তাদের কেউ কেউ অন্য কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে গিয়ে ফিরে এসেছেন। আবার দূরে থাকায় নির্ধারিত দিনে প্রথম টিকা নেওয়ার কেন্দ্রে যেতেও পারেননি। এমন ব্যক্তিরা দু:শ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন।
তবে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া নিয়ে দু:শ্চিন্তার কারণ নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অন্য কেন্দ্র থেকে কিংবা ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার টিকা নেওয়ার কথা বলেছেন তারা।
প্রথম ডোজ যে কেন্দ্র থেকে নেওয়া হয়েছিল সাধারণভাবে দ্বিতীয় ডোজ সেখান থেকে নেওয়ার কথা। অন্য কেন্দ্রে গিয়ে যেমন কেউ কেউ ফিরে এসেছেন, তেমনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন বা জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়নে বুধবার জানতে চাইলেও একই কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যদিও লকডাউনে নির্ধারিত কেন্দ্রের বাইরে থেকেও টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে অন্যত্র আটকে গেলেও ওই ব্যক্তি যেখানে অবস্থান করছেন, সেখান থেকে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার এসএমএস দেখাতে হবে এবং টিকা কার্ড সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকাদানের কাজে ব্যস্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
“প্রথম কথা হলো তার কাছে মেসেজ যাবে। ওই মেসেজ এবং টিকা কার্ড দেখিয়ে বলবে যে, প্রথম ডোজ ঢাকায় নিয়েছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজের সময় কুমিল্লা চলে এসেছি। লকডাউনের কারণে যেতে পারছি না। সেকেন্ড ডোজ দেওয়ার অনুরোধ করলে কর্তৃপক্ষ সেটা দিয়ে দেবে।”
এ বিষয়ে বুধবার জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করলে জাভেদ নামে একজন তথ্য অফিসার জানান, প্রথম ডোজ টিকা যে কেন্দ্র থেকে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ টিকাও সেখান থেকেই নিতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, লকডাউনে যাদের টিকা পেতে সমস্যা হচ্ছে তারা ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে যে কোনো সময় দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে পারবেন।
“যাদের প্রথম ডোজ নেওয়ার ৮ সপ্তাহ হয়েছে তাদের শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ১২ সপ্তাহের মধ্যে যে কোনো সময় টিকা নিলেই হবে। যদি কোনো কারণে লকডাউন কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হয় সেক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে বিকল্প কোনো ব্যবস্থার বিষয়েও আমরা সজাগ রয়েছি। আমরা ব্যবস্থা নেব।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি হেলথ অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের হিসাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত সারাদেশে ৫৬ লাখ ৭৬ হাজার ৩১৩ জন করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
প্রথম ডোজ নেওয়ার দুই মাস পর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কাজ। এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৩৩ হাজার ১৭৫ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন।
এরইমধ্যে মহামারীর বিস্তার বাড়তে থাকলে ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এ সময় দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় বুধবার থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না।
রাজধানীর মিরপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবদুল হামিদ জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায় টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। এরপর ঢাকায় কর্মস্থলে চলে আসেন তিনি।
৫ এপ্রিল লকডাউন শুরু হলে চুয়াডাঙ্গা যেতে পারেননি আবদুল হামিদ। ১১ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি তিনি।
“চুয়াডাঙ্গায় প্রথম ডোজ নেওয়ার সময় সেখানকার কর্মীরা জানিয়েছিলেন ঢাকায় দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে। কিন্তু ওই দিন খোঁজ নিয়ে জানলাম ঢাকায় নেওয়া যাবে না। প্রথম ডোজের কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। এ নিয়ে চিন্তায় আছি।”
বরিশালের গৌরনদীতে ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম ডোজ গ্রহণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা নির্মল চন্দ্র করের দু:শ্চিন্তা কয়েক দিনের মধ্যে তার দ্বিতীয় ডোজের এসএমএস আসার কথা। এ লকডাউনে তিনি গৌরনদী কিভাবে যাবেন তা নিয়ে ভাবছেন।
তিনি জানান, পারিবারিক কাজে সে সময় কিছুদিনের জন্য বরিশালে ছিলেন। সেখানে সহজেই নিবন্ধন করে প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছেন এক ব্যক্তি। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
তিনি বলেন, “একটা অপশন রাখা দরকার ছিল। বিশেষ প্রয়োজনে কেন্দ্র পরিবর্তনের সুযোগ থাকলে এ ধরনের ঝামেলা হতো না।”
রাজধানীর মিরপুরের মনিরা হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার বাবা-মা খুলনায় প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। সম্প্রতি তারা ঢাকায় আসেন। তাই ১৬ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন থেকে তাকে একই কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
“তারা বলেছেন- টিকা নিতে দেরি হলেও একই কেন্দ্রে গিয়ে নিতে। উপায় না দেখে একটা প্রাইভেটকার ভাড়া করে বাবা-মাকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।”
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের টিকা ২৮ দিন পর
টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও অনেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ধরনের ব্যক্তিরা দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বলেন, তারা সেরে ওঠার ২৮ দিন পর টিকা নিতে পারবেন।
“যারা প্রথম ডোজ নেননি তারা সুস্থ্য হওয়ার সার্টিফিকেট পাওয়ার কমপক্ষে ২৮দিন পর যে কোনো সময় টিকা নেবেন। প্রথম ডোজ নিয়ে আক্রান্ত হলে পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ হওয়ার ২৮ দিন পর টিকা নিতে হবে।”
আরও পড়ুন
কোভিড১৯: দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিল ৫ লাখ ২২ হাজার