শিশুর মানসিক যত্ন ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ
করতে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য গ্রহণ করা উচিত।
মানসিক স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে
প্রকাশিত প্রতিবেদনে শিশুর মানসিক নানারকম সমস্যা ও যত্ন নেওয়ায় কয়েকটি উপায় সম্পর্কে
ভারতের শিশু মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠান ‘দ্যা ইকুইলিব্রিয়াম’য়ের প্রতিষ্ঠাতা সঞ্জনা
বাফনা রঙ্কা’র দেওয়া পরামর্শগুলো এখানে জানানো হল।
শিশুর মানসিক অস্থিরতার লক্ষণ
১. স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মেজাজী হওয়া।
২. মাথা ও পেট ব্যথার অভিযোগ।
৩. ঘুমে ব্যঘাত ও দুঃস্বপ্ন দেখা।
৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিদ্বেষ।
৫. সামাজিকতায় লজ্জা পায়।
৬. ছোট খাটো বিষয়ে কান্না করা।
৭. ভয়ের ও উদ্বেগের কল্পনা।
কিশোর ও তরুণদের মানসিক অস্থিরতার লক্ষণ
১. আগের পছন্দের বিষয়ের ওপর থেকে আগ্রহ
হারিয়ে ফেলা।
২. বন্ধু ও সহপাঠিদের সঙ্গে মারামারি।
৩. খেলাধুলা বা শরীরচর্চায় অতি আগ্রহ
বা অতি অনাগ্রহ।
৪. ‘গেইমিং’ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
বেশি আসক্ত হওয়া।
চরম ক্ষেত্রে
১. নিজের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা।
২.ধূমপান ও নেশা-জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার।
৩. আত্মহত্যার চেষ্টা।
বিভিন্ন কারণে শিশুদের মাঝে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-
১. স্কুলে নানা রকমের বাজে ব্যবহার ও
হুমকির মুখোমুখি হওয়া।
২. বাবা মায়ের সঙ্গে সন্তানদের আবেগগত
দূরত্ব।
৩. সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করা বা অতিরিক্ত
আদর করা।
৪. অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যেমন- বাবা মায়ের
মাঝে ডিভোর্স বা নিয়মিত ঝগড়া হয়ে থাকে এমন পরিবেশে শিশুদের থাকা।
৫. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যা বাদ দেওয়া উচিত
শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে
পারিবারিক, স্কুল ও সামাজিক অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অভিভাবক
শিশুরা কোনো ‘ট্রফি’ না। তাই নিজেদের
আবেগ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। তারা যেমন তাদের সেভাবেই বিকশিত হতে দিন।
শিশুর মাঝে রাগ, ক্ষোভ, হিংসা ইত্যাদি
থাকাটা স্বাভাবিক। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা শেখাতে গিয়ে তাদের ওপর জোর না খাটিয়ে বরং আবেগ
নিয়ন্ত্রণ করা ও সুনিয়ন্ত্রিত আচরণ করা শেখানো প্রয়োজন।
অন্যদের সঙ্গে শিশুকে তুলনা করবেন না।
আপনি যে তাকে উন্নত করতে চাচ্ছেন এটা তার পক্ষে এই বয়সে বোঝা সম্ভব নয় বরং তার মনে
হবে, যদি সে অন্যদের মতো আচরণ করে তাহলে তার বাবা মা তাকে ভালোবাসবে। অর্থাৎ ভালোবাসার
মাঝে শর্ত এসে দাঁড়াবে, যা মোটেও ঠিক নয়।
শিশু মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে তার পাশে থাকুন।
তার কথা মন দিয়ে শুনুন। তাকে নিশ্চিত করুন যে আপনি সবসময় তার সঙ্গে থাকবেন।
তাদেরকে মাঝে মধ্যে ভুল করতে দিন। সব
সময় শিশুকে সংশোধন করতে যাবেন না। তাদেরকে জীবন, সময়, টাকা ও কঠোর পরিশ্রমের গুরুত্ব
বুঝতে দিন। তাদের নিজের কাজ ও দায়িত্বের ভার নিজের কাঁধে নিতে শিক্ষা দিন।
বিদ্যালয়
শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। বিদ্যালয়ে যদি মূল্যবোধের ক্লাস থাকে তবে তা শিশুর মানসিক ও বোধগত
বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
লিঙ্গ-শিক্ষা বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য
আবশ্যিক। এতে করে তারা দৈহিক বিষয়ে সচেতন হয়। পাশাপাশি মানবিকতাকেও ধারণ করতে পারে।
এই শিক্ষা শিশুকে সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখতে ও ভবিষ্যতে লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্য এড়াতেও
সহায়তা করে।
প্রতিটা বিদ্যালয়ে একজন কাউন্সিলর থাকা
প্রয়োজন যার সঙ্গে শিশু নিজের সমস্যা ও ভুল ত্রুটি মন খুলে বলতে ও পরামর্শ নিতে পারবে।
এসকল উপায়ের পরেও যদি শিশু খাপ খাইয়ে
নিতে না পারে তাহলে অন্যান্য উপায়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
পারিবারিক ‘কাউন্সেলিং’
বাবা-মাকে সামনে রেখে শিশুকে কাউন্সেলিং
করা যেতে পারে। এতে করে সন্তানের সমস্যাগুলো বুঝতে পারবে ও কীভাবে তার সমাধান করা যায়
তার সঠিক উপায়ও বের করতে পারবে।
মনোচিকিৎসা
শিশুর সমস্যা এড়াতে নানান থেরাপি দেওয়া
যেতে পারে। এক্ষেত্রে শিশুর ওপর মনোচিকিৎসা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
ওষুধ
মানসিক সমস্যার পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত
সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মানসিকভাবে সুস্থ থাকা শারীরিকভাবে
সুস্থ থাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনো পরিস্থিতিতেই অবহেলা করা যাবে না।
আরও পড়ুন
শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য জড়িয়ে ধরুন