লকডাউনের মধ্যে পুঁজিবাজার বন্ধ থাকতে পারে- এই ভীতি কেটে যাওয়ায় সূচক
বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা ।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১ শতাংশ
বা ৫১ পয়েন্টের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩১০ পয়েন্টে।
আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে প্রায় ১
দশমিক ২১ শতাংশ বা ১৮৪ পয়েন্টের বেশি। এতে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৫৩৭৯ পয়েন্টে।
ডিএসই পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
বলেন, “একটা ভীতি কাজ করছিল যে, বাজার বন্ধ হয়ে যাবে, ওই ভয়টা কেটে গেছে। এ কারণেই
সূচক বেড়েছে।”
ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ
রশিদ লালী বলেন, “বাংলাদেশে পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাবে, এরকম একটি ভীতি বিনিয়োগকারীদের
মধ্যে কাজ করছিল। এখন সেটা নেই কেটে গেছে।
“ভয়ে অনেকে পুঁজিবাজার থেকে টাকা বের করে ফেলছিলেন, সেটাও বন্ধ। ফলে সূচক
এবং লেনদেন বাড়ছে।”
বৃহস্পতিবার ঢাকার বাজারে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৫৮ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল
ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২১৭টির, কমেছে ৯২টির আর দর বদলায়নি ৪৯টির।
চট্টগ্রামের বাজারে (সিএসই) লেনদেন হওয়া ২৯৯ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল
ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৪টির, কমেছে ৬৪টির আর দর বদলায়নি ২১টির।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার লকডাউন দিলে বাজার বন্ধ থাকতে
পারে এমন আশঙ্কায় গত কিছুদিন ধরেই বাজারে অস্থিরতা চলছিল।
তবে সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া হলেও ব্যাংক খোলা থাকায় পুঁজিবাজার খোলা রাখার
সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতেই চাঙ্গাভাব দেখা দেয় ঢাকার বাজারে। আধা ঘণ্টা
পর সূচক কিছুটা কমে গেলেও এরপর টানা বাড়তে থাকে এবং চাঙ্গাভাবেই লেনদেন শেষ হয়।
এদিন ঢাকার বাজারে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে
৫৫৬ কোটি টাকা।
গত বছর দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়লে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে সাধারণ
ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সেই ছুটিতে টানা ৬৬দিন বন্ধ ছিল দেশের দুই পুঁজিবাজার। এর ফলে
অনেকের পুঁজি আটকে যায় ওই সময়।
এবারও লকডডাউনের কথা উঠলে বিনিয়োগগারীদের মধ্যে বাজার বন্ধের ভীতি জেঁকে
বসেছিল বলে মনে করেন শাকিল রিজভী। তবে বাজার বন্ধ না হওয়ায় ওই ভীতি কেটে গেছে বলে জানান
তিনি।
“করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে এলে বাজার আরও ভালো হবে,” বলেন তিনি।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার অন্যান্য সব খাতকে টপকে দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে
উঠে আসে মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
লেনদেন হওয়া ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে ৩৬টিরই দর বেড়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডের দাপটে
আগের দিনের দরবৃদ্ধির গরিমা হারিয়েছে বীমা খাতের কোম্পানিগুলো। এ খাতের সিংহভাগ শেয়ারে
দর এদিন কমেছে।
তবে লেনদেনে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বীমা খাত। বাজারের মোট লেনদেনের প্রায়
৩২ শতাংশই হয়েছে বীমা খাতে।
ঢাকার বাজারে এদিন দর বৃদ্ধির শীর্ষস্থানে রয়েছে- এসইএমএল আবিবিএল শরীয়াহ
ফান্ড, সিএপিএমবিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড,
লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ও সিএপিএমআইবিবিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড।
দর হারানোর শীর্ষে রয়েছে- ডেল্টা ব্রাক হাউজিং, সেন্ট্রাল ইন্সুরেন্স,
সিটি ব্যাংক, সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স ও ইসলামী ইন্সুরেন্স।
লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো- বেক্সিমকো, বিডি ফাইন্যান্স, রবি,
লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ও এশিয়া প্যাসিফিক ইন্সুরেন্স।
এদিন বাজার খোলা থাকলেও বিনিয়োগকারীরা টেলিফোন ও অ্যাপসের মাধ্যমে লেনদেন
করেছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।
ব্রোকারেজ হাউজ ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
মোস্তাক আহমেদ সাদিক বলেন, “বিনিয়োগকারীরা হাউজে আসেননি। বাসায় বসে ফোনে লেনদেন করেছেন।”
ভয় কেটে যাওয়াতে বাজারে লেনদেন বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।