আইপিএলের ম্যাচে চেন্নাইয়ে মঙ্গলবার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে সাকিব ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। পরে ব্যাট হাতে পাঁচ নম্বরে সুযোগ পান খেলা শেষ করে আসার। রান রেটের চাপও ছিল না। কিন্তু বাজে শটে তিনি উইকেট বিলিয়ে আসেন ৯ বলে ৯ রান করে।
আলোচিত পারফরমার ম্যাচে আছেন আরও কজন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যায় ম্যাচের শেষ সময়ের উত্তেজনা। জয়ের জন্য কলকাতার যখন প্রয়োজন ৩১ বলে ৩১ রান, তখনও তাদের উইকেট আছে ৭টি। অথচ এই ম্যাচই কিনা মুম্বাই জিতে নেয় ১০ রানে!
রাহুল চাহার, ক্রুনাল পান্ডিয়া ও ট্রেন্ট বোল্টের দারুণ বোলিংয়ের সঙ্গে কলকাতার ব্যাটসম্যানদের আত্মহত্যার মিছিল ও ব্যাটিং ভুলে যাওয়া মিলিয়েই এই ফল।
১৫৩ রান তাড়ায় কলকাতাকে উদ্বোধনী জুটিতেই ৫৪ বলে ৭২ রান এনে দেন নিতিশ রানা ও শুবমান গিল। এরপর গিল, রাহুল ত্রিপাঠি ও অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান অল্প সময়ের মধ্যে আউট হলেও দুর্ভাবনার কিছু ছিল না। লক্ষ্য ছিল নাগালেই। রানা ছিলেন উইকেটে, সঙ্গে সাকিব।
৪৭ বলে ৫৭ রান করে রানা স্টাম্পড হওয়ার পর থেকেই ম্যাচের মোড় বদলের শুরু। পরের ওভারে ক্রুনালকে অযথা উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইকেট হারান সাকিব। ধারাভাষ্যকক্ষে হতবাক ম্যাথু হেইডেন বলেন, “দলের তো ওভারপ্রতি ৮-৯ রান করে দরকার নেই। স্বাভাবিক ক্রিকেট খেললেই হয়। নির্বোধের মতো শট।”
এরপর আন্দ্রে রাসেল, দিনেশ কার্তিকের মতো আগ্রাসী ব্যাটসম্যানরা ধুঁকতে থাকেন ব্যাটে-বলে করতেই। সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ ওভারে ১৫ রানের!
ব্যাট হাতে বাজে শটে ফিরে আসছেন সাকিব। ছবি : আইপিএল।
সেখানেও ব্যর্থ কলকাতা। ট্রেন্ট বোল্টের বলে শেষ হয় রাসেলের অচেনা ইনিংস। ৯ রান করেন তিনি ১৫ বলে। পরের বলে বোল্ড প্যাট কামিন্স। ১১ বলে ৮ রানে অপরাজিত থেকে কার্তিক দেখেন দলের হার।
অথচ ম্যাচের প্রথম ভাগে শুরু থেকেই কলকাতা ছিল নিয়ন্ত্রণে। সেখানে সাকিব ছিলেন অগ্রণী। শেষ দিকে মাত্র ২ ওভার বোলিংয়েই রাসেল শিকার করেন ৫ উইকেট!
কলকাতার হয়ে ৫০ ম্যাচ পূর্ণ করায় খেলা শুরুর আগে সাকিবকে উপহার দেওয়া হয় বিশেষ ক্যাপ। তিনিও উজ্জীবিত পারফরম্যান্স দেখান বল হাতে।
চতুর্থ ওভারে সাকিবের হাতে বল তুলে দেন মর্গ্যান। বাঁহাতি স্পিনে তিনি ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রাখার কাজটা করেন দারুণভাবে। ওভার থেকে আসে কেবল চারটি সিঙ্গেল।
সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে সাকিব দেন ছয় রান। একইভাবে তার পরের ওভারেও ছয় বল থেকে আসে কেবল ছয়টি সিঙ্গেল।
এই স্পেলেই টানা তৃতীয় ও কোটার শেষ ওভার করতে আসেন তিনি ইনিংসের ১১তম ওভারে। এবার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে ফিরিয়ে দেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠা সূর্যকুমার যাদবকে।
৩৬ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় সূর্যকুমার করেন ৫৬ রান।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় মুম্বাই। ইশান কিষান, হার্দিক পান্ডিয়া, কাইরন পোলার্ডরা পারেননি ঝড় তুলতে।
শেষ ওভারে পরপর দুই বলে ক্রুনাল পান্ডিয়া ও জাসপ্রিত বুমরাহকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান রাসেল। হ্যাটট্রিক না হলেও শেষ বলে উইকেট নেন আরেকটি। ৩২ বছর বয়সী অলরাউন্ডার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার পান পাঁচ উইকেটের স্বাদ। আইপিএলে তার চেয়ে কম বল করে ৫ উইকেট নিতে পারেননি আর কেউ।
কিন্তু শেষের হতাশায় মিলিয়ে যায় সাকিব-রাসেলদের বোলিংয়ের সেই খুশি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স : ২০ ওভারে ১৫২ (রোহিত ৪৩, ডি কক ২, সূর্যকুমার ৫৬, কিষান ১, হার্দিক পান্ডিয়া ১৫, পোলার্ড ৫, ক্রুনাল পান্ডিয়া ১৫, ইয়ানসেন ০, চাহার ৮, বুমরাহ ০, বোল্ট ০*; হরভজন ২-০-১৭-০, বরুন ৪-০-২৭-১, সাকিব ৪-০-২৩-১, কামিন্স ৪-০-২৪-২, প্রসিধ ৪-০-৪২-১, রাসেল ২-০-১৫-৫)
কলকাতা নাইট রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৪২/৭ (রানা ৫৭, শুভমান ৩৩, ত্রিপাঠি ৫, মর্গ্যান ৭, সাকিব ৯, কার্তিক ৮*, রাসেল ৯, কামিন্স ০, হরভজন ২*; বোল্ট ৪-০-২৭-২, ইয়ানসেন ২-০-১৭-০, বুমরাহ ৪-০-২৮-০, ক্রুনাল পান্ডিয়া ৪-০-১৩-১, পোলার্ড ১-০-১২-০, চাহার ৪-০-২৭-৪), রোহিত ১০-০-৯-০)
ফল: মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ১০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ : রাহুল চাহার।