ক্যাটাগরি

খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘স্থিতিশীল’, জানালেন চিকিৎসক

রোববার বিকালে গুলশানের বাসা
‘ফিরোজায়’ বিএনপি চেয়ারপারসনকে
দেখে আসার পর চিকিৎসক দলের প্রধান মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী
এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত
বলব, উনার অবস্থা খুবই স্থিতিশীল। আজকে পর্যন্ত উনি যথেষ্ট ভালো আছেন। আমরা আশা করছি,
যদি এভাবে আরও এক সপ্তাহ পার হওয়া যায়, তাহলে ইনশাল্লাহ আমরা বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে যাব।”

এর আগে বিকালে বিএনপি প্রধানের
শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে ‘ফিরোজায়’ তার ব্যক্তিগত মেডিকেল বোর্ডের বৈঠক হয় এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে।

খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়ার সম্ভাবনার প্রশ্নে
চিকিৎসক দলের প্রধান সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, কোভিডে আনসারটেনিটি আছে। পৃথিবীর কেউ বলতে পারবে না যে, করোনা প্রথম সপ্তাহে কেমন থাকবে, সেকেন্ড উইকে কী বিহেব করবে। কারো পক্ষে বলা সম্ভব না।

‘‘সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে। আমরা যদি কখনো মনে করি, বিন্দুমাত্র আমাদের মনে হয়, তাকে হাসপাতালে নেয়া দরকার। আমরা সেই মুহূর্তে তাৎক্ষনিক হাসপাতালে নিয়ে যাবো- সেই ধরনের প্রস্তুতি রেখেছি।”

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “মেডিকেল
বোর্ডে আমাদের অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। আমাদের সাথে বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন। সবচেয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যে, ইউকেতে উনার ছেলে ও ছেলের
ওয়াইফ আছেন… ডা. জোবাইদা
রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজে আমার স্টুডেন্ট ছিল, উনিও সব সময় মোটিভেট করছেন। আমরা একটা
টিমওয়ার্ক হিসেবে আলোচনা করে উনার চিকিৎসা করছি।”

“কোথাও কোনো
গ্যাপ বা কোনো রকমের সন্দেহের কিছু অবকাশ নেই,” বলেন তিনি।

৭৫ বছর বয়েসী খালেদা জিয়ার স্বাভাবিক
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, “এখন পর্যন্ত উনার
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো আছে বলে মনে হচ্ছে।”

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় চিকিৎসক দলের সদস্য বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুস শাকুর খান, ইউরোজিস্ট অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মো. আল মামুন পাশে ছিলেন। চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা শাইরুল কবির খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিকাল ৫টায় মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ‘ফিরোজায়’ প্রবেশ করেন। বেরিয়ে আসেন সন্ধ্যা ৬টার পর।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের এই বৈঠকে অনলাইনেও আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিতসক অংশ নেন। এছাড়া লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও যুক্ত ছিলেন।

‘খুব কাছ থেকে আমরা দেখেছি’

অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘উনি আমাদের সামনে এসে বসেছেন। আমি উনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দীর্ঘ বছর ধরে। এর আগেও উনাকে যতবার আমি যেভাবে এসে দেখেছি, সেভাবেই দেখেছি।

“ শুধু তাই নয়, আমি উনার পাস অক্সিমিটার দিযে দেখেছি, চেস্ট অলকালটেক করে দেখেছি। যেভাবে যা যা দেখা দরকার সেভাবে দেখেছি।”

অন্যরা কেমন আছেন’

এফএম সিদ্দিকী বলেন, “সবাই কোভিড পজেটিভ। প্রত্যেককে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভালো দিক হচ্ছে বেশিরভাগই সিমটেমেটিক। প্রথম দিকে ১/২ জনের জ্বর ছিল। এখন জ্বর নাই, সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

“ম্যাডাম শুধু নিজেরই না, উনি ওরা (অন্য আক্রান্তরা) ওষুধ খাচ্ছে কিনা সেটাও তদারক করছেন। আজকে আমি উনাকে দেখে চলে এসছি। উনি দোতলায়। উনি লাস্টে খবর পাঠিয়েছেন, আমার দুইজনকে আপনি একটু দেখে যান। তো আমি উনার রিকুয়েস্টে ওদেরকে দেখে এসছি।”

 ‘খালেদা জিয়া দোয়া চেয়েছেন’

চিকিৎসক দলের প্রধান বলেন, “উনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। উনি বলেছেন, সবাই যেন উনার জন্য দোয়া করেন। সবাই যেন সাবধানে থাকে, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে।”

গত শনিবার খালেদা জিয়া নমুনা পরীক্ষা শেষে রোববার তার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়।  ফিরোজার বাসায় আরো ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তারাও বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

 ‘দোয়া ও প্রার্থনা’

এদিকে খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংবাদের পর নেতা-কর্মীরা উদ্বেগ-উৎকন্ঠা প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন জায়গায় তারা নেত্রীর রোগমুক্তির জন্য দোয়া করছেন। তার আশু রোগমুক্তি কামনা রাজধানীসহ সারাদেশের মসজিদে দোয়া মাহফিল হয়েছে বলে দলের কেন্দ্রীয় দফতর শাখা জানিয়েছে।

ঢাকায় পল্টন জামে মসজিদে বাদ জোহর দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্র্য ইসলাম অমিত, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, নাজিম উদ্দিন আলম, রফিক শিকদার প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা দলের আহবায়ক শাহ নেছারুল হক।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও
সোমবার খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা
করে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত
ছিলেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, উলামা দলের মাওলানা আবদুল খালেক, মাওলানা মো. ইব্রাহিম, মাওলানা সোবহানসহ চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিকালে খালেদার রোগমুক্তির কামনায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা সভা হয়। মঙ্গলবার কমলাপুরের বৌদ্ধ মন্দিরেও বিশেষ প্রার্থনা সভা করবে দলের নেতা-কর্মীরা।