্যান্য বিপত্তি যুক্ত হবে। পাশাপাশি প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ বাজার হারাবে।”
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।
মহিউদ্দিন দাবি করেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে পোশাক শিল্পে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম।
তিনি বলেন, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৫০০০ নমুনা পরীক্ষা করে ৭০৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা গেছে। পোশাক কারখানা মালিক ও কর্মকর্তা পর্যায়ের দুএকজনের মৃত্যু হলেও শ্রমিক পর্যায়ে কারও মৃত্যুর খবর তাদের জানা নেই।
মহামারীকালে সংক্রমণ ঠেকাতে সচেতনতা গড়ে তোলার উপর জোর দেন মহিউদ্দিন।
“শ্রমিকরা যতক্ষণ কারখানার অভ্যন্তরে থাকে ততক্ষণ তারা স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে পালন করতে পারে। কারখানার বাইরের পরিস্থিতি কী সেটা সবারই জানা। মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন হতে হবে।”