দেশটিতে আফ্রিকান ধরনের বিস্তার খুবই সীমিত পর্যায়ে রয়েছে; তাছাড়া গবেষণাটি অন্য বিশেষজ্ঞদের দিয়ে যাচাই বা পিয়ার রিভউও করা হয়নি বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
শনিবার এ গবেষণাটির ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে ভ্যাকসিনের একটি বা দুটি ডোজ নেওয়ার পর ১৪ বা তার বেশি দিন অতিবাহিত হওয়া ৪০০ কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে টিকা নেননি এমন সমসংখ্যক আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্যের তুলনা করা হয়েছে। তুলনার সময় বয়স, জেন্ডার ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও মিলিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসরায়েলের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ক্ল্যালিতের এ গবেষণায় যে কোভিড আক্রান্তদের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশের দেহে করোনাভাইরাসের আফ্রিকান ধরনটি পাওয়া যায়।
দেখা গেছে, যে রোগীরা টিকার দুটি ডোজই নিয়েছেন তাদের মধ্যে ধরনটির বিস্তারের হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ; অথচ যারা টিকাই নেননি তাদের মধ্যে এই হার প্রায় ৮ গুণ কম, মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
ফাইজারের টিকা যে করোনাভাইরাসের আদি রূপ ও যুক্তরাজ্যে শনাক্ত ধরনের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কম কার্যকর, এই ফলাফলই সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।
ইসরায়েলে করোনাভাইরাসের অন্য সব ধরনের চেয়ে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত ধরনের দাপটই সবচেয়ে বেশি।
“টিকা নেননি এমন মানুষদের সঙ্গে তুলনায় ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এমন মানুষদের মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকান ধরনটির সংক্রমণের হার বেশি দেখেছি। এর অর্থ হচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি কিছুটা হলেও ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ভেঙে ফেলতে পারে,” বলেছেন তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের আদি স্টার্ন।
গবেষকরা অবশ্য তাদের এই পর্যালোচনার ফলকে এখনি বিবেচনায় নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক করেছেন। কেননা, ইসরায়েলে তুলনামূলক বিরল হওয়ায় গবেষণায় আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত খুব অল্প সংখ্যক মানুষকে পাওয়া গেছে।
করোনাভাইরাসের কোনো একটি নির্দিষ্ট ধরনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের সামগ্রিক কার্যকারিতা যাচাই করাও গবেষণার লক্ষ্য ছিল না। এ গবেষণায় কেবল কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপরই নজর দেওয়া হয়েছে, সামগ্রিক সংক্রমণ হারের ওপর নয়।
ইসরায়েলের এ গবেষণা বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফাইজার ও বায়োএনটেকের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানদুটি গত ১ এপ্রিল কোভিড-১৯ প্রতিরোধে তাদের টিকা ৯১ শতাংশ কার্যকর বলে জানিয়েছিল।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্ল্যালিতেরে এ গবেষণার ফল উদ্বেগ বাড়ালেও করোনাভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকান ধরনটির বিস্তার যে তুলনামূলক অনেক কম, তা স্বস্তিদায়ক, বলেছেন স্টার্ন।
যুক্তরাজ্যের ধরনটিই সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটিকে ‘আটকে দিয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি যদি টিকার প্রতিরোধ ভেঙেও ফেলতে পারে, তাও এটি জনসাধারণের মধ্যে খুব বেশি ছড়াচ্ছে না।”
ইসরায়েলের জনসংখ্যা ৯৩ লাখের মতো; এর প্রায় ৫৩ শতাংশ এরই মধ্যে ফাইজারের দুটি ডোজ পেয়েছে; দেশটির জনগণের প্রায় এক তৃতীয়াংশেরই বয়স ১৬ বছরের নিচে। যার অর্থ হচ্ছে এরা কোভিড-১৯ এর টিকা পাওয়ার উপযুক্ত নন।
দেশটিতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সংক্রমণ ও দৈনিক শনাক্তের হার নামতে দেখা যাচ্ছে; হাসপাতালে ভর্তি ও গুরুতর অসুস্থের সংখ্যাও কমে এসেছে।