সোমবার শিকাগো থেকে কুণাল সেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, তার বাবার স্মৃতিগুলো সংরক্ষণের জন্য শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় বেশ আগেই আগ্রহ দেখিয়েছিল। তাকে লেখা বাবার চিঠি, স্থিরচিত্র ও পুরস্কারসহ বেশ কিছু নথি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে জমা দিয়েছেন তিনি।
বছরখানেক আগেই সেগুলো জমা দেওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা পিছিয়েছে বলে জানান কুণাল।
মৃণাল সেনের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন বেছে নিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মৃণালপুত্র বলেন, “বাবার স্মৃতিগুলো সংরক্ষণের আগ্রহ দেখিয়ে তারাই সবার আগে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমি এখানে দীর্ঘদিন ধরে আছি; তাদের সংরক্ষণ ব্যবস্থা খুব ভালো বলেই আমি জানি। স্মৃতিগুলো তারা ঠিকঠাক মতো সংরক্ষণ করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।”
শিকাগোর ইউনিভার্সিটি অব ইলিনোয় থেকে মেশিন লার্নিংয়ের (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) উপর পিএইচডি সম্পন্ন করে সেখানেই সপরিবারে থিতু হয়েছেন কুণাল সেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্মৃতিগুলো অন্যদের দিলে হয়তো আলমারিতেই পড়ে থাকত। আমি চেয়েছি, যতদিন সম্ভব বাবার স্মৃতিগুলো বেঁচে থাকুক। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে সেগুলো জমা দিয়ে আমি অন্তত নির্ভার হয়েছি।”
এর আগে শনিবার ফেইসবুকে লেখা এক চিঠিতে কুণাল জানান, তারও বয়স বাড়ছে; সেকারণে বাবার শেষ স্মৃতিগুলোও বেশিদিন সংরক্ষণ করতে পারবেন না। শতবর্ষ পরও কেউ যদি তার বাবাকে জানতে আগ্রহী হন তাহলে শিকাগো বিশ্ববিদ্যারয়ে গিয়ে তা দেখতে পাবেন।
এসব স্মৃতির পাশাপাশি মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রগুলোও বাঁচিয়ে রাখা জরুরি বলে মনে করেন কুণাল।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “পুরানো ছবিগুলো রিকোভার করা খুব মুশকিল; আবার ব্যয়সাপেক্ষও। সরকার (ভারত) কিছু ফিল্ম রিকোভার করেছে। কিন্তু সেই ছবিগুলো দর্শকরা দেখতে পাচ্ছেন না। ছবিগুলো রিকোভার করে দর্শকদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।”
১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরের ঝিলটুলীর বাড়িতে জন্ম নেন মৃণাল সেন; মাধ্যমিকের পড়াশুনা শেষে বাবার সঙ্গে কলকাতায় পাড়ি জমান তিনি।
১৯৫৫ সালে ‘রাত ভোর’ চলচ্চিত্রের মধ্যে দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে মৃণাল সেনের। তার আগে ১৯৫০ সালে ‘দুধারা’ নামে একটি সিনেমা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরিচালক হিসেবে নাম রয়েছে ‘অনামী’। এই ছবিটির কাহিনীও ছিল মৃণালের।
চলচ্চিত্রের অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন গীতা সোম, পরবর্তীতে মৃণাল সেন গীতাকে বিয়ে করেন।
দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘নীল আকাশের নীচে’ তাকে আপামর দর্শকের সঙ্গে সুপরিচিত করে তোলে। তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘বাইশে শ্রাবণ’ আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান। ১৯৬৯ সালে তার পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ভুবন সোম’ মুক্তি পায়।
তিনি ‘ইন্টারভিউ’, ‘ক্যালকাটা ৭১’, ‘পদাতিক’ চলচ্চিত্র তিনটির মাধ্যমে তৎকালীন কলকাতার অস্থির অবস্থাকে তুলে ধরেছিলেন। মধ্যবিত্ত সমাজের নীতিবোধকে তুলে ধরে নির্মাণ করেন ‘এক দিন প্রতিদিন’ ও ‘খারিজ’।
‘খারিজ’ ১৯৮৩ সালের কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার পায়। ১৯৮০ সালে মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র ‘আকালের সন্ধানে’ মুক্তি পায়। ‘আকালের সন্ধানে’ ১৯৮১ সালের বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার জয় করে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মৃণাল সেন।