রোববার
সকালে জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম মোল্লা।
গত সোমবার
সন্ধ্যায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিধিনিষেধ কার্যকর করার সময় ‘গুজব ছড়িয়ে’ সালথার ফুকরা
বাজারে একদল লোক পুলিশের উপর হামলা চালায়।
পরে
তারা উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার
বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর
ও অগ্নিসংযোগ করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি
পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
তদন্ত
দল প্রধান আসলাম মোল্লা বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে জমা দেওয়া
হয়েছে। তদন্তে ক্ষয়ক্ষতির যে বিবরণ পাওয়া গেছে তাতে প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
হয়েছে।”
মো. আসলাম
মোল্যার নেতৃত্বে একটি এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. তাসলিমা আলীর
নেতৃত্বে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফরিদপুরের
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, সালথার সহিংসতার ঘটনায় দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
রোববার একটি কমিটির প্রধান তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রায় তিন
কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
জেলা প্রশাসক
আরও জানান, এছাড়া অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. তাসলিমা আলীকে প্রধান করে আরেকটি
কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদন জমা দিতে আরো দুই দিন সময় লাগবে।
ফরিদপুরের
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা বলেন, সহিংসতার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও ১০ জনকে
গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই পর্যন্ত মোট ৬১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। এর মধ্যে মিরান
মোল্লা (৩৫) নামের একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ছাড়া দুজন গুলিবিদ্ধ
হয়ে গ্রেপ্তার রয়েছেন। তাদের পুলিশি পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জামাল পাশা
বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে এ পর্যন্ত আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে ৫৮ জনকে। এর মধ্যে
৪৮ জনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এই ঘটনায়
সালথা থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। সালথা থানার এস আই মিজানুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা
বাচ্চু মাতুব্বর, ইউএনওর গাড়িচালক মো. হাশমত আলী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের
নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস ও উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িচালক মো. সাগর সিকদার
বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন।
মামলায়
২৬১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত সোমবার
সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে দুই আনসার সদস্য ও ব্যক্তিগত
সহকারীকে নিয়ে সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি ফুকরা
বাজারে যান। সেখানে যাওয়ার পর মানুষের জটলা সৃষ্টি হলে তিনি ফিরে আসেন এবং পরে এসআই
মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পাঠান। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে
উত্তেজিত জনতা এসআই মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালায় এবং এতে তার মাথা ফেটে যায়।
পরে স্থানীয়
জনতা পুলিশের গুলিতে নিহতের গুজব রটিয়ে থানা ঘেরাও করে এবং উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী
কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস,
সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময়
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে
দেয়।
পরে সালথা
থানা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ এবং র্যাব ও
আনসার সদস্যরা ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এতে আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। আহতদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন (২৫) ও মিরান
মোল্যা (৩৫) নামের দুই যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আরও পড়ুন
সালথা তাণ্ডব: নতুন চার মামলা, গ্রেপ্তার বেড়ে ২৬
সালথা তাণ্ডব: আসামি ৪ হাজার, গ্রেপ্তার অব্যাহত
ফরিদপুরে আগুন-হামলা: আসামি ৩-৪ হাজার
সালথায় হামলা গুজব ছড়িয়ে, ভাষ্য স্থানীয়দের
ফরিদপুরে আগুন-হামলা পরিকল্পিত: ইউএনও