২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কোম্পানিটির ৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা করপরবর্তী মুনাফা (পিএটি) হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটরটি রোববার চলতি হিসাব বছরের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে এই চিত্র উঠে এসেছে।
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবাসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রথম প্রান্তিকে রবির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) বেড়ে ৭ পয়সা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪ পয়সা।
এই সময়ে শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নগদ প্রবাহও (এওসিএফপিএস) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৬৮ পয়সায়, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮৭ পয়সা। তবে শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) কমেছে। এই সময়ে রবির এনএভি হয়েছে ১২ টাকা ৬৬ পয়সা, যা আগে ছিল ১৩ টাকা ৯০ পয়সা।
প্রথম প্রান্তিকে নতুন ১০ লাখ গ্রাহক যোগ হয়ে বছরের রবির সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ১৯ লাখে। মোট গ্রাহকের ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ বর্তমানে অপারেটরটির ইন্টারনেট গ্রাহক।
রোববার ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই আর্থিক প্রতিবেদন তুলে ধরে রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল আয়ের উপর ২ শতাংশ ন্যূনতম করের প্রভাবে মুনাফা প্রত্যাশিত হারে বাড়েনি।
৪.৫ জি সেবায় রবির সাফল্যের কথা উল্লেখ করে রবি সিইও বলেন, “দেশের প্রথম অপারেটর হিসেবে সকল নেটওয়ার্ক সাইটগুলোতে ৪.৫জি প্রযুক্তি স্থাপন করতে পেরে আমরা গর্বিত। আমাদের মোট গ্রাহকের ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে রবির আয়ের পরিমাণ ১ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি এবং গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ভয়েস সেবা থেকে রবির রাজস্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে যা ভয়েস কল করার ক্ষেত্রে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর আগ্রাসী ভূমিকারই প্রতিফলন।
অন্যদিকে ডাটা সেবায় রাজস্ব গত প্রান্তিকের তুলনায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা যা ওই প্রান্তিকের মোট রাজস্বের ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
কোম্পানিটি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মূলধনী বিনিয়োগ করেছে ১৫০ দশমিক ৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত রবি’র নেটওয়ার্কের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫০২টিতে, যার শতভাগই ফোরজি সাইট।
আগের বছরের তুলনায় শেয়ারপ্রতি ৭০০ শতাংশের বেশি মুনাফা হলেও গতবছর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি রবি। এর পেছনে ‘প্রতিশ্রুত ২ শতাংশ ন্যূনতম টার্নওভার কর প্রত্যাহার’ না হওয়াকে যুক্তি দেখায় রবি।
রবির দাবি, ন্যূনতম টার্নওভার কর প্রত্যাহার না হওয়ায় ২০২০ সালে কোম্পানির কার্যকর করভার বেড়ে ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে, যার ফলে তাদের প্রকৃত নিট মুনাফার পরিমাণ অনেক কমেছে। তাই কোনো লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি।
তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের জন্য বিনিয়োগকারীদের ৩ শতাংশ হারে (প্রতিটি ১০ টাকার শেয়ারে ৩০ পয়সা) অন্তবর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশের প্রস্তাব দিয়েছে রবির পরিচালনা পর্ষদ।
গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় রবির ২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তোলা হবে বলে।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এক নজরে রবির প্রথম প্রান্তিক ২০২১ (জানুয়ারি-মার্চ)
>> সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ১৯ লাখ।
>> ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৬৭ লাখ, যা মোট গ্রাহকের ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ।
>> মোট আয়ের পরিমাণ ১ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা যা গত প্রান্তিকের তুলনায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
>> ৪১ শতাংশ মার্জিনসহ ইবিআইটিডিএ ৮১১ দশমিক ৭ কোটি টাকা, যা গত প্রান্তিকের তুলনায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
>> মূলধনী বিনিয়োগ ১৫০ দশমিক ৬ কোটি টাকা।
>> কর পরবর্তী মুনাফা (পিএটি) ৩৪ দশমিক ৩ কোটি টাকা।
>> রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা চলতি প্রান্তিকে রবির অর্জিত আয়ের ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন