ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে সবচেয়ে জমজমাট লড়াই হয়ে উঠেছে স্পেনের শীর্ষ প্রতিযোগিতাটি। বাকি আছে আট রাউন্ড। এ অবস্থায় ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আতলেতিকো। ১ পয়েন্ট পিছিয়ে দুইয়ে রিয়াল এবং তাদের চেয়ে ১ পয়েন্ট কম নিয়ে তিন নম্বরে বার্সেলোনা।
লা লিগার গত ১৬ মৌসুমের ১৫ বারই শিরোপা গেছে রিয়াল বা বার্সেলোনার ঘরে। তাদের আধিপত্য ভেঙে শুধু ২০১৩-১৪ আসরে জিতেছিল আতলেতিকো।
মোমেন্টাম কার দিকে?
শিরোপা ভাগ্য নিজেদের হাতে না থাকলেও মৌসুমের দ্বিতীয় ক্লাসিকোয় জিতে নিশ্চিতভাবে মানসিকভাগে আরও এগিয়ে গেছে রিয়াল। গত শনিবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ২-১ গোলে হারায় তারা।
গত মৌসুমে করোনাভাইরাস বিরতি শেষে পুনরায় লিগ শুরুর পর দুর্দান্ত ছন্দে বাকি সব ম্যাচ অপরাজিত থেকে শিরোপা ঘরে তুলেছিল রিয়াল। সাম্প্রতিক সময়ে যেন ঠিক সেই ফর্ম খুঁজে পেয়েছে জিনেদিন জিদানের দল। লিগে শেষ চার ম্যাচসহ সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ছয় ম্যাচ জিতেছে তারা। শুধু লিগে তারা অপরাজিত আছে টানা ১০ ম্যাচে।
করিম বেনজেমা আছেন দারুণ ফর্মে। মাঝে চোটে পড়ার আগে-পরে মিলিয়ে টানা সাত ম্যাচে জালের দেখা পেয়েছেন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড, এই সময়ে তার গোল ৯টি। আর মাঝমাঠের দুই অভিজ্ঞ লুকা মদ্রিচ ও টনি ক্রুস এবং ডিভেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসেমিরো দারুণ নৈপুণ্যে মাঝমাঠের ফুটবল নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন।
শিরোপা লড়াইয়ের প্রতিপক্ষ দুই দলের চেয়ে মুখোমুখি দেখায় এগিয়ে রিয়াল। বার্সেলোনার বিপক্ষে জিতেছে দুই লেগেই। আর আতলেতিকোর বিপক্ষে প্রথম দেখায় জয়ের পর তাদের মাঠে ড্র করেছে জিদানের দল।
লিগে ছন্দ ফিরে পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
তাহলে কি রিয়াল এগিয়ে?
ঠিক তা নয়। রক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ দুই সেনা রাফায়েল ভারানে ও সের্হিও রামোস, রেকর্ড দামে কেনা ফরোয়ার্ড এদের আজার আগে থেকেই চোটে ভুগছেন। সবশেষ বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচে চোট পেয়ে মৌসুমের বাকি সময়ের জন্য ছিটকে গেছেন রক্ষণ ও আক্রমণে খেলতে পারদর্শী লুকাস ভাসকেস।
পুরো মৌসুমেই চোটে ভুগতে হয়েছে দলটিকে। তাইতো, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে জয়ের পর জিদানকে বলতে শোনা যায়, শারীরিক সক্ষমতার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে তার দল।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও টিকে আছে রিয়াল; লিভারপুলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে জিতে সেমি-ফাইনালের পথে আছে তারা। অন্যদিকে, বার্সেলোনা ও আতলেতিকো তাদের পূর্ণূ মনোযোগ দিতে পারছে শুধু লা লিগায়।
লিগের শেষভাগে এসে ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ।
আতলেতিকোর কি হয়েছে?
আসরের প্রথম অর্ধ শেষের চিত্রে আতলেতিকোর নিশ্চিত শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। প্রথম ১৯ ম্যাচের ১৬টি জিতে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে শীর্ষে ছিল তারা। নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে একটি ম্যাচও কম খেলেছিল সিমেওনের দল।
এরপরই পথ হারায় তারা। পেছনের কারণ হিসেবে বলা যায়, করোনাভাইরাসের ধাক্কা। একের পর এক খেলোয়াড় কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে দলের বাইরে চলে যান। ভঙ্গুর দল নিয়ে পরের ১১ রাউন্ডে মাত্র চারটি ম্যাচ জিততে পেরেছে আতলেতিকো, সবশেষ রিয়াল বেতিসের মাঠে করে ১-১ ড্র।
খেলোয়াড় হারানোয় বড় আঘাত লেগেছে আক্রমণভাগে, লিগের শেষ চার ম্যাচে তারা গোল পেয়েছে মাত্র দুটি।
আঘাত হেনেছে চোটও। তিন সপ্তাহের জন্য বাইরে আছেন দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা লুইস সুয়ারেস। চোটে ভুগছেন জোয়াও ফেলিক্স, তুমা লিমাঁ ও মুসা দেম্বেলে।
শুরুর ছন্দহীনতা কাটিয়ে লা লিগার শিরোপা দৌড়ে আছে বার্সেলোনাও।
বার্সেলোনার অবস্থান
একের পর এক হার ও ড্রয়ে বার্সেলোনার শুরুটা ছিল ভীষণ বাজে। প্রথম ১০ রাউন্ডে চারটিতে হেরেছিল তারা, ড্র দুটি। ডিসেম্বরে দলটির কোচ রোনাল্ড কুমান তো লিগ শিরোপার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন।
সেখান থেকে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোটা অসাধারণের চেয়েও যেন বেশি কিছু। সবশেষ রাউন্ডে রিয়ালের বিপক্ষে হারের আগে লিগে টানা ১৯ ম্যাচ অপরাজিত ছিল তারা; ১৬ জয় ও তিন ড্র।
ক্লাসিকোয় হার মানসিকভাবে তাদের জন্য হতে পারে বড় একটা ধাক্কা, তবে শিরোপা লড়াইয়ে তাদের সম্ভাবনার শেষ দেখছে না কেউই। প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছাড়িয়ে যাওয়ার সামর্থ্য তাদের আছে। সেই সঙ্গে তাদের শিবিরে আছে শিরোপাশূন্য গত মৌসুমের হতাশা দূর করতে বদ্ধপরিকর লিওনেল মেসি।
শেষ কবে হয়েছে এমন লড়াই?
সবশেষ ২০১৫-১৬ মৌসুমের শিরোপা লড়াইয়ে ছিল এই তিন দল। সেবার ৩৭তম রাউন্ডের আগ পর্যন্ত তাদের মাঝে পয়েন্টের ব্যবধান ছিল মাত্র ১। তবে শেষের আগের সপ্তাহে শিরোপা সম্ভাবনা শেষ হয়ে গিয়েছিল আতলেতিকোর। আর শেষ রাউন্ডে রিয়ালকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বার্সেলোনা।
২০১৩-১৪ আসর ছিল আরও রোমাঞ্চকর। শেষ রাউন্ডের আগে ছিটকে যায় রিয়াল। আর শেষ দিনে বার্সেলোনার মাঠে ১-১ ড্র করে ১৮ বছরের মধ্যে নিজেদের প্রথম লিগ শিরোপা জেতে আতলেতিকো মাদ্রিদ।