হেফাজতের প্রয়াত আমির আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় সম্প্রতি অভিযোগপত্রভুক্ত
বর্তমান আমির শুক্রবার চট্টগ্রামে জুমার ‘খুতবায়’ এ অভিযোগ করেন বলে হেফাজতের এক বিবৃতিতে
জানানো হয়।
জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, “এই রোজা-রমজানের দিনে নিরপরাধ আলেম-ওলামাদের উপর
অন্যায়ভাবে জুলুম আল্লাহ বরদাশত করবেন না। সারাদিন রোজা রেখে ইফতার করবে তার সুযোগ
দিচ্ছেন না।
“তারাবির নামাজ থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, সারারাত বাহিরে বাহিরে লুকিয়ে থেকে
সেহরি খেতে আসে, ওখান থেকেও নিয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। রাতে ঘরে ঘরে তল্লাশির নামে মহিলাদের
কষ্ট দিচ্ছে। নিরাপরাদ সাধারণ জনগণকে ও হয়রানি করা হচ্ছে।”
বাবুনগরীর বিবৃতি, নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি
শফীর মৃত্যু: তদন্তে বাবুনগরীসহ ৪৩ জনের দায় পেল পিবিআই
শফীর মৃত্যু নিয়ে পিবিআই’র প্রতিবেদন ‘ডাহা মিথ্যা’: বাবুনগরী
‘সজ্জন’ আহমদ শফীকে যারা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন, তাদের বিচার চাই: তথ্যমন্ত্রী
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ
সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় আক্রমণ করে
ভাঙচুর চালায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা সদর ভূমি অফিসে ভাঙচুর চালায়
ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়।
চট্টগ্রাম ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজত।
বাহ্মণবাড়িয়ায় অর্ধশতাধিক স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়।
এর মধ্যে হেফাজতের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে তাণ্ডবের এই ঘটনায় এবং
আগের করা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বাবুনগরী বলেন, “সরকার, প্রশাসন, জনগণ সবাইকে নসিহত করছি। আল্লাহকে ভয়
করুন। তার আজাবকে ভয় করুন। এই জুলুমের শেষ একদিন হবে, পৃথিবীতে কোন জালিম চিরস্থায়ী
হয়নি।”
৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে
স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে হেফাজত সমর্থক ও মাদ্রাসার ছাত্ররা সেখানে হামলা ও ভাঙচুর
চালিয়ে তাকে নিয়ে যায়।
ঘটনার পর তা গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার পায়। এ নিয়ে আলোচনার
মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে মামুনুলের একটি অডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
অডিওর কথোপকথনের বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবারের ফেইসবুক লাইভে এসে মামুনুল বলেন,
স্ত্রীকে খুশি করতে ‘প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে সত্যকে গোপন করার অবকাশ রয়েছ।’
১১ এপ্রিল হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের জরুরি সভা শেষে মামুনুল হকের বিষয়ে
জানতে চাইলে বাবুনগরী বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
সেই সভা শেষে গ্রেপ্তার হন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল
হক ইসলামাবাদী। এরপর গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হেফাজতের কেন্দ্রীয়
কয়েকজন নেতা এবং সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন।
শুক্রবার হাটহাজারী মাদ্রাসার মসজিদে বাবুনগরী বলেন, “চলমান সংকট নিরসনে
আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেখানে যা করা দরকার ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শক্রমে
তাই করা হচ্ছে। আপনারা ধৈর্য হারা হবেন না। সবর করুন।”
পটিয়া থানায় হামলার ঘটনায় পাঁচজন গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তার হেফাজত নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী রিমান্ডে
এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার: মামুনুলকে নিয়ে বাবুনগরী
চট্টগ্রামে ‘মামুনুল সমর্থকদের হামলায়’ আহত আ. লীগ কর্মীর মৃত্যু
১২ এপ্রিল হেফাজতের প্রয়াত আমীর শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় বাবুনগরীসহ
৪৩ জনকে দায়ী করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। পরদিন বিবৃতিতে দিয়ে ওই প্রতিবেদনকে
‘ডাহা মিথ্যা’ বলে আখ্যায়িত করেন বাবুনগরী।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আহমদ শফী মারা গেলে তার ছেলে অভিযোগ করেন, তাকে
মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। পরে শফীর শ্যালক মামলা করেন।
সেই মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন
(পিবিআই) বলছে, এটি একটি ‘দণ্ডার্হ নরহত্যাজনিত অপরাধ’। অর্থাৎ আসামিরা বেপরোয়া আচরণের
মাধ্যমে আহমদ শফীর মৃত্যু ত্বরান্বিত করেছেন।
এরপর ১৫ এপ্রিল ঢাকায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের
সাথে মতবিনিময় কালে আহমদ শফীকে `যারা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল তাদের’ বিচার দাবি
করেন।