ক্যাটাগরি

লকডাউন: দ্বিতীয় দিনে ঢাকায় বেড়েছে রিকশা-অটোর চলাচল, তৎপর পুলিশও

বৃহস্পতিবার রামপুরা, মালিবাগ, বিজয়নগর, কাকরাইল ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। তবে যান ও পথচারী চলাচল নিয়ন্ত্রণে তৎপর রয়েছেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও। কয়েকটি স্থানে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে রিকশা উল্টে রাখা ও সিএনজি আটক করার দৃশ্য দেখা গেছে।

প্রথম দিনে বিভিন্ন সড়কে রাস্তায় বেষ্টনী দিয়ে যান চলাচল বন্ধের যে দৃশ্য দেখা গিয়েছিল দ্বিতীয় দিনে তা নেই। পরিবর্তে তল্লাশি চৌকিতে প্রত্যেকটি যানবাহন থামিয়ে মুভমেন্ট পাস আছে কিনা জানতে চাইছেন পুলিশ সদস্যরা। যারা পাস দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাদেরকে জরিমানা করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

লকডাউনের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার কাকরাইল মোড়ে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে আটক রিকশা উল্টে রাখা হয়

লকডাউনের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার কাকরাইল মোড়ে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে আটক রিকশা উল্টে রাখা হয়

জরুরি সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাড়া অন্যদের ‘মুভমেন্ট পাস’ ছাড়া বাসার বাইরে না আসতে মাইকিংও করা হচ্ছে মোড়ে মোড়ে।

কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আজকে অনেক রিকশা নেমেছে। কি করবে বলুন? আমিও রামপুরার চৌধুরীপাড়া থেকে রিকশায় এসেছি। আসার পথে রিকশা চালককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেন রিকশা বের করেছ, সে বলল পাঁচজনের সংসার চালাতে তাকে প্রতিদিন রিকশা চালাতে হয়। নইলে তারা না খেয়ে থাকবে।”

সকাল সাড়ে ৯টায় কাকরাইল মোড় ও নাইটিঙ্গেল মোড়ে দেখা গেল কয়েকটি রিকশা উল্টে রাখা হয়েছে।

নাইটিঙ্গল মোড়ে আটক রিকশা উল্টে রাখা হয়েছে

নাইটিঙ্গল মোড়ে আটক রিকশা উল্টে রাখা হয়েছে

সেখানে রিকশাচালক কালু মিয়া বলেন, “স্যার একটু কইয়া দেন, পুলিশ ভাইকে আমার রিকশাটা ছাইড়া দিতে। পেটের খিদায় রাস্তায় নামছি। ভুল হইছে আমার, গলিতে থাকা ঠিক ছিল। একটা ক্ষেপ কাকরাইলে মারতে আইসা ধরা খাইছি। কত রিকশা চলছে, কপাল মন্দ আমি ধরা খাইলাম।”

কাকরাইলের মোড়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানালেন, ‘লকডাউনে’ কোনো ধরনের যানবাহন রাস্তায় বের করা নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছে বলেই রিকশাগুলো আটক করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেওয়া হবে।

বিজয় নগর সড়কের তল্লাশি চৌকিতে আটক করা ব্যক্তিগত গাড়ি ও অটোরিকশা

বিজয় নগর সড়কের তল্লাশি চৌকিতে আটক করা ব্যক্তিগত গাড়ি ও অটোরিকশা

বিজয়নগরের কাছে দেখা গেছে, আটটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তার পাশে আটক করে রাখা হয়েছে; আছে কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়িও। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানালেন, চালকদের কারও ‘মুভমেন্ট পাস’ নেই। তাদেরকে জরিমানা করা হবে।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে এদিনও যথারীতি বন্ধ আছে সব বিপণী বিতান।

কর্ণফুলী সুপার মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী হাফিজ বলেন, “২১ এপ্রিল পর্যন্ত এই মার্কেট বন্ধ থাকবে। দোকানের মালিক-স্টাফরাও প্রবেশ করতে পারবেন না। খুব কড়াকড়ি নির্দেশনা আছে দোকান মালিক কর্তৃপক্ষের।”

বিজয় নগর সড়কের তল্লাশি চৌকিতে আটক করা ব্যক্তিগত গাড়ি ও অটোরিকশা

বিজয় নগর সড়কের তল্লাশি চৌকিতে আটক করা ব্যক্তিগত গাড়ি ও অটোরিকশা

পুরানা পল্টন লেনের বিভিন্ন অলিগলির প্রবেশ পথের গেইটগুলোও বন্ধ করে রাখা হয়েছে যাতে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে না পারে।

পুরানা পল্টনে লেনের বাসিন্দা আবদুস সালাম তালুকদার বলেন, “লকডাউনে কড়াকড়ি না করলে কোনোভাবে আপনি যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। যেভাবে করোনাভাইরাসে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তা মহাবিপদের পূর্বাভাস।

বিজয় নগরে আটক অটোরিকশাকে জরিমানা করে পুলিশ

বিজয় নগরে আটক অটোরিকশাকে জরিমানা করে পুলিশ

“আমাদের এরিয়াতে সকল অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদের বলা হয়েছে, যেন তারা ঘরের বাইরে না আসে। বাজার-সদাইয়ের জন্য আমরা এরিয়াতে ঠেলাগাড়িতে তরিতকারী বিক্রির অনুমতি দিয়েছি। অনেকেই এর সুবিধা পাচ্ছেন। কারণ বাজারে সংক্রমণ হার বেশি, যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ।”

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে বুধবার সকাল থেকে কঠোর বিধিনিষেধ চালু করে সরকার। এই বিধি নিষেধকে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ বলা হচ্ছে। টানা আটদিনের এই নিষেধাজ্ঞা চলবে ২১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত।

যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বন্ধ রাখা হয়েছে পুরানা পল্টন লেইনের গেইট

যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বন্ধ রাখা হয়েছে পুরানা পল্টন লেইনের গেইট

তবে লকডাউনের মধ্যে পোশাক রপ্তানি প্রতিষ্ঠানসহ শিল্প-কলকারখানা খোলা রাখা হয়েছে। বাংলা নববর্ষের ছুটির পর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে তিন ঘণ্টার জন্য ব্যাংক লেনদেন ও পুঁজিবাজারের কার্য্ক্রমও চালু হয়েছে।