বনায়নের উপকারভোগীদের
রিট আবেদনে উচ্চ আদালত সামাজিক বনায়নের জায়গা দখলমুক্ত করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের
আদেশ দিয়েছে বলে উপকারভোগীরা জানিয়েছেন।
তবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের
ভাষ্য, বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের জায়গায় কোনো আশ্রয়ণ প্রকল্প নেওয়া হয়নি। যদি জবরদখলকারী
কেউ এটি প্রচার করে থাকে তা মিথ্যা। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা চাইলে আইনের ব্যবস্থা নিতে
পারে।
বনবিভাগের কর্মকর্তারা
জানিয়েছেন, কক্সবাজার সদর উপজেলায় খুরুশকূল মৌজার আরএস ৪১৬০ ও বিএস ৪৪৬৬ নম্বর খতিয়ানের
বনবিভাগের পিএমখালী রেঞ্জের খুরুশকূল বিটের ১০ হেক্টর জায়গায় সামাজিক বনায়ন সৃজিত রয়েছে,
যা স্থানীয় ২৫ জন উপকারভোগীর নামে ১০ বছর মেয়াদে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০১৯ সালের ১ জুলাই।
সেই থেকে উপকারভোগীরা সামাজিক বনায়নের বাগান ভোগদখলে রয়েছেন।
বনবিভাগের সামাজিক
বনায়নের ওই বাগানে ইতিমধ্যে অন্তত শখানেক ব্যানার সম্বলিত ঝুপড়ি ঘর গড়ে উঠেছে।
সরেজমিন খুরুশকূল ইউনিয়নের
তেতৈয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের বাগানের গাছ কেটে নির্মাণ
করা হয়েছে পলিথিন ও বাঁশের ঘেরাবেড়া দিয়ে ছোটো ছোটো বেশ কিছু ঝুপড়ি ঘর।
‘মুজিববর্ষের অঙ্গিকার,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার; ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ণ’ লেখা ব্যানার
প্রতিটি ঘরে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ব্যানারে বঙ্গবন্ধু
ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও জেলা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের ছবিও শোভা পাচ্ছে।
এছাড়া, ব্যানারে ‘সৌজন্যে
মো. কামাল উদ্দিন কামাল’ নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে।
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী
খুরুশকূল ইউনিয়নের তেতৈয়া দক্ষিণ পাড়ার আবুল হোছাইনের ছেলে রফিক আহমদ অভিযোগ বলেন,
খুরুশকূল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ কামালের নেতৃত্বে একটি ‘দখলবাজ
চক্র’ সামাজিক বনায়নের গাছপালা কেটে ফেলে জবরদখলে নেমেছে। এখন জায়গাগুলো মুজিববর্ষ
উপলক্ষে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে
টাকা আদায় শুরু করেছে।
“কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের
খুরুশকূল মৌজায় গড়ে ওঠা ১০ হেক্টর সামাজিক বনায়নের বাগান ১০ বছর মেয়াদে ২৫ জন উপকারভোগীর
নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ কামালের নেতৃত্বে একটি চক্র প্রতিটি
পরিবারের কাছ থেকে ২০/২৫ হাজার টাকা আদায় করে বিভিন্ন জনকে জোরপূর্বক দখল দিচ্ছে।”
ভুক্তভোগী এই উপকারভোগী
বলেন, “সামাজিক বনায়নের জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণের বিষয়ে উপকারভোগীরা বাধা দিলে ইউপি
সদস্য জানিয়েছেন, সরকারের সিদ্ধান্তে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের
মাঝে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তুলে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বনবিভাগের সাথে উপকারভোগীদের
মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানানোর পর সংঘবদ্ধ চক্রটি জবরদখল অব্যাহত
রেখেছে।”
রফিক আহমদ বলেন, চুক্তির
ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া সামাজিক বনায়নের বাগান ধ্বংস করে ঘর নির্মাণ করে দখলের বিষয়টি
ইতিমধ্যে বনবিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া এ ব্যাপারে গত ৮ এপ্রিল হাই কোর্টে উপকারভোগীরা
রিট আবেদন করেছেন।
“এর পরিপ্রেক্ষিতে
গত ১২ এপ্রিল বনবিভাগের ওই জায়গা দখলমুক্ত রাখা ও অন্য যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ
