কঠোর লকডাউনের মধ্যে বুধবার সরকারি ছুটির দিনে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, এই ধরনের সমালোচনায় অধিদপ্তরের কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে।
কোভিড-১৯ মহামারীর শুরু থেকে সমালোচনার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মাস্ককাণ্ড, জেকেজিকাণ্ডের মতো দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ পাওয়া পর মহাপরিচালক পরিবর্তন করে খুরশীদ আলমকে গত বছর এই দায়িত্বে আনা হয়।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে খুরশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলার পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিচালনা করছেন তাতে ভুল হওয়ার অবকাশ নেই।
“তারপরও আমরা মানুষ। ভুলের ঊর্ধ্বে না, আমাদেরও ভুল-ত্রুটি হতে পারে। কিন্তু মহামারীর এই সময়ে আপনারা যদি আমাদের এমন বিরূপ সমালোচনার মুখোমুখি করেন, তাহলে আমাদের মনোবল ভেঙে যাবে।”
“আমি সবাইকে বলছি না। আমি বেশিরভাগ সংবাদকর্মীদের দেখছি আমাদের সঙ্গে আছেন। কেউ কেউ করছেন। কেন করছেন, আমি জানি না। ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু এটা সেই সময় নয় (সমালোচনা করার),” যোগ করেন তিনি।
খুরশীদ বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা আশা করি, আমাদের প্রতি সমব্যথী হওয়া এবং আমাদের সঠিক দিক-নির্দেশনা দেওয়া।”
সমালোচনার উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার উধাও করে দেওয়া হয়েছে- এমন সংবাদের ‘উধাও’ শব্দের মধ্যে একটা ‘অপমানজনক’ ব্যাখ্যা আছে।
“আমরা সেটা বলতে চাইনা। উনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, উনি জানেন না। আমরা বলেছি বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার যে প্রেক্ষিতে তৈরি করা হয়েছিল সেই প্রেক্ষিত বিদ্যমান ছিল না… সেখানে অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি ছিল, বিছানা ছিল। সারা দেশে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন হাসপাতালে ছড়িয়ে দিয়েছি।
“ওই আইসোলেশন সেন্টারে প্রতিদিন ৬০ লাখ টাকা খরচ হত। এখানে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি রোগী থাকত না। কিন্তু সব মিলিয়ে ১ হাজারের বেশি জনবল নিয়োজিত ছিল।”
মহাখালীর ডিএনসিসি আইসোলেশন সেন্টার নিয়েও অনেক ভুল সংবাদ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির দায় শুধু সরকারের নয়: নতুন ডিজি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে না- এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে জানিয়ে একজন সাবেক কর্মকর্তাকে ইঙ্গিত করে খুরশীদ আলম বলেন, “অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সমালোচনা করছেন, যারা একদিনও রোগীর পাশে গিয়ে দাঁড়াননি।
“তারা রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ছিলেন। তারা তখন কী করেছিলেন? তারা এখন টেলিভিশনে টকশোতে বসে লম্বা লম্বা কথা বলেন।”
যারা বাইরে থেকে সমালোচনা করছেন, তাদের হাসপাতালে এসে রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান খুরশীদ আলম।
“আমি বলি, আমাদের পাশে আসেন। আপনার যে প্রজ্ঞা, জ্ঞান আছে, সেটা আমরা কাজে লাগাই। আমাদের সহযোদ্ধা হন। সেটা না করে ওই নিরাপদ বাক্সে বসে… এই টেলিভিশন থেকে ওই টেলিভিশনে গিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা দেশবাসীকে যেমন বিভ্রান্ত করছে, আমাদের আশাহত করছে, আমাদেরকে আমাদের কাজ থেকে মন ফিরিয়ে দিচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে নিজের ভাষা প্রয়োগ নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুরে খুরশীদ আলম বলেন, “সংবাদ সম্মেলনের ভাষা রূঢ় মনে হতে পারে, খারাপ মনে হতে পারে।
“আমি আমার দেশের পক্ষ থেকে, জনগণের পক্ষ থেকে, নেত্রীর পক্ষ থেকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের শুধু প্রতিবাদের ভাষাটা জানালাম। এটা আপনাদের কাছে বিরূপ মনে হতে পারে, আমার কিছুই করার নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম, এনসিডিসির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন এবং এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন।