মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জাপান সরকার জানিয়েছে, প্রথম পানি ছাড়া হবে প্রায় দুই বছরের মধ্যে; এতে স্টেশনটির পরিচালনা কোম্পানি টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার (টেপকো) দূষিত পানি পরিশোধন করে ক্ষতিকর আইসোটোপ অপসারণ শুরু করার, অবকাঠামো নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনুমোদন অর্জন করার সময় পাবে।
পুরো প্রকল্পটি শেষ করতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।
প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও ফুকুশিমার মৎসজীবী ইউনিয়ন এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কিন্তু জাপান বলছে, ২০১১-র ভূমিকম্প ও সুনামিতে বিকল হয়ে যাওয়া এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটিকে নিষ্ক্রিয় ও পুরোপুরি রূপান্তর করার কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্যই পানি ছাড়া দরকার, বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক প্লান্টগুলো থেকে একই ধরনের পরিশোধিত পানি নিয়মিত ছাড়া হয়।
“প্রতিষ্ঠিত মানদণ্ড কঠোরভাবে মেনে চলার ভিত্তিতে আমরা মহাসাগরে ছাড়ার বিষয়টি নির্বাচন করেছি,” বিবৃতিতে বলেছে জাপান সরকার।
ফুকুশিমা দাইচি প্লান্টে প্রায় ১৩ লাখ টন দূষিত পানি বিশাল সব ট্যাঙ্কে রেখে দেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রতি বছর প্রায় ৯১ কোটি ২৬ লাখ ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে আর স্থান সঙ্কুলানও আর হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দূষিত পানি থেকে শুধু ট্রিটিয়াম ছাড়া বাকি সব আইসোটোপ পরিশোধন করার পরিকল্পনা করেছে টেপকো। হাইড্রোজেনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ট্রিটিয়াম পানি থেকে পৃথক করা কঠিন। থেকে যাওয়া ট্রিটিয়ামের মাত্রা নিরাপদ সীমার নিচে না নামা পর্যন্ত ওই পানিকে আরও পাতলা করবে টেপকো, তারপর পাম্প করে পানি সাগরে ফেলবে।
মানুষের ত্বক ভেদ করে ঢুকে পড়ার মতো শক্তি বিকিরণ না করায় ট্রিটিয়াম তুলনামূলকভাবে নির্দোষ বলে বিবেচিত হয়। বিশ্বব্যাপী অন্যান্য পারমাণবিক প্ল্যান্টগুলো নিয়মিতভাবেই নিম্নমাত্রায় ট্রিটিয়াম থাকা পানি সাগরে ফেলে থাকে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখ করেছে, এক দশক আগে তিনটি পারমাণবিক চুল্লিতে গলনের ঘটনা ঘটার পর থেকে এগুলোর পরিচালনার বিষয়ে জাপান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে।
তারপরও এই পরিকল্পনার বিরোধীরা ট্রিটিয়াম ও অন্যান্য দূষণের মাত্রা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।
দক্ষিণ কোরিয়া এক বিবৃতিতে গুরুতর উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, “এই সিদ্ধান্ত আমাদের জনসাধারণ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ এবং অপ্রত্যক্ষ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।”
দেশটি জাপানকে তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে আরও তথ্য দেওয়া আহ্বান জানিয়ে বলেছে, তারা তাদের তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণ জোরদার করবে।
চীন ও তাইওয়ানও জাপানের এ পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।
ফুকুশিমার মৎসজীবী ইউনিয়ন এসব পানি না ছাড়ার জন্য কয়েক বছরে ধরে সরকারের প্রতি আর্জি জানিয়ে আসছে। তারা বলছে, এ পদক্ষেপ মৎস শিল্পের ওপর ‘বিপর্যয়কর প্রভাব’ ফেলবে।
২০১৪ সালে সাইন্টিফিক আমেরিকান সাময়িকীর একটি নিবন্ধে বলা হয়েছিল, পানি বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে ট্রিটিয়াম পেটে গেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এর পাশাপাশি কিছু বিশেষজ্ঞ অন্যান্য তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের দূষণের ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।