এমন অবস্থায় প্রশাসন থেকে কোনো সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ তাদের। আর জেলা প্রশাসন বলছে, সাহায্যের জন্য নিম্ন আয়ের মানুষদের একটা তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
শহরের রেলরোড এলাকার চায়ের দোকানি স্বপন দাস বলেন, “লকডাউনের কারণে দোকান বন্ধ রেখেছি। ছয়জনের সংসার; চা বিক্রি করে আমার সংসার চলে। আয় বন্ধ থাকলে সংসার চলবে কি করে।
“গত লকডাউনের সময়ও দোকান বন্ধ ছিল। তখন জমানো টাকা ভেঙে সংসার চালিয়েছি। এখন ঘরে টাকা নেই। দিনের পর দিন দোকান বন্ধ থাকলে তো না খেয়ে মরতে হবে। সরকারের সাহায্য ছাড়া বেঁচে থাকা দুরুহ হবে। “
এদিকে লকডাউনে কাজ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন জেলার ১৬টি অভ্যন্তরীণ রুটে চালাচলকারী বাসের কয়েক হাজার শ্রমিক।
শনিবার বাগেরহাট শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, সারিবদ্ধভাবে কয়েকশ বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে; বাসস্ট্যান্ড ফাঁকা। কয়েকজন শ্রমিক বিচ্ছিন্নভাবে ঘোরাফেরা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাস শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চালিয়ে তারা যা আয় করেন তা দিয়ে তাদের কোন রকমে সংসার চলে। এখন লকডাউনে খুব সমস্যার মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। কাজ না থাকায় পরিবার পরিজনদের নিয়ে না খেয়ে কষ্টের দিন কাটাচ্ছেন তারা।কিন্তু বাস মালিক বা শ্রমিক সংগঠনের কেউ তাদের খোঁজ নিচ্ছে না।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট আন্তঃজেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বাগেরহাটের অভ্যন্তরীণ ১৬টি রুটে প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে থাকে; এরা সবাই দিন আনে দিন খায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দেশে এখন দুর্যোগ চলছে। তাই সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করায় আমরা তা মেনে চলছি।
তার দাবি, “এমন অবস্থায় বেকার হয়ে পড়া বাস শ্রমিকদের নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছে শ্রমিক ইউনিয়ন। সবাইকে তো আমরা সাহায্য করতে পারছি না। তবে সাধ্য অনুযায়ী তাদের খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি।”
বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আহাদ হায়দার বলেন, “গত বছরের লকডাউনের শুরুতেই সরকারের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সেচ্ছাসেবী সংগঠন দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু এবারের লকডাউনে ওইসব প্রতিষ্ঠান আর এগিয়ে আসছে না।”
জেলার কর্মহীন মানুষদের জন্য সরকারকেই ভাবতে হবে বলে মনে করেন এই সমাজসেবক।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক বলেন, লকডাউনে সব শ্রেণি পেশার মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় রয়েছেন দিনমজুর, ছোট ছোট চায়ের দোকানি, নর সুন্দররা। মানুষের জীবন বাঁচাতে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। আর সরকারের বিধিনিষেধ তো মেনে চলতেই হবে।
“জেলার নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আমাদের একটা চিন্তা আছে। তাই প্রশাসন তাদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। রোববার থেকে আমরা কাজ শুরু করব। তবে কত মানুষকে আমরা সাহায্য দিতে পারব তা এখনি বলতে পারছি না।