বন্ধ রাখতে হাই কোর্ট আদেশ দিয়েছে “ বলেন রফিক।
এদিকে, সামাজিক বনায়নের
জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন খুরুশকূল ইউপির
১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শেখ কামাল।
শেখ কামাল বলেন, “কক্সবাজার
বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে উচ্ছেদ হওয়া ৯৭টি পরিবারকে আশ্রয় দিতে প্রশাসন ব্যবস্থা
নিয়েছে। কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজে এসে পরিমাপ করে এসব পরিবারকে
আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন।”
শুধু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি
হিসেবে তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান।
তবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে
ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের পুনর্বাসন করে টাকা আদায়ের অভিযোগটি সত্য নয় এবং এ ধরনের
ঘটনায় জড়িত নন বলে জানান এই ইউপি সদস্য।
এদিকে, সামাজিক বনায়নের
বাগানের গাছপালা কেটে নির্মিত ঝুপড়ি ঘরে টাঙ্গানো ব্যানারে নাম উল্লেখ থাকার ব্যাপারে
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামাল উদ্দিন কামাল বলেন, এতে তার কোনো হাত নেই। ঝুপড়ি
ঘর নির্মাণকারী স্থানীয় কিছু ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ব্যানারে
তার নাম ব্যাবহার করেছে।
এই ব্যাপারে কক্সবাজার
উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. তহিদুল ইসলাম বলেন, জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ
করা জায়গাটি খাস খতিয়ানভুক্ত নয়। জায়গাটি বনবিভাগের ভোগদখলেই আছে। সেখানে দীর্ঘদিন
ধরে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বাগান সৃজিত রয়েছে।
“সরকারের নীতিমালা
অনুযায়ী গত ২০১৯ সালের ১ জুলাই খুরুশকূল মৌজার ১০ হেক্টর জায়গার সামাজিক বনায়ন দেখভাল
ও ভোগদখলের জন্য স্থানীয় ২৫ জন উপকারভোগীর সঙ্গে বনবিভাগের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি
সম্পাদিত হয়েছে।”
তহিদুল বলেন, খুরুশকূলের
তেতৈয়ায় ২৫ জন উপকারভোগীর ভোগদখলে থাকা বাগান ধ্বংস করে কতিপয় ব্যক্তি জবরদখল করছে
বলে অভিযোগ পেয়েছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা
নেওয়া হবে এবং পাশাপাশি নির্মিত স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এই
ঘটনায় সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে দায়ের করা রিটের
আদেশের কপি হাতে আসার পরই বিভাগীয় কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।
এদিকে, কক্সবাজার বিমানবন্দরের
সম্প্রসারণের কারণে উচ্ছেদ হওয়া ৯৭টি পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য বনবিভাগের সামাজিক
বনায়নের জায়গায় পরিমাপ করে কোনো সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নু-এমং মারমা মং।
নু-এমং বলেন, বিমানবন্দর
সম্প্রসারণ কাজের কারণে উচ্ছেদ হওয়া চার শতাধিক পরিবারকে খুরুশকূল মৌজার হামজার ডেইল
এলাকায় খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
“এতে আরও ৯৭টি পরিবারকে
পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এদের
পুনর্বাসনের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
তবে বনবিভাগের সামাজিক
বনায়ন ধ্বংস করে জবরদখলের অভিযোগ উঠা জায়গাটি খাস খতিয়ানভুক্ত নয় বলে জানান এই সহকারী
কমিশনার।
নু-এমং জানান, বিমানবন্দর
সম্প্রসারণ কাজের কারণে উচ্ছেদ হওয়া ৯৭টি পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য খুরুশকূলের তেতৈয়ায়
সামাজিক বনায়নের জায়গা পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ এবং দখল বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয়
ইউপি সদস্য শেখ কামালের বক্তব্য সঠিক নয়।